মাইজভান্ডারী তরিকার “আলোকবর্তিকা” ছৈয়দ শফিউল বশর মাইজভান্ডারী স্মরণে মোহাম্মদ নুরুল আবছার

396

এই বিশ^ভ্রম্মান্ডে ইসলামের একত্ববাদ কায়েম করার জন্য যুগে যুগে নবুয়তের মাধ্যমে বিভিন্ন নবী রাসুলকে আল্লাহ পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ প্রেরিত আসমানী কিতাবের মর্মবানী প্রচার করে অশান্ত পৃথিবীর দিশাহারা পথভ্রষ্ট মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়াছে। সবশেষে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) এর কাছে প্রেরিত আল কোরআনের মাধ্যমে নবুয়তের যুগের শেষ হয়। যার পরে পৃথিবীতে আর কোন নবী রাসুল আসবেনা। কিন্তু ইসলাধের ধারা কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে আল্লাহ পাক আওলাদে রাসুল তথা আউলিয়া কেরামের মাধ্যমে বেলায়তের যুগের সূচনা করেন। যা কেয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে। সে হিসাবে এই উপমহাদেশে যে সকল তরিকার মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার মধ্যে মাইজভান্ডারী তরিকা অন্যতম। এই তরিকার প্রতিষ্ঠাতা হযরত গাউছুল আজম আহমদউল্লাহ কেবলা কাবা (ক:) মাইজভান্ডারী গদীনসীন থাকা অবস্থায় আপন ভ্রাতুষ্পুত্র হযরত গাউছুল আজম গোলামুর রহমান বাবা ভান্ডারীকে আপন মহিমায় বেলায়তের সর্বোচ্চ আসনে বসাইয়ে যোগ্য উত্তসুরী হিসাবে গড়ে তুলেন। এর পরে মাইজভান্ডারী তরিকার প্রচার প্রসারে বাবা ভান্ডারীর মাধ্যমে সারা বিশ^ভূবন আলোকিত হয়ে উঠে। বাবা ভান্ডারী দুনিয়া থেকে পর্দা নেওয়ার পর তার চর্তুথ শাহজাদা নুরে রহমান ছৈয়দ শফিউল বশর মাইজভান্ডারী এই তরিকার কান্ডারী হয়ে আর্বিভূত হন।
সেদিন ছিল ১৩২৫ সনের ৭ই ফাল্গুন ১৯১৯ইংরেজীর ২০ শে ফেব্রæয়ারি রোজ রবিবার। বাবা ভান্ডারী কেবলা কাবা (কঃ) কামালিয়ত জীবনের পরিপূর্ণতায় ভরপুর। বাবা ভান্ডারী কেবলা কাবার কামালিয়তের এই পূর্ণিমা তিথিতে তার ঔরষে পণূময়ী মাতা বেগম ছৈয়দা জেবুন্নেছা ছাহেবানীর কোলে জন্ম গ্রহণ করেনগাউছে জামান ছৈয়দ শফিউল বশর (কঃ) মাইজভান্ডারী তরিকার ভবিষৎ কর্ণধার হিসাবে এই ধরাধামে আগমন ঘটে। এই শিশু ধীরে ধীরে যখন ৫(পাঁচ) বছর বয়সে উপনিত হয়, তখন তারই আপন বড় ভাই শাহজাদা ছৈয়দ খায়রুল বশর মাইজভান্ডারী এই শিশুকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে উর্দু, আরবী, ফার্সী শিক্ষাদানের জন্য মাওলানা শরাফত উল্লাহ সাহেবকে এবং বাংলা, ইংরেজী শিক্ষাদানের জন্য জনাব ইসলাম মাষ্টারকে নিয়োগ করেন। লেখাপড়ার প্রতি তার খুবই আগ্রহ ছিল। তিন মাসের মধ্যে কোরআন শরীফ পড়া শুরু করেন। বাংলা, ইংরেজী বিষয়েও দ্রæত উন্নতি হয়। এর পর ক্রামন্বয়ে চট্টগ্রাম শহরের কলেজিয়েট স্কুল, মোহছেনিয়া মাদ্রাসা ও পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য ভারত বর্ষের উচ্চতম বিদ্যাপিঠ আলীগড় বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করেন। আরবী, উর্দু, ফার্সি, বাংলা ও ইংরজী বিষয়ে সমান পারদর্শী হয়ে উঠেন। পরবর্তীতে যুগল গাউছুল আজমের বাতেনী ইশারায় মাইজভান্ডারী তরিকার প্রচার প্রসারে নিজেকে আতœনিয়োগ করেন। এরপর সারা বাংলার জমিনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ইসলামের সাম্যেরবাণী মাইজভান্ডার তরিকার মাধ্যমে পথহারা অগনিত মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দেন। এমনকি ইউরোপ, আমেরিকা, লন্ডন ও মধ্যপ্রাচ্য সফর করে সেখানেও মাইজভান্ডারী তরিকার বাণী পৌছে দিয়েছেন।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও আধ্যাতিœক জ্ঞানের এত উচ্চ স্তরে অবস্থান করেও তিনি নিজেকে লোক সমাজে অতি সাধারণভাবে উপস্থাপন করতেন। আল্লাহর রাসুলের সমস্ত আদর্শ তার মধ্যে বিদ্যমান ছিল। খোদায়ী নুরের জ্যোতি সবসময় তার নুরানী চেহারার মধ্যে ঝলমল করত। যে কেউ ভক্তিভরে একনজর দেখলে তার দেহ মন পুলকিত হয়ে উঠত। যে কোন ফরিয়াদি যে কোন সমস্যা নিয়ে তার সমানে উপস্থিত হলে তিনি একঝলক হাসি মাখা মুখে তার সমস্যার সমাধান দিতেন। যা এই কলমের মাধ্যমে আমি অধমের লেখা সম্ভব নয়। তার অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে মাইজভান্ডারী তরিকা বিশে^র বুকে আরো নবরুপে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। যার ভূবন মোহিনী সৌরভে সারা পৃথিবীতে আল্লাহ রাসুলের সানিধ্য লাভে পথহারা মানুষ ধন্য হয়। মাইজভান্ডারী পরিমন্ডলে কেয়ামত পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষ এই মহা মনিষীর দিক নির্দেশনা শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করে যাবেন। এই মহান সাধক ২০০২ ইং সালের ২০শে জানুয়ারি ১০ই মাঘ রোজ বুধবার তিরাশি বৎসর বয়সে লক্ষ কোটি আশেকভক্তকে শোক সাগরে ভাসিয়ে মহান আল্লাহর দিদার লাভে ধন্য হয়। আল্লাহ যেন উনার উচিলায় আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা করেন। আমিন।