মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ

19

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বসভায় অনন্য মর্যাদা পেয়েছে মহান একুশের শহীদদের আত্মত্যাগ। আজ মঙ্গলবার সেই রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ। শোক আর গর্বের মহিমান্বিত একটি দিন।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়ায় বিশ্বব্যাপী পালিত হবে দিনটি। দিনের কর্মসূচি শুরু হয়েছে প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১ মিনিটে শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে।
শহীদদের স্মরণে বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করে, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গান গেয়ে ফুল হাতে সারা দেশের শহীদ মিনারে প্রভাতফেরি নিয়ে যাবেন আবালবৃদ্ধবনিতা। স্মৃতির মিনারে শ্রদ্ধায় অবনত হবে লাখো মানুষ। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
আজ সরকারি ছুটির দিন। সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আজ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনভর বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্মরণ করা হবে মহান একুশের আত্মত্যাগ ও মহিমা।
দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে এবং বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেসরকারি রেডিও স্টেশন ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান স¤প্রচার করবে।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মুখের ভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে বিরল ইতিহাস গড়েছে বাঙালি। প্রাণের ভাষা বাংলাকে উর্দুর পাশাপাশি পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে গড়ে ওঠা দুর্বার আন্দোলনে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত, রফিক প্রমুখের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ। যার ফলে বাংলা ভাষা পায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। তারই পথ ধরে শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন এবং একাত্তরে ৯ মাস পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
বাঙালি জাতির জন্য এই দিবসটি হচ্ছে চরম শোক ও বেদনার। অনদিকে মায়ের ভাষা বাংলার অধিকার আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত। যে কোনো জাতির জন্য সবচেয়ে মহৎ ও দুর্লভ উত্তরাধিকার হচ্ছে মৃত্যুর উত্তরাধিকার-মরতে জানা ও মরতে পারার উত্তরাধিকার। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রæয়ারি শহীদরা জাতিকে সে মহৎ ও দুর্লভ উত্তরাধিকার দিয়ে গেছেন।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ দুইদিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে একুশের প্রখম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারাদেশে সংগঠনের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করণ ও কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ এবং প্রভাতফেরি। এছাড়াও, আগামীকাল বিকাল তিনটায় বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করবেন।
অমর একুশে উপলক্ষে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপিও।
এবারেও ‘বিকল্প’ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন
এদিকে নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হলেও চট্টগ্রামে নতুন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পুরোপুরি প্রস্তুত হতে আরও সময় লাগবে; যে কারণে শহীদ দিবস পালনে এবারও আগের বিকল্প স্থানে যেতে হচ্ছে। মাসখানেকের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করে আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান নতুন শহীদ মিনারে করার কথা ভাবা হচ্ছে। এর আগেই প্রস্তুতি শেষ করার কথা পূর্বদেশকে জানিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী গণপ‚র্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ। আজও ২১ ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান মিউনিসিপ্যাল স্কুলের অস্থায়ী শহীদ মিনারে হবে বলে তিনি জানান।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি ‘চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও মুসলিম ইনস্টিটিউটের নির্মাণ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সময় কাজ দ্রুত শেষ করার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন তিনি। এ সময় মেয়র বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ছড়িয়ে দিতে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও মুসলিম ইনস্টিটিউট। ঐতিহ্যবাহী এই জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে প্রকল্পের সেরা মান এবং জননিরাপত্তা। এসময় প্রকল্পের বিভিন্ন দিক এবং কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে মেয়রকে অবহিত করেন প্রকল্প পরিচালক উপ-সচিব লুৎফর রহমান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে গণপূর্ত বিভাগ জানিয়েছিল, শহীদ মিনার অংশের সব কাজ ২০২২ সালের ডিসেম্বরের আগেই শেষ করতে চান তারা। তখন সাংস্কৃতিক সংগঠকদের কেউ কেউ আপত্তি জানালেও একই নকশায় নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের আশ্বাসে তারা রাজি হন। পাশাপাশি এবারের বিজয় দিবসের মধ্যেই কাজ শেষ করার দাবিও জানিয়েছিলেন তারা। গত বছরের ৩ অক্টোবর এ সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভায় পুরাতন শহীদ মিনারটির সংস্কার ও স¤প্রসারণ কাজ পরবর্তী ৯ মাসের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। নির্মাণ কাজের জন্য পুরনো শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলায় ৫ ফেব্রæয়ারি নগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বিকল্প একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। সেখানেই ২১ ফেব্রæয়ারি ও ২৬ মার্চ পালন করা হয়। তবে এবার শহীদ মিনার নির্মাণের মূল কাজ শেষ হলেও জননিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২৩২ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। প্রকল্পের অধীনে মুসলিম ইনস্টিটিউট হল ও পাবলিক লাইব্রেরি অংশের পুরানো স্থাপনা ভেঙে ১৫-তলা গণগ্রন্থাগার ও ৮-তলা মিলনায়তন ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অংশে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের আওতায় ২৫০ জন ধারণক্ষমতার একটি উন্মুক্ত গ্যালারিসহ মুক্তমঞ্চ হবে। মাঝের অংশে আগের মত শহীদ মিনারই থাকছে। ১৯৬২ সালে নগরীর কেসি দে রোডে পাহাড়ের পাদদেশে চট্টগ্রাম নগরীর প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। পরে ১৯৭৪ সালে এটি বর্তমান রূপ লাভ করে। চট্টগ্রামে কোনো স্মৃতিসৌধ না থাকায় একুশে ফেব্রæয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চসহ জাতীয় দিবসগুলোতে সেখানেই কর্মসূচি পালন হয়ে আসছিলো।