মাথা গোজার ঠাঁই পাচ্ছে আরও ৬৪৯ পরিবার

18

শ্রবণ প্রতিবন্ধী খালেদা বেগম। স্বামী মাছধরার ট্রলারের মাঝি। ভিটেবাড়ি না থাকায় তিন ছেলেকে নিয়ে দুই দশক ধরে ভাড়া ঘরেই দিন পার করছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে প্রথম পর্যায়ে দেয়া ঘরে ঠাঁই পেয়ে হাসি ফুটেছে খালেদার সংসারে। বাঁশখালী পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডে বরাদ্দ পাওয়া সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে হাসিখুশিতেই কাটছে খালেদার দিন।
চাম্বল এলাকা থেকে ঘর পেয়ে পৌরসভায় স্থায়ী নিবাস পাওয়া রহিমা বেগম বলেন, ‘এক মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে দুর্বিষহ জীবন পার করছিলাম। জমিও নেই এবং ঘরও নেই। পরের ঘরে কাজ করা স্বামীর অল্প উপার্জনে সংসার চলতো। আয়ের টাকা ঘর ভাড়াতেই চলে যেতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ঘর দিয়েছেন বলে শান্তিতে ঘুমাতে পারছি। এখন ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করানোর চিন্তা করছি।’
খালেদা-রহিমাদের মতো ভিটেহারা আছিয়া খাতুন, শামসুল ইসলাম, কৃষক আবুল কাশেমদের মুখেও এখন নতুন ঘরের হাসি ফুটেছে। আগামী ২০ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৩ উপজেলায় আরো ৬৪৯ পরিবার পাবে স্থায়ী নিবাস। মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে ভূমিহীন ও গৃহহীন এসব পরিবারের হাতে স্বস্ব উপজেলায় স্থায়ী ঠিকানার চাবি তুলে দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিড়িও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব ঘরের উদ্বোধন করবেন। প্রতিটি উপজেলা থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা ভিড়িও কনফারেন্সে যুক্ত হবেন। এর আগে প্রথম পর্যায়ে চট্টগ্রামে এক হাজার ৪৪৪টি পরিবারকে ঘর দেয়া হয়েছিল।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল আহসান পূর্বদেশকে বলেন, ‘দ্বিতীয় পর্যায়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন ৬৪৯ পরিবারকে ঘরের চাবি তুলে দেয়া হবে। ‘ক’ শ্রেণির ভূমিহীনরাই এসব ঘর পাচ্ছেন। ঘরগুলোর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর ঘরের চাবি তুলে দেয়া হবে।’
জানা যায়, দুই শতক জমির উপর প্রতিটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে সরকারের পক্ষ থেকে এক লক্ষ ৯৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দুই কক্ষের সেমিপাকা ঘরগুলোর সাথে টয়লেট ও কিচেনের ব্যবস্থা আছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থাও করে দেয়া হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরো ঘর নির্মাণ করা হবে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানায়, দ্বিতীয় পর্যায়ে হস্তান্তরের জন্য রাঙ্গুনিয়ায় ১০০টি, পটিয়ায় ২০টি, চন্দনাইশে ২৭টি, সাতকানিয়ায় ১০টি, লোহাগাড়ায় ১৫০টি, বাঁশখালীতে ৪০টি, কর্ণফুলীতে পাঁচটি, বোয়ালখালীতে ২০টি, রাউজানে ২০০টি, হাটহাজারীতে ১০টি, আনোয়ারায় ৪০টি, মিরসরাইয়ে ১০টি ও সীতাকুন্ডে ১০টি ঘর প্রস্তুত করা হয়েছে।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, ‘পুকুরিয়ার নাটমুড়ায় ৪০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। যারা ভূমিহীন ও গৃহহীন তারাই এসব ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাচ্ছে। দুই শতক জমি গৃহ মালিকের নামে নামজারি করেই ঘরগুলো হস্তান্তর করা হবে। এখানেই আগামীর স্বপ্ন বুনবেন দুস্থ মানুষগুলো। প্রতিটি ঘরেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। জনস্বাস্থ্যের সহযোগিতা নিয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে বাঁশখালীতে ২৫টি পরিবারকে ঘর দেয়া হয়েছে। এবারসহ মোট ৬৫টি পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাবে। পর্যায়ক্রমে এ উপজেলায় ৬০৪টি ঘর বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা আছে।’