মহামারীতে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর সম্পদ দ্বিগুণ হয়েছে: অক্সফাম

23

পূর্বদেশ অনলাইন
মহামারী বহু মানুষকে দরিদ্র বানালেও বিশ্বের ধনকুবেরদের সম্পদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে উঠে এসেছে দাতব্য সংস্থা অক্সফামের এক প্রতিবেদনে। ওই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিবিসি সোমবার জানিয়েছে, মহামারী শুরুর পর ২০২০ সালের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের শীর্ষ ১০ জন ধনীর সম্মিলিত সম্পদ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীতে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে ২১ হাজার মানুষ।
সাধারণত দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভা শুরুর আগে অক্সফাম বৈশ্বিক বৈষম্যের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। অক্সফাম জিবির প্রধান নির্বাহী ড্যানি শ্রীসকান্দারাজাহ বলেন, অর্থনীতি, ব্যবসা ও রাজনৈতিক খাতের প্রভাবশালীদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্যই প্রতিবছর দাভোস সম্মেলনের আগে তাদের এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

“এ বছর, যেটা ঘটছে তা হিসাবের বাইরে। এই মাহামী চলার সময় প্রায় প্রতিদিন একজন করে নতুন শতকোটিপতি তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে লকডাউন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হ্রাস, বৈশ্বিক পর্যটন সংকোচনের কারণে বিশ্বের ৯৯ শতাংশ মানুষ লোকসানে পড়েছে এবং এর ফলে, ১৬ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমায় নেমে গেছে।” অক্সফামের প্রধান নির্বাহী বললেন, “আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কোথাও খুব গভীরে ত্রুটি রয়ে গেছে।”

সুইজারল্যান্ডের নৈসর্গিক স্কি রিসোর্ট দাভোসে ফি-বছর আয়োজিত সভায় সাধারণত কয়েক হাজার রাজনৈতিক ও করপোরেট প্রতিনিধি, বিনোদন জগতের তারকা, প্রচার কর্মী, অর্থনীতিবিদ ও সাংবাদিকরা জড়ো হয়ে আলোচনা, পান পর্ব ও মতবিনিময়ে অংশ নেন। তবে মহামারীর কারণে গতবারের মত এবারও এই সভা অনলাইনে হচ্ছে, যা শুরু হয়েছে সোমবার। শুরুতে শারীরিক উপস্থিতিতে সভা আয়োজনের পরিকল্পনা থাকলেও করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনটি ছড়িয়ে পড়ায় তা বাদ দেওয়া হয়। এবারের আলোচ্যসূচির মধ্যে থাকছে মহামারী নিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা, টিকা পাওয়ার সমতা ও জ্বালানি পরিবর্তন।

ফোর্বস ম্যাগাজিনের বরাতে অক্সফামের প্রতিবেদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী হিসেবে- ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস, বেরনাহ আরনোহ ও পরিবার, বিল গেটস, ল্যারি এলিসন, ল্যারি পেইজ, সের্গেই ব্রেইন, মার্ক জাকারবার্গ, স্টিভ বলমার ও ওয়ারেন বাফের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মহামারী শুরুর পর যৌথভাবে তাদের মূলধন ৭০০ বিলিয়ন বা সাত লাখ কোটি ডলার থেকে বেড়ে দেড় ট্রিলিয়ন বা ১৫ লাখ কোটি ডলার হয়েছে। তবে তাদের সবার সম্পদ সমানভাবে বাড়েনি, যেমন ইলন মাস্কের সম্পদ ১০০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে, অন্যদিকে বিল গেটসের সম্পদ বেড়েছে ৩০ শতাংশ।
বিশ্ব ব্যাংকের তথ্যউপাত্তের ভিত্তিতে করা অক্সফামের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগের অভাব, ক্ষুধা, জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রতি চার সেকেন্ডে একজনের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে।
কোভিড মহামারীর পর নতুন করে ১৬ কোটি মানুষের দৈনিক জীবনযাপনের ব্যয় সাড়ে পাঁচ ডলারের নিচে নেমে গেছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে দিনে সাড়ে পাঁচ ডলার খরচ করার সামর্থ্যকে দারিদ্র্যসীমা হিসেবে বিবেচনা করে বিশ্ব ব্যাংক।
অক্সফামের প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারীর কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ কমাতে বাধ্য হয়েছে কারণ জাতীয় ঋণ বাড়ছে। লিঙ্গভিত্তক সমতা অর্জন পিছিয়ে পড়েছে, কারণ ২০১৯ এর তুলনায় বর্তমানে এক কোটি ৩০ লাখ কম নারী কর্মক্ষেত্রে কাজ করছে এবং দুই কোটির বেশি মেয়ে আর কখনো বিদ্যালয়ে ফিরতে না পারার ঝুঁকির মুখে। যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি এবং যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকানসহ জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠী কোভিডে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শ্রীসকান্দারাজাহ বলেন, “একটি বৈশ্বিক সংকটের মুখেও আমাদের বৈষম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা শীর্ষ ধনীদের নজরকাড়া মুনাফা অর্জনের পথ করে দিয়েছে, কিন্তু গরিবদের রক্ষায় এ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। রাজনৈতিক নেতাদের সামনে এখন একটি ঐতিহাসিক সুযোগ এসেছে আমাদের এই সংকটপূর্ণ পথ বদলে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণের।
“নতুন অর্থনৈতিক কৌশলে আরও প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যেখানে সম্পদ ও মূলধনের ওপর উচ্চতর শুল্ক আরোপ করা থাকবে, এবং উন্নততর সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ও সবার জন্য সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতে এই রাজস্ব ব্যয় করা হবে।”

আরও বিস্তৃত উৎপাদন ও দ্রুততর সরবরাহ নিশ্চিতে কোভিড-১৯ টিকার মেধাস্বত্ত্ব তুলে নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে অক্সফাম।