মহাপ্রলয়ের পূর্বে যা সংঘটিত হবে

18

ড. মুহম্মদ মাসুম চৌধুরী

একদিন আল্লাহর মহা সৃষ্টি ধ্বংস হয়ে যাবে। জীব-জন্তু, তরুলতা, মানুষ-ফেরেস্তা, আসমান-জমিন সব কিছুর অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যাবে। আল্লাহর অস্তিত্বই শুধু টিকে থাকবে। এই মহা ধ্বংসযজ্ঞকে বলে মহাপ্রলয় বা কিয়ামত। কিয়ামত সংগঠিত হওয়ার পূর্বে অনেক লক্ষণ প্রকাশ হবে। এসবের কিছু নি¤েœ পত্রস্থ করা হলো। (১) মানবিক জ্ঞান এবং জ্ঞানি উঠে যাবে। (২) ব্যবিচার, মদ্যপান, বেহায়াপনা বৃদ্ধি পাবে। (৩) পূর্ব-পশ্চিম এবং আরবে, এই তিন স্থানে ভূমিধস হবে (৪) দুনিয়াবী ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। (৫) নারীর সংখ্যা অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে। (৬) আরবে নদী সৃষ্টি হবে, ফসল উৎপন্ন হবে। ফুয়াত নদী তার গুপ্ত ভাÐার খুলে দিবে এবং তা সোনার পাহাড়ে রূপায়িত হবে। (৭) অশ্লীল গান বাজনা বৃদ্ধি পাবে। (৮) বাবা-মা হতে বন্ধু বান্ধবের গুরুত্ব বেশি হবে। মা-বাবার অবাধ্য হবে সন্তান। স্বামী-স্ত্রীর কথায় চলবে। (৯) মানুষ পূর্ব পুরুষকে অভিশাপ দিবে। (১০) মসজিদে মানুষ বাজারের মত হৈ-হুল্লাট করবে। (১১) আযোগ্য লোক নেতা হবে। (১২) যারা ঘৃণিত লোক তারা রাজ প্রাসাদের মত প্রসাদে বসবাস করবে। (১৩) হিং¯্র জানোয়ার মানুষের সাথে কথা বলবে। জুতোর ফিতা হতে শব্দ বের হবে। (১৪) হাতের তালুতে যে ভাবে জ¦লন্ত কয়লা রাখা যাবে না সেখাবে ঈমানও রাখা কঠিন হবে। (১৫) সময় দ্রæত ফুরিয়ে যাবে। সময়ে কোন বরকত পাওয়া যাবে না। (১৬) সূর্য পশ্চিমাকাশে উদিত হবে। তখন থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার সময় শেষ হবে। (১৭) দাজ্জালের আবির্ভাব হবে। আমরা জানি পৃথিবীতে অনেক দাজ্জাল এসেছে এবং আসবে। এসব দাজ্জালের মধ্যে একজন বড় দাজ্জাল আছে। এই বড় দাজ্জালের আবির্ভাবের আগে ও পরে সর্বমোট ত্রিশ জন দাজ্জাল প্রকাশিত হবে। সব দাজ্জালই নিজকে নবী বলে দাবি করবে।
বড় দাজ্জাল খোদা দাবি করবে। সে একচোখ কানা হবে। তার কপালে ‘কাফির’ লিখা থাকবে। ঈমানদারগণ তা দেখতে পাবে কিন্তু কাফিরগণ দেখবে না। সে একপ্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে দ্রæত যাতায়াত করতে পারবে। মক্কা ও মদিনা ছাড়া সমগ্র পৃথিবী চল্লিশ দিনে ঘুরে ফেলবে। সে চল্লিশ দিনের প্রথম দিন হবে এক বছর। দ্বিতীয় দিন হবে একমাস। তৃতীয় দিন হবে এক সপ্তাহ এবং বাকী দিনগুলো হবে চব্বিশ ঘণ্টায়। তার ফিতনা হবে মহাভয়ঙ্কর। তার সাথে বেহেস্ত রূপি একটি বাগান এবং দোজখরূপি একটি অগ্নিকুÐ থাকবে। সত্রি হলো তার দোজখ হবে বেহেস্ত এবং বেহেস্ত হবে হবে দোজখ। মানুষ সে বলবে আমাকে খোদা স্বীকার কর। যারা স্বীকার করবে তাদেরকে তার বেহেস্তে নিক্ষেপ করবে আর যারা স্বীকার করবে না তাদেরকে তার দোজখের নিক্ষেপ করবে। তার নির্দেশে জমিন ফসল উৎপন্ন করবে। সে আসমান হতে পানি বর্ষণ করতে পারবে এবং মৃত্যুকে জীবিত করতে পারবে। অনুন্নত জায়গা দিয়ে সে যখন যাবে তখন দামী খনিজ সম্পদ তার পিছনে পিছনে ছুটবে। এসব আসলে অলৌকিক নয় সবই যাদু। তাই সে উপস্থিত থাকলে এসব দেখা যাবে। চলে যাওয়ার পর কিছুই আর দেখা যাবে না। এই দাজ্জালের সাথে ইহুদী সৈনিকরাই যোগদিবে। পবিত্র ভূমি মক্কা ও মদিনায় প্রবেশ করতে চাইলে দাজ্জালকে আল্লাহর ফেরেস্তারা প্রতিরোধ করবে।
দাজ্জাল সমগ্র পৃথিবী ঘুরে যখন শাসন বা সিরিয়ায় পৌঁছাবে হযরত ইসা (আ.) প্রাতঃকালে দামেস্কের জামে মসজিদের পূর্ব মিনারের উপর আসমান হতে অবতীর্ণ হবেন। তখন ফজরের নামাজের ইকামত হবে। এই নামাজে হযরত ঈসা (আ.) ঈমাম মাহদী (আ.) কে ঈমামতি করতে বলবেন। ঈমাম মাহদীর ইমামতি দুই রাকাত নামাজ শেষ হবে। এ সময় দাজ্জাল ঈসা (আ.) নিঃশ^াসের সুঘ্রাণে লবণে পানি যেভাবে গলে যায় সেভাবে গলতে থাকবে। দাজ্জাল পালাতে চাইবে কিন্তু পালাতে পারবে না। হযরত ঈসা (আ.) তার পিঠে বল্লম মেরে হত্যা করে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিবে। হযরত ঈসা (আ.) ক্রশ চিহ্ন ভেঙ্গে ফেলবেন এবং শুকুর হত্যা করবেন। ইহুদী খৃস্টানরা তার প্রতি ঈমান আনবেন। সমগ্র দুনিয়া হযরত ঈসা (আ.) আল্লাহর নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ধর্ম ইসলামই প্রতিষ্ঠা করবেন। দুনিয়ার মধ্যে এমন শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে তখন শিশু সাপের সঙ্গে খেলবে এবং বাঘ ছাগলের সাথে বন্ধুর মত অবস্থান করবে। হযরত ঈসা (আ.) দুনিয়াতে তখন বিয়ে করবেন এবং সন্তানও ভুমিষ্ঠ হবে। চল্লিশ বছর পর্যন্ত তাঁর রাজস্ব চলবে। অতঃএব তিনি ইন্তেকাল করবেন।
হযরত ঈমাম মাহাদী (আ.) আবির্ভাব হবে মহানবী (দ.)’র বংশে, তিনি হোসানী সৈয়দ বংশায় হবেন। তিনি হবেন জগতের বিখ্যাত ঈমাম এবং মুজতাহিদ। মহাপ্রলয়ের পূর্বে যখন পৃথিবীব্যাপী কুফরী মানুষকে গ্রাস করবে তখন ইসলাম শুধু মক্কা ও মদিনায় থাকবে। তখন দুনিয়ার অলি আবদাল ও নেক্কার বান্দাগণ হিজরত করে সেখানে চলে যাবেন। এই হিজরতের মাস হবে রমজান। অলি আবদালগণ তখন খানায়ে কাবা তাওয়াফ করতে থাকবেন। তাওয়াফরত অবস্থায় অলি আবদালগণ ঈমাম মাহদী (আ.) কে চিনতে পারবেন। সবায় তাঁর হাতে বায়াত গ্রহণ করতে চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করবেন। তখন গাযরী শব্দে শোনা যাবে, ‘ইনি আল্লাহ পাকে খলিফা ঈমাম মাহদী। তোমরা ওনার কথা শুন এবং তাঁর হুকুম মেনে চলো’। তখন সকলে ঈমাম মাহদী (আ.)’র হতে বায়াত গ্রহণ করবেন। সকলকে সাথে নিয়ে তিনি চলে যাবেন সিরিয়ায়; সেখানে হযরত ঈসা (আ.)’র আবির্ভাব হবে এবং তিনি দুই রাকাত নামাজের ঈমামতি করবেন।
কিয়ামতের পূর্বেই হযরত ঈসা (আ.) দোয়ায় ইয়াজুজ মানুজের ধ্বংস হবে। ইয়াজুজ মাজুজ হলে ইয়াফেজ বিন নুহ (আ.)’র বংশের লোক। এক সময় তারা পৃথিবীতে ফিতনা ফ্যাসাদ করে বেড়াতো। তারা বসন্তকালে বের হয়ে মানুষের সজীব তরজামা জিনিস খেয়ে ফেলতো এবং শুস্ক বস্তু করতো নষ্ট। মানুষ, জীব-জন্তু, সাপ, বিচ্ছু সবই তারা খেয়ে ফেলতো। হযরত জুল কারনাইন লোহার দেয়াল তৈরী করে তাদের বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়। কিয়ামতের পূর্বে যখন হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করে মুসলমানদের তুর পাহাড়ে নিয়ে যাবেন তখন দেয়াল ভেঙ্গে এই ইয়াজুজ মাজুজের দল বের হয়ে আবার পৃথিবীতে সংঘাত, হত্যা, লুটপাট ও ফ্যাসাদ সৃষ্টি করতে থাকবে। অবশেষে এই ইয়াজুজ মাজুজের দল হযরত ঈসা (আ.)’র দোয়ায় ধ্বংস ও বিলুপ্ত হবে।

লেখক : কলাম লেখক, রাজনীতিক