মাইলফলক মাতারবাড়ি জেটিতে

30

নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণকাজ প্রকল্পের পাশে নির্মিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে শততম জাহাজ ভেড়ার মাইলফলক অর্জন করেছে।
গতকাল বুধবার বিকেলে ১২০ মিটার দৈর্ঘ্যের পানামা পতাকাবাহী ‘এমভি হোসি ফরচুন’ জাহাজটি চীন থেকে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের যন্ত্রপাতি নিয়ে জেটিতে ভিড়েছে।
বর্তমানে মাতারবাড়িতে দুটি স্থায়ী জেটি আছে। এগুলো মূলত কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের জন্যই ব্যবহৃত হচ্ছে। আগামী বছর বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে দুই জেটিতে কয়লা বোঝাই জাহাজ ভিড়তে শুরু করবে। তখন এতে এতে রাজস্ব আয় অনেক বেড়ে যাবে।
মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জেটিতে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রথম বার্থিং করেছিল পানামা পতাকাবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ ‘ভেনাস ট্রায়াম্প’। এরপর নির্মিত হয় দ্বিতীয় জেটি যাতে ২০২১ সালের ১৫ জুলাই জাহাজ বার্থিং শুরু হয়। কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম পর্যায়ের নির্মাণকাজ ২০২৫ সালে সম্পন্ন হবে আশা করা হচ্ছে। তখন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জাহাজ ভিড়বে এ জেটিতে। বর্তমানে সিপিজিসিবিএল নির্মিত জেটিতে ঢোকার জন্য চ্যানেলের প্রশস্থতা ২৫০ মিটার থেকে ৩৫০ মিটারে উন্নীত করা হয়েছে। এই চ্যানেল বা প্রবেশপথ দিয়েই বঙ্গোপসাগর থেকে জাহাজ বন্দর জেটিতে ঢুকবে এবং আগামী বছর মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আনুমানিক ডিডবিøউটি ৮০ হাজার প্যানাম্যাক্স সাইজের কয়লা বহনকারী জাহাজ আসার কথা রয়েছে। এছাড়া এ অফশোর এলাকায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের স্থাপিত এসপিএম প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের দিকে। যার কমিশনিং শুরু হবে আগামী নভেম্বর। এমনটি আশা সংশ্লিষ্টদের।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য মতে, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের বিষয়ে বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ-জি) ইনিশিয়েটিভ ঘোষণার প্রেক্ষিতে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে মাতারবাড়িতে বাণিজ্যিক বন্দরসহ বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) প্রচেষ্টায় কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে ইতোমধ্যে ৯৯টি সমুদ্রগামী জাহাজ হ্যান্ডলিং কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে, যা রাজস্ব আয়ের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। আর সর্বশেষ বুধবার বিকেলে (২৪ আগস্ট) ১২০ মিটার দৈর্ঘ্যের পানামা পতাকাবাহী ‘এমভি হোসি ফরচুন’ জাহাজটি চীন থেকে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের যন্ত্রপাতি জেটিতে ভিড়েছে। এর ফলে জেটিতে শততম জাহাজ ভেড়ার মাইলফলক অর্জন করেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লি. (সিপিজিসিবিএল) এর আন্তরিক প্রচেষ্টায় কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে ইতোমধ্যে ৯৯টি সমুদ্রগামী জাহাজ হ্যান্ডলিং কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যা রাজস্ব আয়ের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। অদ্যাবধি প্রায় এক লাখ ১৭ হাজার হাজার ৯১ টন মালামাল হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে বন্দরের কোষাগারে ইতোমধ্যে রাজস্ব আয় বাবদ আনুমানিক দুই কোটি আট লাখ ছয় হাজার টাকা জমা হয়েছে, যা পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া কমার্শিয়াল কাজে ব্যবহার হওয়া শুরু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিধি আরও অনেকগুণ বেড়ে যাবে।