মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আজ উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে

16

আজ মহান স্বাধীনতা দিবস। আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি; সুবর্ণজয়ন্তী। আজ ইতিহাসের উপর ইতিহাস রচনা হবে। বাংলাদেশের প্রথম বা দ্বিতীয় প্রজন্মের কাছে আজকের দিনটি হতে পারে পরম তৃপ্তির, পরম প্রাপ্তির। আর তৃতীয় প্রজন্ম অপেক্ষা করতে পারেন সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ১০০ বছরের জন্য। তাই আজকের দিনটি তিন প্রজন্মের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সাথে বিশ্ববাসীর কাছেও। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে আন্তর্জাতিক বিশ্বের রাষ্ট্রনায়কদের উপস্থিতি ও শুভেচ্ছাবাণী বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষদের প্রাণিত করছে। বাংলাদেশকেও অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এককথায় স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির এ শুভক্ষণ জাতি অনুভব করছে এক আনন্দঘন অনুভূতি। সারা বিশ্বের সুদৃষ্টিও আজ বাংলার শ্যামল প্রান্তরে। স্বাধীনতার এ সুবর্ণজয়ন্তীতে দৈনিক পূর্বদেশের পক্ষ থেকে পাঠক ও শুভানুধ্যায়িদর জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা।
বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, ‘ History of civilization is written in blood & tear ’. ঐতিহাসিক এ সত্যকে উপলব্ধি করেই আমরা বলতে পারি আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস যেমন গৌরবের, তেমনি বেদনারও। অনেক রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। আজ আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেই সব জানা-অজানা শহীদকে, যারা তাদের বর্তমানকে বিসর্জন দিয়ে গেছেন এ দেশের ভবিষ্যৎকে সুন্দর করার জন্য। আমরা শ্রদ্ধা জানাই স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের সব সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। বাস্তবে মহাকালের বিচারে ৫০ বছর খুব বড় সময় নয়। তবে এ সময়ের ব্যবধানে স্বাধীনতা অর্জনকারী ও স্বাতন্ত্র্যধারায় প্রতিষ্ঠিত অনেক জাতির অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার নজিরও আছে। আজ আমাদের বিচার-বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন, স্বাধীনতার পাঁচ দশকে আমরা কতটা এগিয়েছি, কী ছিল আমাদের লক্ষ্য ও প্রত্যাশা, পূরণ হয়েছে কতটা? কোথায় আমাদের ব্যর্থতা, কী এর কারণ? স্বাধীনতার অন্যতম লক্ষ্য যদি হয় ভৌগোলিকভাবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বা ভূখÐের অধিকারী হওয়া, তাহলে তা অর্জিত হয়েছে। তবে শুধু এটুকুই বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিকামী মানুষের প্রত্যাশা ছিল না। পাকিস্তানের বর্বরতা ও পরাধিনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে দেশে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সুশান এবং অর্থনৈতিক মুক্তিসহ মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশাও ছিল ব্যাপকভাবে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের রায় মেনে না নেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যুগপৎ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের দাবি প্রবল হয়ে ওঠে বাঙালির মধ্যে। তবে স্বাধীনতার পর দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেলেও তা হোঁচট খেয়েছে বারবার। বজায় থাকেনি এর ধারাবাহিকতা। ফলে আজও পুরোপুরি প্রাতিষ্ঠানিকতা পায়নি গণতন্ত্র। রাজনীতিতে ঐকমত্যের অভাব ও অসহিষ্ণুতাও এর বড় কারণ। অন্তত জাতীয় ইস্যুগুলোয় সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে ঐক্য থাকা প্রয়োজন হলেও কোনো শাসনামলেই তা দেখা যায়নি। এক্ষেত্রে দেশের চেয়ে দলের স্বার্থই হয়ে উঠেছে মুখ্য। এটা সত্য, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষার প্রসার ও হার বৃদ্ধি, নারী উন্নয়ন, শিশুমৃত্যুর হার কমানো, সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে আমাদের। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হয়েছে দেশ। পদ্মাসেতু, উড়াল রেল, কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণসহ বড় বড় মেগা প্রকল্প দেশের অবকাঠামোতে চোখ ধাঁধানো উন্নয়ন ঘটতে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিলেও এর উত্থান ঠেকিয়ে রাখা গেছে। এর মূল কৃতিত্বের দাবিদার জনগণ। এ দেশের মানুষ ধর্মের নামে সহিংসতা সমর্থন করে না। তা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে; গড়ে তুলতে হবে রাজনৈতিক ঐকমত্য।
সরকার সুশাসন ও মানবাধিকার প্রশ্নে যে অঙ্গীকার করেছে তাকে শানিত করতে হবে। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে সব বিভেদ ভুলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সেই ঐক্যের ভিত্তিতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো আমরা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব-এ প্রত্যাশা সবার। এবারের সুবর্ণজয়ন্তী এসেছে এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। গতবছর এ প্রেক্ষাপট রচনা হয়েছিল। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব বর্তমানে ভয়াবহ করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শিকার। এ থেকে আমরা কবে মুক্তি পাব বলা যাচ্ছে না। এরপরও সরকার সতর্কতার সাথে এবারের সুবর্ণজয়ন্তী ব্যাপক আয়োজনে অথচ সীমিত উপস্থিতিতে দিবসটি ১০দিনব্যাপী কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করছে। গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবছরের পূর্ণতার দিন থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আগামীকাল তা শেষ হবে। করোনা সংকট থেকে বাঙালিসহ সমগ্র বিশ্ববাসী দ্রুতই বেরিয়ে আসবে, এটাই এবারের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমাদের সবার প্রত্যাশা।