মাতামুহুরীতে বিষ দিয়ে অবাদে মাছ শিকার!

111

প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় লামায় মাতামুহুরী নদীর উজানে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার বন্ধ হচ্ছে না। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুম এলেই নদীতে বিষ ঢেলে মাছ শিকার শুরু করে দুর্বৃত্তরা। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার ও মঙ্গলবার নদীর কলিঙ্গাকুম এলাকায় বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটেছে। এতে নদীর প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির লক্ষ-লক্ষ মাছ আধমরা অবস্থায় ভেসে উঠে। পাশাপাশি বিষের কারণে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি মাছের খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং মাছের বংশ বিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মারা যাচ্ছে নির্বিচারে ছোট-বড় মাছগুলো। এতে হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য। বিষ প্রয়োগে মাছ নিধনে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি সচেতন মহলের। সংশ্লিষ্টদের মতে, জনপ্রতিনিধি ও নদীর দু-কূলে বসবাসরত জনসাধারণের সহায়তা পাওয়া গেলে বিষ প্রয়োগকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব।
জানা যায়, মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় উৎপত্তি হওয়া মাতামুহুরী নদী আলীকদম, লামা ও চকরিয়া উপজেলার ভূ-খন্ড দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে শীত মৌসুমে নদীর পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে লামা, আলীকদম ও চকরিয়া কেন্দ্রীক কিছু অতি লোভী মৎস্য শিকারি নদীর বিভিন্ন অংশে বিষ প্রয়োগ করে মিঠা পানির চিংড়িসহ হরেক প্রজাতির মাছ আহরণ করে থাকেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেল একটি পাহাড়ি লতার নাম। এ লতার বিষাক্ত পদার্থ (বিষ) যা পানিতে প্রয়োগ করলে মাছ পানির গভীর থেকে উপরে উঠে। ফলে যে কেউ সহজে মাছ ধরতে পারেন। দুষ্কৃতকারীরা ভোর রাতে এই বিষাক্ত লতার রস নদীর পানিতে ছিটিয়ে দেয়। পরে নদীর ভাটির অংশে বিষক্রিয়া শুরু হয়ে মাছ মরে ভেসে উঠার সাথে সাথে তারা এসব মাছ দ্রুত আহরণ করে গ্রামগঞ্জ ও হাট বাজারে বিক্রি করে।
গত সোমবার বিষ প্রয়োগের খবর পেয়ে নদীর রাজবাড়ী পয়েন্টে সরেজমিন দেখা যায়, নদীর প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মরা, আধা মরা মাছ পানিতে ভেসে ওঠে। ভেসে ওঠা মাছের বেশির ভাগ চিংড়ি পোনা। এ সময় শত শত উৎসুক নারী পুরুষ ও শিশুরা হাতজাল, ঠেলাজাল, চালুনী, মশারী, ফিন্যা নিয়ে নদীতে মাছ ধরছেন।
এ সময় নদীপাড়ের বাসিন্দারা জানান, সকালে লোকজন নদীতে গোসল করতে গেলে তারা মরা-আধা মরা চিংড়ি পোনা আর ছোট ছোট পুঁটি মাছের পোনা ভাসতে দেখেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে নদীর ঘাটে ঘাটে নারী পুরুষেরা মাছ ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। প্রায় সবাই এক কেজি-আধা কেজি করে মাছ পান।
তারা জানান, দুর্বৃত্তদের জালে বড় মাছগুলো আটকা পড়লেও ছোট মাছগুলো নদীতে ভেসে ওঠে। নদীতে আধমরা মাছ ধরতে আসা ইসহাক, জসিম, জহুর আলমসহ অনেকে বলেন, প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে অন্তত ৮-১০ বার তারা এভাবে মাছ ধরার সুযোগ পেয়ে থাকেন। প্রতিদিনই নদীর কোন না কোন অংশে বিষ প্রয়োগে মাছ নিধনের ঘটনা ঘটছে। গত বছরও নদীর তেলিরকুম, কলিঙ্গার কুম, রেপারপাড়ি কুমে বিষ প্রয়োগে মাছ নিধন করে দুর্বৃত্তরা।
পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন জানান, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে মাতামুহুরী নদীতে বিষ ঢেলে মাছ শিকার করা হয়। কিন্তু যারা এসব কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রতিবছর বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটাচ্ছে।
লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শফিউর রহমান মজুমদার বলেন, বিষ প্রয়োগের মরা ও আক্রান্ত মাছ খেলে মানুষ বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।
এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অনিল কুমার সাহা বলেন, লামা ও আলীকদম উপজেলায় মৎস্য কর্মকর্তা না থাকায় দুর্বৃত্তরা সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। তিনি বলেন, নদীতে বিষ প্রয়োগের কারণে ছোট-বড় নির্বিচারে মাছ মারা যায়। এছাড়া প্রাকৃতিকভাবে তৈরি মাছের খাদ্য ও প্রজনন নষ্ট হয়ে যায়। এক কথায় বিষ দিয়ে মাছ শিকার জীববৈচিত্র্যের জন্য দারুন হুমকিস্বরূপ। তিনি আরো বলেন, উন্মুক্ত জলাশয়ে বিষ ঢেলে মাছ শিকার করা একটি দন্ডণীয় অপরাধ। এই বেআইনি কাজের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে প্রচলিত আইনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।