মাত্র ৭৯৮ ভোটে জয় পেলেন টিনু

44

রাহুল দাশ নয়ন

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন চকবাজার ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন মিষ্টি কুমড়া প্রতীকের প্রার্থী মো. নূর মোস্তফা টিনু। কারাবন্দি থাকা এই প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ৭৮৯। নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী ব্যাডমিন্টন র‌্যাকেট প্রতীকের প্রার্থী মো. আবদুর রউফ পেয়েছেন ৭৭৩ ভোট । গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। বিকালের দিকে একটি কেন্দ্রে উত্তেজনা দেখা দিলেও দুপুরের আগপর্যন্ত ভোটের পরিস্থিতি শান্ত ছিল। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। দুপুর পর্যন্ত ভোটগ্রহণও হয়েছে ৫-১০ শতাংশ। ২১ জন প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর মধ্যে প্রতিটি কেন্দ্রেই ১০-১৫ জন করে প্রার্থীর এজেন্ট ছিলেন। শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ছিল শান্ত।
রিটানিং কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন রাতেই বেসরকারিভাবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন। এসময় তিনি বলেন, ২১ জন প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্ব›িদ্বতা শেষে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন মিষ্টি কুমড়া প্রতীকের প্রার্থী নূর মোস্তফা টিনু। সর্বমোট ছয় হাজার ৯৩২ ভোট পড়েছে। ভোটের হার ২১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সরেজমিনে ১২টি কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ভোটকেন্দ্রগুলোতে জায়গা সংকুলান ছিল কম। প্রার্থীর এজেন্ট ছাড়াও কোনো কোনো কেন্দ্রে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার নিজেরও বসার জায়গা ছিল না। এক কক্ষেই দুই থেকে তিনটি বুথ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরব উপস্থিতি ছিল। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শাহ আলম বীর উত্তম কেন্দ্রে প্রার্থী, ভোটার, এজেন্ট মিলেমিশে একাকার। নিচ তলার বারান্দায় দুটি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। মাঝখানে দড়ি দিয়ে দুটি কেন্দ্রকে পৃথক করা হয়েছে। দুটি কেন্দ্রেই যত্রতত্রভাবে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। পোলিং এজেন্টের কাগজ ছোঁড়া নিয়ে সেখানে সকাল ১১টার দিকে হট্টগোল হয়। কাপাসগোলায় সিটি কর্পোরেশন মহিলা কলেজের একটি ভবনে তিনটি কেন্দ্র করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ কেন্দ্রে পুরুষ ও মহিলা ভোটার আলাদা ছিল। কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ ছিল চোখে পড়ার মতো। তুলনামূলকভাবে ভোটার ছিল কম। তবে প্রতিটি বুথই প্রার্থীর এজেন্টে ঠাসা ছিল। গুলজার বেগম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সেলিম রহমান ও আব্দুর রউফের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশের লাঠিপেটায় দুই পক্ষই দুইদিকে চলে যায়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে রিপন নামে একজনকে আটক করা হয়। আহত হন এক নারী।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শাহ আলম বীর উত্তম কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা শওকত আলী পূর্বদেশকে বলেন, সুন্দরভাবে ভোট হচ্ছে। জায়গা কম থাকায় সকল এজেন্টকে বসতে দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে। এ কেন্দ্রে প্রার্থীর এজেন্টের কাগজ ছেঁড়া নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
চমেক হাসপাতাল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এ.এইচ.এম রেজাউল করিম পূর্বদেশকে বলেন, কেন্দ্রে কোনো ঝামেলা হয়নি। ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় ঝামেলা এড়ানো গেছে। সকাল সাড়ে ১০টার পর কিছুটা ভোটার বেড়েছে। ২১ প্রার্থীর ১৩ জনই এজেন্ট দিয়েছে।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কাপাসগোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. ইফতেখারুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ভোটের পরিস্থিতি ভালো। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অন্যান্য কেন্দ্রের চেয়ে আমার এখানে ভোটগ্রহণ বেশি হয়েছে। ১৬ জন প্রার্থীর এজেন্ট আছে কেন্দ্র।
ঠেলাগাড়ি প্রতীকের প্রার্থী মো. সেলিম রহমানকে প্রায় কেন্দ্রেই দেখা গেছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শাহ আলম বীর উত্তম কেন্দ্রে কার এজেন্ট কে বুঝা মুশকিল। ভোটার কারা তাও চিনছি না। এতো গিঞ্জি পরিবেশে কিভাবে ভোটগ্রহণ চলছে বুঝতে পারছি না।’
চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা হলে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্ট আব্দুল হাসনাত মো. ওমর পূর্বদেশকে বলেন ‘ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। আগে যেসব ভোট হয়েছে তার চেয়েও সুন্দর হচ্ছে। অনেক কেন্দ্রে বসার জায়গা না থাকায় এজেন্ট দিতে পারি নাই।’
নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) কামাল উদ্দীন পূর্বদেশকে বলেন, ‘অত্যন্ত সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোটার তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও ভোটের পরিবেশ ছিল শান্ত। এমন ভোটে প্রার্থী ও ভোটার সবাই খুশি।’
নির্বাচনে অংশ নেয়া অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এ.কে.এম সালাউদ্দিন কাউসার লাভু (হেডফোন) ৪৪৪ ভোট, মোহাম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী (সূর্যমুখী ফুল) ২০৮ ভোট, মোহাম্মদ সেলিম রহমান (ঠেলাগাড়ি) ৫২৮ ভোট, মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন (রেডিও) ৬১৭ ভোট, মোহাম্মদ নোমান চৌধুরী (ট্রাক্টর) ১১৪ ভোট, মো. শাহেদুল আজম শাকিল (ক্যাপ) ৫৯০ ভোট, মেহেরুন্নিছা খানম (ড্রেসিং টেবিল) ৫২৭ ভোট, মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন (কাচি) ৪৪৩ ভোট, কাজী মুহাম্মদ ইমরান (লাটিম) ১৭৭ ভোট, মো. আলী আকবর হোসেন চৌধুরী (কাঁটা চামচ) ৭৩৫ ভোট, মোহাম্মদ নুরুল হুদা (ঝুড়ি) ১৫০ ভোট, মো. সামশেদ নেওয়াজ (ঘুড়ি) ২০২ ভোট, মমতাজ খান (পান পাতা) ৬ ভোট, শওকত ওসমান (এয়ার কন্ডিশনার) ৬২ ভোট, মোহাম্মদ রুবেল ছিদ্দিকী (করাত) ৭৩ ভোট, মো. আজিজুর রহমান (হেলমেট) ৪৯ ভোট, মোহাম্মদ জাবেদ (স্ট্রবেরি) ৩৩ ভোট, মো. আলাউদ্দিন (টিফিন ক্যারিয়ার) ১৫৯ ভোট, কায়সার আহমদ (প্রদীপ) ২৫৩ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, ১৬ নং চকবাজার ওয়ার্ডে ১৫টি ভোটকেন্দ্রের ৮৬টি বুথে ভোটার ছিল ৩২ হাজার ৪১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১৬ হাজার ২১৬ জন ও মহিলা ভোটার ১৫ হাজার ৮২৫ জন। ভোটগ্রহণে ১৫ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ৮৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও ১৭২ জন পোলিং কর্মকর্তা নিয়োজিত ছিলেন। নানা আশঙ্কার কথা চিন্তা করে ভোটকেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল নির্বাচন কমিশন। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঠে ছিলেন পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়াও প্রতিটি সাধারণ ভোটকেন্দ্রে চারজন পুলিশ, দুইজন অস্ত্রধারী আনসার, লাঠি হাতে ছয়জন পুরুষ ও চারজন মহিলা আনসার মোতায়েন করা হয়। ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে ছিলেন ১৮জন সদস্য।