মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার পেছনে বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে

33

দেশের মানুষের জন্য সরকারের চেয়ে আপনজন আর কেউ নেই বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রইছউল আলম মÐল। তিনি বলেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে দুঃখ-দুর্দশায় ফেলা সরকারের কাজ নয়। সরকার যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, সামগ্রিক দিক বিবেচনা করেই সেই সিদ্ধান্ত নেয়। সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা সরকার এমনি এমনি দেয়নি। এর পেছনে বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আয়োজিত এক কর্মশালায় সচিব এসব কথা বলেন।
রইছউল আলম মÐল বলেন, সুন্দরভাবে বাঁচতে হলে ‘ইকো হেলথ সিস্টেম’ ঠিক রাখতে হবে। সারা বছর মাছ ধরলাম, মাছ কমে গেলে সাগরে পোনা ঢেলে দিলাম- এভাবে হয় না। চলুন, সাগরকে একটু সময় দিই। মাছকে ব্রিডিং টাইম (প্রজনন সময়) দিই। এতে লাভবান হবেন আপনারাই। খবর বাংলানিউজের
তিনি বলেন, বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৬৫ দিন মাছ সাগরে ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। বাকি ৩০০ দিন কিন্তু মাছ ধরা যাবে। এছাড়াও সাগরের সঙ্গে মোহনার আগ পর্যন্ত নদীতে মাছ ধরতে সরকারের কোনো বাধা নেই। আপনারা সেখান থেকে ইচ্ছেমতো মাছ ধরতে পারেন।
সচিব বলেন, ২০১৫ থেকে বছরে ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রাখা হচ্ছে। ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ৪ বছর নানা সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা জেলেদের জন্য কোনো সহায়তা চালু করতে পারিনি। তবে এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জেলেদের জন্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। আমাদের ১৬ লাখ জেলে আছে। এর মধ্যে কার্ড আছে ১৪ লাখ জেলের। প্রতিটি জেলেকে মাসে ৪০ কেজি চাল দেওয়া হচ্ছে। জুনে ১২টি জেলার ৪২টি উপজেলায় প্রায় ৪ লাখ ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল সহায়তা দিয়েছে সরকার, যোগ করেন তিনি।
মৎস্য সচিব বলেন, যারা জাল নিয়ে সরাসরি সাগরে মাছ ধরতে যায়- তাদের জীবনমান উন্নত করতে, তাদের জীবনের নিরাপত্তায় সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। দক্ষতা বাড়াতে জেলেদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে পর্যায়ক্রমে আমরা সবাইকে প্রশিক্ষণ দেবো।
জেলের ছেলে জেলেই হবে- তা চাই না আমরা। আমরা চাই- জেলের ছেলেও বিদ্যালয়ে যাক। পড়াশোনা করুক। সরকারি চাকরিজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার মতো ভালো অবস্থানে আসুক। দেশকে নেতৃত্ব দিক, বলেন এ সরকারি কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, সাগরে একটি কেন্দ্রীয় ভেসেল মনিটরিং সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সাগরে নিজস্ব বিস্তৃত নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা হবে। সেন্ট্রাল অফিস, সেন্ট্রাল সিস্টেম চালু করা হবে। এখান থেকে আমাদের কোন জাহাজ সাগরে কোথায় আছে, কী করছে তা সহজে মনিটরিং করা হবে।
কর্মশালায় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) নুরুল আলম নিজামী, মৎস্য বিভাগের মহাপরিচালক আবু সাঈদ মো. রাশেদুল হক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব তৌফিকুল আরিফ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজের অধ্যাপক সাইদুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।