মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা

172

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কয়েক হাজার অবৈধ ট্যাক্সি ও ব্যাটারি রিকশা। এছাড়া ভ্যানগাড়িসহ তিন চাকার ছোট যানবাহনও চলছে প্রতিনিয়ত। মহাসড়কে এসব যানবাহন চলাচল কাগজে-কলমে নিষিদ্ধ হলেও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশকে ম্যানেজ করেই চলছে। এ কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
২০১৫ সালের ৭ আগস্ট সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দেশের ২২টি জাতীয় মহাসড়কে নিষিদ্ধ করেন সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত টেক্সিসহ সব ধরনের টেম্পু ও থ্রি হুইলার চলাচল। যার মধ্যে রয়েছে এন ওয়ান সড়ক কাঁচপুর সেতু (ঢাকা), মদনপুর, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, রামু। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সড়কটিও এন ওয়ান এর অন্তর্ভুক্ত। তালিকার বাইরে থাকা অন্যান্য সব সড়ক-মহাসড়কে এসব যানবাহন চলাচলে পুলিশি বাধাসহ নানা হয়রানি রোধেরও নির্দেশনা দেন মন্ত্রী। তখন মন্ত্রী মহাসড়কের পাশে অবস্থিত সিএনজি ফিলিং স্টেশন থেকে গ্যাস সংগ্রহের জন্য মহাসড়কে ভোর ৬টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত টেক্সি, টেম্পু এবং অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করতে পারবে বলেও ঘোষণা দেন। তারপর কিছুদিন রাস্তায় তিন চাকার গাড়ি চলাচল না করাতে রাস্তায় দুর্ঘটনার পরিমাণ কমে আসে। কিন্তু কে শোনে কার কথা? ইচ্ছেমত টোকেনের মাধ্যমে মহাসড়কে আবারও তিন চাকার গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়।
অভিযোগ রয়েছে, হাইওয়ে পুলিশ, জেলা ট্রাফিক পুলিশ ও স্থানীয় থানা পুলিশের কাছ থেকে টোকেন নিয়ে মহাসড়কে চলছে এসব যানবাহন। সরেজমিন এসব যানবাহনের টোকেন বাণিজ্যের প্রমাণও পাওয়া যায়। যাত্রীরা বলছেন, এসব ট্যাক্সির কারণে মহাসড়কে প্রতিনিয়ত মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে পর্যাপ্ত লোকাল বাসের ব্যবস্থা রাখা হলে যাত্রীদের সুবিধা হয়।
যাত্রী আব্দুল কাদের বলেন, ছোট গাড়িগুলো মহাসড়কে যাত্রী পরিবহনের অযোগ্য। এসব ট্যাক্সি সমিতির মাধ্যমে লোকাল টিআইকে (ট্রাফিক পরিদর্শক) ম্যানেজ করে মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়ায়। তিন চাকার গাড়ি অভ্যন্তরীণ সড়কের জন্য সুবিধাজনক। মহাসড়কে তিন চাকার গাড়ি চালানো মানেই দুর্ঘটনা ডেকে আনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সিএনজি অটোরিকশা ও ব্যাটারি রিকশা চালক বলেন, পুলিশকে টাকা দিয়ে তারা সড়কে গাড়ি চালানোর অনুমতি নিয়েছেন। প্রতিমাসে এসব টোকেন সংগ্রহ করতে হয় বিভিন্ন মালিক সমিতি ও সংগঠনের নামে। হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ও স্থানীয় থানা পুলিশকে টাকা দিয়ে এসব গাড়ি সড়কে চলছে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বাসচালক মো. আব্দুল ওয়াজেদ বলেন, ব্যাটারি রিকশা, সিএনজি ট্যাক্সির জন্য সড়কে গাড়ি চালানো কঠিন। এসব গাড়ির চালকের কোনো কাÐজ্ঞান নেই। সড়কের যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যায়। হঠাৎ করেই ইউটার্ন নিয়ে বসে। এসব কারণে দুর্ঘটনা বেশি হয়।
যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দীন চৌধুরী বলেন, কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ও গুটিকয়েক পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতার যোগসাজশে মহাসড়কে এই সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করছে। সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করতে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল সরকারের পক্ষ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হলেও এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে প্রশাসনের আগ্রহ নেই।
‘আবার সিএনজি অটোরিকশা সাধারণ জনগণের জন্য বিপদের সময় অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার হয়। মহাসড়কের পাশে এইসব থ্রি-হুইলার চলাচলের জন্য ছোট রোড তৈরি করা হলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। এই ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত কোনভাবে যেন এইসব পরিবহন মহাসড়কে চলাচল করতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মো. মুছা বলেন, এসব সিএনজি ট্যাক্সির কারণে মহাসড়কে এত দুর্ঘটনা হচ্ছে। আর দোষ আসে বাস চালকদের ওপর। মহাসড়কটি (চট্টগ্রাম-কক্সবাজার) হচ্ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা, সরকারের প্রত্যেক দফতরের কর্মকর্তারা এর ওপর দিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করেন। এসব তাদের নজরে পড়লেও ব্যবস্থা নেয় না কেন? এই রাস্তার দিকে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নজর দেয়া জরুরি বলে আমি মনে করি।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার ওসি মো. ইয়াছিন আরাফাত বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাটারি রিকশা যারা চালাচ্ছেন, তাদেরকে আমরা মানবিক বিবেচনায় একটু ছাড় দিচ্ছি। কারণ করোনা মহামারির ফলে অনেকেই গণপরিবহন বিমুখ হচ্ছেন। ছোট ছোট পরিবহন ব্যবহারে তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। তারপরেও আমরা অভিযান বন্ধ রাখিনি। আমরা প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে সবাইকে সাবধান করে দিচ্ছি। আমাদের চোখের সামনে পড়লেই সিএনজি ট্যাক্সি, ব্যাটারি রিকশাসহ তিন চাকার যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে এবং নিয়মিত জব্দ করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের চট্টগ্রাম জোনের সহকারী পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কে ব্যাটারি রিকশা, প্যাডেল রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, ভ্যানগাড়িসহ তিন চাকার ছোট যানবাহন চলাচল না করার নির্দেশনা রয়েছে। প্রতিনিয়ত আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ওইসব গাড়ির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি। একইসাথে মামলা দিই এবং গাড়ি আটক করি। মহাসড়কে ব্যাটারি রিকশা, প্যাডেল রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। টোকেন বাণিজ্যের সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের কেউ জড়িত নয়, তবে কেউ জড়িত হলে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।