মহিমান্বিত রজনী লায়লাতুল কদর সকলপ্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহামারী থেকে রক্ষায় হোক বিশেষ প্রার্থনা

68

আজ পবিত্র শবে কদর বা লায়লাতুল কদর। কালের পরিক্রমায় বছর ঘুরে পবিত্র রমজানের ২৬ তারিখ দিবাগত রাত ২৭ তারিখ দিবসে এ রজনীর শুভাগমন হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে এ রাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এ রাতের বিশেষত্ব নিয়ে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। তবে এবারের এ পুণ্যময় রজনীটি ভিন্ন মেজাজে আমাদের দ্বারে সমাগত। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী মসজিদগুলোতে মুসলমানদের গমানগমন সীমিত করা হয়েছে। মানুষও ভাইরাস থেকে রক্ষায় সতর্কতার সাতে মসজিদে যাচ্ছেন, অথবা বাড়ি/বাসায় বসে ইবাদত বন্দেগি করছেন। লায়লাতুল কদর রাতটি যখন আমরা পাচ্ছি তখন আমাদের দেশে করোনার রূপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার দুটিই। একইসাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘনঘটাও চলছে দেশব্যাপী। ‘আম্ফান’ নামক একটি ভয়াবহ ঘর্ণীঝড় ধেয়ে আসছে আমাদের দিকে। আজ সকালে বা দিনের যেকোন সময় এ ঝড়টি আঘাত হানতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছেন। এ অবস্থায় নানা শঙ্কা , ভয় ও মানসিক দূরবস্থা নিয়ে আমাদের এ রাতটি খোদার তরে সপে দিয়ে ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আজকার, দরুদ-সালাম ও আল্লাহর দরবারে তাঁর করুণা ও দয়ার ভিক্ষা নিয়ে হাত তুলে প্রার্থনা ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। মহান ¯্রষ্টা আল্লাহ বন্দাদের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে আযাব সুলভ এসব দুর্যোগ-মহামারী দিয়ে থাকেন। আমরা পাপিতাপি বান্দা আল্লাহর ক্ষমা ও দয়ার আশ্রয় চাইলে নিঃসন্দেহে প্রভু আমাদের মুক্তি দিবেন; আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী এ আশা করতে পারি আমরা। আসুন, আমরা আজ তাঁরই কাছে নিজেদের চূড়ান্ত আনুগত্যসহকারে আত্মসমর্পণ করি। প্রকৃত মুসলমানের দাবি নিয়ে নবীজি (দ.) এর অসিলায় দোয়া করি, মোনাজাত করি।
লাইলাতুল কদর এমন মহিমান্বিত বরকতময় এবং বৈশিষ্ট্যমÐিত রাত, এ রাতের শ্রেষ্ঠত্ব মাহাত্ম্য ও মর্যাদার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এ গৌরবময় রজনীতে মানবজাতির পথপ্রদর্শক ও মুক্তির সনদ মহাপবিত্র ঐশীগ্রন্থ ‘আল-কোরআন’ অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেছে, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তি, শান্তিই বিরাজ করে উষার আবির্ভাব পর্যন্ত।’ (সূরা আল-কদর, আয়াত ১-৫)
লাইলাতুল কদরের যাবতীয় কাজের ইঙ্গিত দিয়ে এ রজনীর অপার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনে অন্যত্র ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) এক মুবারকময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরিকৃত হয়।’ কদরের রাতে অজগ্র ধারায় আল্লাহর খাস রহমত বর্ষিত হয়। এ রাতে ফেরেশতারা ও তাঁদের নেতা হজরত জিবরাঈল (আ.) পৃথিবীতে অবতরণ করে ইবাদতরত সব মানুষের জন্য বিশেষভাবে দোয়া করতে থাকেন। এ রজনীতে এত অধিক সংখ্যক রহমতের ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরণ করেন যে সকাল না হওয়া পর্যন্ত এক অনন্য শান্তি বিরাজ করতে থাকে। লাইলাতুল কদরের ফজিলত অপরিসীম। হাজার মাস ইবাদতে যে সওয়াব হয়, কদরের এক রাতের ইবাদত তার চেয়ে উত্তম। লাইলাতুল কদরের মহিমাময় রাতে মুমিন মুসলমানদের ওপর আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। লাইলাতুল কদরে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে মাগফিরাত, নাজাত ও ক্ষমা পাওয়ার পরম সুযোগ লাভ করা যায়। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি এ রাত ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করবে, আল্লাহ তাঁর পূর্বেকৃত সব গুনাহখাতা মাফ করে দেবেন।’ (বুখারি)
লাইলাতুল কদর গোটা মানবজাতির জন্য অত্যন্ত পুণ্যময় রজনী। এ রাত বিশ্ববাসীর জন্য আল্লাহর অশেষ রহমত, বরকত ও ক্ষমা লাভের অপার সুযোগ এনে দেয়। এ রাত হচ্ছে মহান আল্লাহর কাছে সুখ, শান্তি, ক্ষমা ও কল্যাণ প্রার্থনার এক অপূর্ব সুযোগ। এ রাতে অবতীর্ণ মানবজাতির পথপ্রদর্শক ও মুক্তির সনদ পবিত্র কোরআনের অনুপম শিক্ষাই ইসলামের অনুসারীদের সার্বিক কল্যাণ ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি, ইহকালীন শান্তি ও পারলৌকিক মুক্তির পথ দেখায়। অতএব, আসুন! মাহে রমজানে অফুরন্ত নিয়ামতের আধার ‘লাইলাতুল কদর’ তালাশ করতে সচেষ্ট হই এবং শেষ দশকের সম্ভাব্য বেজোড় রাতগুলোতে সমগ্র রাতব্যাপী ইবাদত-বন্দেগিতে নির্ঘুম কাটিয়ে দিই।