মনাম এর বৈঠকখানা কোথায় যেন ভ্রান্তি!

28

 

আজীব কিছিমর গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। এই ছুরতের গরম আগে কখনো দেখিয়াছি বলিয়া মনে পড়িতেছে না। বাতাসে আর্দ্রতা বাড়িয়াছে। বাতাসে আর্দ্রতা বাড়িলে পশিনা নির্গত হয় অধিক। রিক্সা ওয়ালার ভেজা সার্ট পিঠের সহিত লেপটাইয়া গিয়াছে। একে তো করোনা’র কারণে জনজীবন লন্ডভন্ড হইয়া গিয়াছে। দেশের উন্নয়ন থামিয়া নাই। টানেল হইতেছে, সেতু হইতেছে মাগার নগরীর রাস্তাঘাটের বেহাল দশা দর্শনে কর্তৃপক্ষের আই স্পেশালিস্ট দেখানো জরুরি বলিয়া মনে হইতেছে। এক তরফ বঙ্গবন্ধু স্যাটালাইট দ্বিতীয় উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি চলিতেছে অন্য তরফ পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পহেলা রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল বা চুল্লি উদ্বোধনের মাধ্যমে সর্বাধুনিক পারমাণবিক জগতে দাখেল হইল বাংলাদেশ। এবং সেই উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রত্যাশা জাহের করিয়া পাবলিকদের সিনা আরও প্রশস্ত হইয়া বিস্ফোরিত নয়ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে দিনে দিনে উন্নত ও সমৃদ্ধ হইতেছে তাহারই ইঙ্গিত পাইয়াছে। বিদ্যুতের হাল অবস্থা আগের চাইতে অনেক বেহেতর হইলেও ইদানিং বিদ্যুৎ মানুষকে দারুণভাবে ভোগাইতেছে।গত রাত বিদ্যুৎ ছিলনা ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড মাইজ পাড়া আমার এলাকায়। অবশ্য প্রায়শই এই ছুরতের বিড়ম্বনা পোহাইতে হইতেছে। কয়েকদিন আগের এক চিত্র তুলিয়া ধরিলে আশা করি সম্যক বোধগম্য হইবে। রাত সোয়া এগারোটায় বিদ্যুৎ গিয়াছে, রাত পৌনে দুইটাই আসিয়া আবার রাত সোয়া তিনটায় চলিয়া গেল। গরমে হাসপাশ করিতে করিতে গুলবদন অস্থির। কখনো বেছইন ঘুরাইতেছে, কখনো মেঝেতে গড়াগড়ি খাইতেছে। এরইমধ্যে দুই দফে ঝাঁকুনি দিয়া ভূমিকম্প অনুভূত হইল। আমাদের বিদ্যুৎ অফিস নিউমুরিংয়ে যখনই ফোন করিয়া জানিতে চাই এলাকায় বিদ্যুৎ নাই দীর্ঘক্ষণ। তখনই অপর প্রান্ত হইতে অলস কণ্ঠে বলিয়া ওঠে – কাজ করে, কাজ করে । খটাস করিয়া ফোনটা রাখিয়া দেয়। গতরাতে ও তাহাই করিল । অসুস্থ ছিলাম মেজাজ গেল বিগড়াইয়া। আবারও ফোন করিলাম। রিসিভ করিতেছেন না কেহ। আবারও কোশিশ করিলাম। এই ছুরতে বেশ কয়েক বার কোশিশ করিবার পর হুজুরের মেহেরবানি হইল রিসিভ করিতে। বলিলাম – আমি সাংবাদিক মনসুর নাদিম বলছি। কথা শেষ না করে কেটে দিলেন কেন ? আমাকে কি মানুষ মনে হয় নি ?
: না, মানে অনেকে বিরক্ত করছে তো,
: এটাকে আপনি বিরক্ত মনে করেন ? বিদ্যুৎ নেই কেন, কবে নাগাদ আসতে পারে এটা জানা আমার নাগরিক / ভোক্তা অধিকার। আপনি জবাব দেয়া আপনার দায়িত্ব। দায়িত্ব পালনে বিরক্ত বোধ করবেন কেন ? আমি কিছুক্ষণ নীরব থাকলে ও প্রান্ত থেকে বললেন — আমি কী এখন রাখতে পারি?
বল্লাম, রাখুন। বিদ্যুৎ না এলেও মনটা ভালো হইয়া গেল। গ্রাহকদের সহিত সন্মানজনক ব্যবহার বাঞ্চনীয়।
সরকারের উন্নয়ন কর্মসুচি এবং বাস্তবায়ন কোন ক্লান্তি নাই। মাগার যাহারা জিম্মাদারির কুরছিত রাজাধিরাজ বনিয়া বসিয়া আছেন তাহাদেরকে দায়িত্ব অবহেলা, চুরি-চামারি ও দুর্ব্যবহার না করিবার প্রশিক্ষণ দেয়া না হইলে সরকারের উন্নয়ন সমালোচনার প্লাবনে প্লাবিত হইয়া যাইবে। সরকারকে লোকসান গুনিতে হইবে আর চাটার দলের চাটারা নগরের অভিজাত এলাকায় বিলাস বহুল ফ্ল্যাট ও গাড়ির মালিক হইবে। যেই মুল্লুকে সরকারি অফিসের দারয়ান, গাড়ির ড্রাইভার ও পিয়ন শত কোটি টাকার মালিক হয়, সেই মুল্লুকের কর্মকর্তাদের (সবাই না ) অবস্থা কত ভয়ঙ্কর জৌলুস পূর্ণ হইতে পারে তাহা ভাবিয়া দেখিলে অনেকে মুর্ছা যাইবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গৃহহীনদের গৃহ দিয়াছেন সম্পূর্ণ ফ্রি । অথচ কোন কোন জায়গায় সেই নিঃস্ব লোকদের কাছ হইতেও অর্থ আদায় করিয়া অতি নিম্নমানের গৃহ তৈয়ার করিবার অভিযোগ পাওয়া গিয়াছে। মুজিব কোটের অবমাননা করিয়া তাহারা কীভাবে জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব থাকিতে পারে তাহাই এখন কোয়েশ্চন অব মিলিয়ন ডলার । সকিনার বাপ সবসময় কহিয়া থাকেন, স্থানীয় নির্বাচন কে দলীয় মুক্ত রাখিতে। পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে দুবর্িৃত্তরা মওকা পাইয়া যায়। এলাকার প্রতিনিধি এলাকাবাসীর পছন্দর হইলে এলাকায় শান্তি বিরাজ করিবে। তাই এই ক্ষেত্রে এলাকাবাসীর পছন্দই চূড়ান্ত। সরকারি পছন্দের সহিত এলাকাবাসীর পছন্দের গড়মিল হওয়াই তামাম খেসারৎ আর ভোগান্তি এলাকাবাসীকেই পোহাইতে হইতেছে। সকিনার বাপের এই কথার সহিত মাস্টার সাহেবও সহমত পোষণ করিয়াছেন। উন্নয়ন গ্রেফ ব্রিজ, টানেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও স্যাটেলাইটে চকচক করিলে হইবেনা। সেই উন্নয়নর রোশনি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছাইতে হইবে। মানুষের জীবনের পর্দায় উন্নয়ন প্রতিফলিত হওয়া চাই। যেইদিন দেখিব বিনা ঘুষে সেবা পাইতেছি। সুলভে চিকিৎসা পাইতেছি, সহনীয় বিল এর বিনিময়ে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস বিদ্যুৎ পাইতেছি।চাঁদাবাজ মূক্ত সমাজ, হকার মুক্ত ফুটপাত, পাতি কাউয়া মুক্ত প্রশাসন যেইদিন পাইব সেইদিনই গ্রেফ উন্নয়নর ফখর করিতে পারি। নিত্যদ্রব্য পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে হওয়া চাই। প্রফেসর আসহাব উদ্দীন আহমদ তাঁর ‘দাম শাসন দশ শাসন’ বইয়ের এক জায়গায় লিখিয়াছেন-‘মাস কয়েক আগের কথা। গলিতে হাঁকডাক শোনে আমি এক মুচিকে আমার ছেঁড়া জুতো জোড়া মেরামতের জন্য ঘরে ডেকে আনলাম। কোথায় কোথায় জুতো ছিঁড়ে গেছে এবং পেরেক উঠেছে তা তাকে ভালো করে দেখিয়ে দিলাম। কারণ যে জুতো পরে সেই ভালো জানে কোথায় জুতো বিঁধছে, The wearer knows best where the shoe pinches. হাফসোল আর ছোটখাট মেরামত বাবদ মুচি আমার কাছে চৌদ্দ টাকা চেয়ে বসল। হায়, কী দিনকালই না পড়েছে। মুচির কথায় আমার চার দশক আগের কথা মনে পড়ে গেল। চৌদ্দ টাকায় আমি পুরোদস্তুর সাহেব বনে গেছিলাম মুচির সাথে আলাপ জুড়ে দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম, নিজ জেলায় জুতো সেলাই না করে পরিবার পরিজন ফেলে এ জেলায় এ কাজ করতে এসেছে কেন ! মুচি বললঃ আমাদের দেশে মুচির কাজকে লোকে ঘৃণার চোখে দেখে। ভদ্রলোকরাই জুতো পরেন। জুতো তৈরি করে, জুতো মেরামত করে আমরা তাদের ভদ্রলোক বানাই। কিন্তু জানিনা কেন আমাদের পেশাটাকে ভদ্র পেশা মনে করা হয়না দিলখোলা মানুষ দেখে মুচিকে আমি সরকার ও দেশের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। মুচি বললঃ সাহেব, আপনি শিক্ষিত মানুষ। আমি একজন মূর্খ লোক। আমি এসব জটিল বিষয়ে কিইবা বুঝি। আপনারা শিক্ষিত লোকরাই তো এসব ভালো বোঝেন। তবে আমার কথা হল, দামশাসনই দেশশাসন। এটাই মূলকথা। জিনিসপত্রের দামের বেলায় যদি অগ্নিমূল্য, সীমাহীন মুনাফাখুরি, অরাজকতা চলে তাহলে দেশে অরাজকতা, অস্থিরতা, অশান্তি, বিশৃঙ্খলা দেখা দেবেই। লোকজনের সুখশান্তি জিনিসপত্রের ন্যায্যমূল্যের উপরই নির্ভর করে। জিনিসপত্রের ন্যায্যমূল্যই আসল কথা। বাকি সব দ্বিতীয় কথা। লোকে কাজ পাবে, ন্যায্য দামে জিনিসপত্র পাবে, ভাত কাপড়ে কষ্ট পাবেনা- সেটাই হল প্রকৃত দেশ শাসন’।প্রফেসর সাহেবের এরকম আরও অনেক রচনা আছে যাহা পড়িয়া তাজ্জব বনিয়া ভাবিতে থাকি এই ছুরতের লেখকগণ কত নিখুঁত ভাবে জীবন সেচিয়া বাস্তবতা তুলিয়া আনেন। আমিও দেশের উন্নয়ন খুশি। তবে সেই উন্নয়ন আগে যাহাদের জন্য করা হইবে তাহাদের জিন্দেগি হইতে সূচিত হোক ইহাই কাম্য।
আখেরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বেশুমার মোবারকবাদ। তিনি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের অনুমোদন দিয়া দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম জনতার দিলের আরজু পুরা করিয়াছেন। মধ্যপ্রাচ্য সহ মুসলিম দেশ গুলিতে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয়। সরকারি ছুটি থাকে ঐদিন। চট্টগ্রাম হইতে বারই রবিউল আওয়ালের বিশ্ববিখ্যাত জুলুস বাহির হয়। পতাকা, ব্যানার, নানারকম গাড়ির শোভাযাত্রা। সুললিত কণ্ঠের হামদ ও নাত এক অনাবিল অনন্য পরিবেশের সৃষ্টি হয়। যাহারা একসময় এই জুলুসকে বিদাত বিদাত করিয়া গলা ফাটাইয়া জল ঘোলা করিয়াছিল এখন তাহারাও ঘোলা জল পান করিতে নামিয়াছে। ইহাই আওলাদে রাসুলের কারামত, যিনি এই জুলুস বাংলার জমিনে প্রবর্তন করিয়াছেন।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট