মাইজভান্ডারি ত্বরিকা হযরত ও গোলামুর রহমান মাইজভান্ডারি

67

 

আমার ভাবের ঘরে আগুন দিল কেরে,
সদাই প্রাণে খুঁজে বেড়ায় তারে।
এই বিশ্বজগতে আল্লাহ তালার একত্ববাদ প্রচারে যুগে যুগে নবী রসুলদের উপর আসমানী কিতাব নাযিল হয়েছে। সে কিতাবের বানী প্রচার করে নবী রাসুলগণ অশান্ত পৃথিবীর পথভ্রষ্ট মানবকুলকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন। আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) এর উপর আল্-কোরআন নাযিলের মাধ্যমে নবুয়ত যুগের সমাপ্তি হয়। ইসলাম ধর্ম কোরান ও হাদিসের উপর প্রতিষ্ঠিত। যা ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তি। আল্লাহর হাবীব দুনিয়া থেকে পর্দা নেওয়ার পর ইসলামের ধারা অব্যাহত রাখতে আল্লাহতালা বেলায়েত যুগের সূচনা করেন। যা নায়েবে রাসুল তথা আউলিয়া কেরামের মাধ্যমে কেয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত জারি থাকবে। কোরান হাদিসের আলোকে বিভিন্ন ত্বরিকার মাধ্যমে ইসলামের যে সুমহান বানী পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার মধ্যে মাইজভাÐারি ত্বরিকা অন্যতম। মাইজভান্ডারি দর্শনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য বহুমুখী এবং ব্যাপক, এগুলো আবদ্ধ করে শেষ করা যাবে না। কারন একজন মানুষের দেহ, মন, চিন্তাধারা, আত্মা, তথা প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সর্ববিদ শুদ্ধাচার অনুশীলনই হচ্ছে মাইজভান্ডারি দর্শনের মূল কথা। ইসলামের অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য হচ্ছে বিনয়, আদব ও মহব্বত। মাইজভান্ডারি ত্বরিকার প্রতিষ্ঠাতা প্রাণ পুরুষ গাউছুল আজম হযরত আহমদউল্ল্যাহ (কঃ) তার জীবদ্দশায় আপন ভ্রাতুস্পুত্র, তারই আধ্যাত্মিক বাগানের ভূবন মোহিনী গোলাপ হযরত গোলামুর রহমান বাবাভান্ডারিকে আপনগুণে গুণান্বিত করে যোগ্য উত্তরসূরি হিসাবে গড়ে তুলে মাইজভান্ডারি সিংহাসনে সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। যার প্রেমের আকর্ষণে সমগ্র সৃষ্টিকূল মাতোয়ারা হয়েছে। জাতি ধর্ম নিবির্শেষ সকল মানুষ তার কৃপা লাভে ধন্য হয়েছে। আজ সেই মহান গাউছুল আজম “গোলামুর রহমান” বাবাভান্ডারির পবিত্র খোজরোজ শরীফ। সন ১২৮৪ হিজরী ১২ জমাদিউছানী বাংলা ১২৭০ সনের ২৭ শে আশ্বিন রোজ সোমবার আল্লাহর অফুরন্ত নেয়ামতের ভান্ডার বাবাভান্ডারি পৃথিবীর জমিনে শুভাগমন করেন। তার জীবনী সম্মন্ধে কিছু লেখা এই অধমের পক্ষে সম্ভব নয়। তার বংশ পরিচয় সকলের জানা।
হযরত বাবাভান্ডারি কেবলা কাবার ইবাদত, মোরাকাবা, মোশাহাদা, নির্জনতা, নীরবতা, গৃহত্যাগ, সংসারবিরাগ প্রত্যেকটির মূলে তার নিজ ভাষায়, “বহু বছর ধরে তোমার সন্ধানে আছি। আমার প্রাপ্য এখন ও তুমি পূর্ণ করছ না। আমি দৈববানীযোগে জানলাম, তোমার দুয়ার হতে কেহ নৈরাশ হয়ে ফিরে যায় নাই, যে ব্যক্তি তোমার দুয়ারে আশার আলো নিয়ে হাজির হয়েছে, সে তার মনজিলে মকছুদে পৌঁছবেই” হযরত বাবাভান্ডারি কেবলার (রাঃ) স্বহস্তে লিখা উর্দু কবিতার অনুবাদ থেকে জানা যায়, তার ফরিয়াদ ছিল মাত্র একটি, শুধু মহান আল্লাহর জাতে নুরের মধ্যে বিলীন হওয়া যা থেকে চিরন্তন তার অবস্থান অবিসংবাদিত থাকবে। এ লক্ষ্যে অর্জনের জন্য হযরত বাবাভাÐারি (রাঃ) বেরিয়া ইবাদতে পাহাড়, জঙ্গল, নদী, সমুদ্রে, পরিভ্রমণরত হলেন। যে প্রেমানলে উন্মুক্ত হয়ে বাবাভান্ডারি (রাঃ) সংসার বিরাগী হয়ে অজানা অচেনা দূর্গম পথ ভ্রমণে যান। সুলতানুল হিন্দ খাজা গরীবে নেওয়াজের ভাষায় তা হচ্ছে “তোমার প্রেমের আগুন এখন আমার হৃদয়ে পতিত হয়েছে, আমার সকল আরাম সুখ বরবাদ হয়ে গেছে” এক কথায় হযরত বাবাভাÐারি (রাঃ) যৌবন কেটেছে “মওলার প্রেমাগুণে পোড়ার” মধ্যে দিয়ে। আধ্যাত্মিক জগতের সর্বোচ্ছ সোপান হচ্ছে বাকাবিল্লাহ। অহর্নিশ ইবাদত, রেয়াজত, পূর্ণমাত্রায় সংযম এবং সর্বপ্রকার মানবীয় ইচ্ছা- অনিচ্ছার উপর মহান আল্লাহর সার্বিক নিয়ন্ত্রণ ও কতৃত্বের প্রতি বিনম্র আনুগত্যের মাধ্যমে বাকাবিল্লার সোপানে নিজেকে সমর্পিত করতে হয়। বাকাবিল্লাহ অর্থ “আল্লাহতে স্থিতি লাভ করা” হযরত বাবাভান্ডারি কঠোর রেয়াজতের মাধ্যমে এই স্তর লাভ করেন।
আজ এই উপ মহাদেশে তথা সমগ্র বিশ্বে মাইজভান্ডারি দর্শন সর্বজাতীয় মানুষের কাছে অনুস্মরণীয় ও অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে। কেননা এই দর্শনে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে ও দুনিয়া আখেরাতে সফল হয়ে খোদার সান্নিধ্য লাভে ধন্য হয়।
এই মহান গাউছুল আজমের অসংখ্য কেরামত রয়েছে যা লিখে শেষ করা যাবে না। তারপরও দুই একটা বর্ণনা করতে হয়-
১। ত্রিপুরা জেলার অন্তর্গত নোয়াদা নিবাসী আবদুল মজিদ মিয়া বাবাজান কেবলার (রাঃ) মুরিদ ছিলেন। মৃত্যুকালে হঠাৎ বলিতে লাগিলেন তোমরা সরিয়া যাও, ভাল বিছানা দাও, গাউছুল আজম মাইজভাÐারি বাবাজান কেবলা (রাঃ) তশরীফ আনিয়াছেন। বাবা গাউছুল আজম, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মদুর রাসুল্লাহ” এই পর্যন্ত বলিয়া ওফাৎ প্রাপ্ত হইলেন।
২। একবার নোয়াখালী নিবাসী জনৈক লোক একটি বড় রুইমাছ দরবার শরীফে আনিয়া বাবাজান (রাঃ) সামনে রাখেন। মাছটি মরিয়া শুষ্ক হইয়া বক্র হইয়াছিল। বাবাজান কেবলা (রাঃ) মাছটির উপর পানি ঢালিলেন উহা জীবিত হইয়া নড়িতে থাকে।
বর্ণনাকারী মৌঃ শরাফত উল্লাহ, মৌঃ ছৈয়দুর রহমান, মৌলভী আবদুস ছাত্তার প্রমুখ
মানবতার কল্যাণে, দুঃখ দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের দুঃখ লাগবে প্রকাশ করলেন অসংখ্য কারামত, পরিশুদ্ধ করলেন মানুষকে, খোদার নৈকট্য লাভে ধন্য অসংখ্য অগনিত পাপী তাপী দিশেহারা মানবকে। তার দয়ার নজরে কত যে, খোদা প্রেমিককে আউলিয়া বানাইয়া দিয়াছে তার কোন হিসাব নাই। আজ এই মহান খোজরোজ শরীফে হযরত গাউছুল আজম “গোলামুর রহমান” বাবাভান্ডারি (রাঃ)এর ফয়েজ, রহমত, বরকত, আমাদের সকলের উপর বর্ষিত হোক, আমিন।

লেখক : প্রাবন্ধিক