মাইন বিস্ফোরণে আরো ১ রোহিঙ্গা নিহত

22

নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি

তুমব্রু সীমান্তে আবারো স্থলমাইন বিস্ফোরণে শূন্য রেখায় আশ্রিত এক রোহিঙ্গা কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও এক রোহিঙ্গা। গতকাল রোববার ভোরে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
নিহত রোহিঙ্গা কিশোরের নাম ওমর ফারুক (১৫)। তার বাবার নাম মো. আইয়ুব। তারা ব্লক-৩ তুমব্রু জিরো লাইন কোনারপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। আহত মো. সাহাবুল্লাহ (২৮) একই ক্যাম্পের ব্লক-১০ এর আবুল হোসেনের ছেলে।
এ বিষয়ে রোহিঙ্গা নেতা দীল মোহাম্মদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আবদুল কালাম বলেন, মাইন বিস্ফোরণে কোনাপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দুজন রোহিঙ্গা গুরুতর আহত হয়। পরে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছি। ভোর ৫টার দিকে ৩৪ বিজিবির অধীনস্থ তুমব্রু বিওপির সীমান্ত পিলার ৩৪-৩৫-এর মধ্যবর্তী শূন্য লাইন থেকে আনুমানিক ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার পূর্বে ও মিয়ানমারের ২ বিজিপির কোনাপাড়া পোস্ট থেকে আনুমানিক ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার পূর্বে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণ ঘটে। এগুলো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পুঁতে রাখা মাইন।
উল্লেখ্য, উক্ত ২ রোহিঙ্গা চোরাইপথে মিয়ানমার হতে সিগারেট এবং কফি আনতে গেলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পুঁতে রাখা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরিত হয়ে আহত হয়। পরে ১ জন মারা যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আজিজ বলেন, তিনি কোনারপাড়ার এক রোহিঙ্গার স্থলমাইন বিস্ফোরণে মারা যাওয়ার খবরটি শুনেছেন। তার দুই পা উড়ে গেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সে মারা যায়।
নিহত রোহিঙ্গাকে কোনাপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশের কবরস্থানে গতকাল সকাল ১১ টায় দাফন করা হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেন ১০ নম্বর ওয়ার্ড় মাঝি। এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে চোরাই গরু আনতে গিয়ে সীমান্তের হেড়ম্যান পাড়ার যুবক অন্ন্যাই তংচঙ্গা (২৮) মারা গিয়েছিলেন।
পাঁচ বছর ধরে তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে শূন্য রেখায় আশ্রয় শিবির গড়ে বসবাস করছে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত চার হাজার ২০০ জনের বেশি রোহিঙ্গা। আশ্রয় শিবির ঘেঁষে মিয়ানমারের কাঁটাতারের বেড়া ও রাখাইন রাজ্যের একাধিক পাহাড় রয়েছে। পাহাড়ের ওপর বিজিপির একাধিক তল্লাশি চৌকি রয়েছে।
শূন্য রেখার এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারে ফিরতে না পারে সেজন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমান সীমান্তজুড়ে বিজিপি স্থলমাইন পুঁতে রাখে। এসব মাইনে গত পাঁচ বছরে ছয় জন রোহিঙ্গা মারা গেছে। শূন্য রেখার রোহিঙ্গারা সব সময় আতঙ্কে থাকে।
গত ১৩ আগস্ট থেকে তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি পাহাড়ে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে। সর্বশেষ গত ২৮ আগস্ট এবং ৩ সেপ্টেম্বর দুই দফায় চারটি মর্টারশেল তুমব্রু উত্তরপাড়া ও বাইশফাঁড়ি এলাকায় এসে পড়ে। এ ঘটনায় ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ।