মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নির্বিঘ্ন করার উদ্যোগ সরকারের

41

জনশক্তি রপ্তানি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান খাত । মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বিশেষ করে, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ওমান, বাহরাইন, কাতার, কুয়েত এখনো জনশক্তি রপ্তানির প্রধান টার্গেট। এরপর মালয়েশীয় ও ইউরোপ-আমেরিকা। তবে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানির বাজার দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। একমাত্র সৌদি আরবে শ্রমিক যাওয়ার গতি এখন পর্যন্ত ঠিক থাকলেও অন্যান্য দেশে কর্মী পাঠানোর হার দিন দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে। তবে কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী আরব আমিরাত সফরের পর বাংলাদেশি শ্রমের বাজার আবারও উন্মুক্ত হচ্ছে বলে আবাস পাওয়া গেছে। আশাকরি শিগগির এ বাজার আবারও খুলবে। এর মধ্যে সরকার বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার মালয়েশিয়া ও বাহরাইনের সাথে কর্তা বলছে। এ দেশ দুটির শ্রমবাজার খুলতে সরকার নানাভাবে তৎপরতা চালিয়ে আসছে। বিশেষ করে মালয়েশিয়ার সাথে ঢাকায় বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রæপের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকের পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালুর বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আমরা জানতে পারি। এটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য সুখবর। জানা যায়, দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গত বছর জিটুজি প্লাস বাতিল করে দেয় মাহাথির মোহাম্মদের সরকার। জিটুজি প্লাসের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কর্মী যেতে প্রথমে ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। পরে তা ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা করা হয়। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে প্রায় সব কর্মী মালয়েশিয়া যেতে তিন থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন। এর মাধ্যমে দুদেশের এজেন্টরা পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে বলে মালয়েশিয়া সরকারের অভিযোগ। জিটুজি প্লাস কর্মী পাঠানোর কাজ পেয়েছিল ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি। যারা সিন্ডিকেট হিসেবে চিহ্নিত হয়। এ অবস্থায় গত ১৪ আগস্ট মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগের বিশেষ পদ্ধতি থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেয়। এর ফলে দেশটিতে বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়। নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। একই সঙ্গে সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশি অনিয়মিত শ্রমিকদের বিরুদ্ধে নানারকম হয়রানি শুরু হয়, যা আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। মালয়েশিয়াতে আমাদের বিশাল এক শ্রম অভিবাসীরা কাজ করছেন। মালয়েশিয়া কর্মী প্রেরণে অবশ্যই আগের ভুলত্রুটি মোকাবেলা করে এই শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করতে হবে। সে ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সহনশীল ব্যয়ের মাধ্যমে কর্মী প্রেরণ করাটাই এখন বড় কর্তব্য।
সিন্ডিকেট সমস্যাটি এখানে প্রকট। কেউ কেউ জনশক্তি নিয়োগের বিষয়টি জনশক্তি রপ্তানিকারকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা বলছেন। তবে অনেকে মনে করেন, অনিয়ম-প্রতারণা বাড়বে। এই অবস্থার মধ্যেই মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির বাজার স¤প্রসারণ ও স্বচ্ছতা বাড়ানোর জন্য অভিবাসন ও উন্নয়নবিষয়ক সংসদীয় ককাসের ২৪ দফা প্রস্তাব পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে এ খাতে দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের প্রভাব থাকবে না বলে সরকারের একটি মহল মনে করছেন। সম্প্রতি বৈঠকে এই ব্যয় নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর সুপারিশগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। কোনোভাবেই সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে যাতে ব্যয় বেড়ে না যায়, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যাতে কেউ নতুন করে সিন্ডিকেট গড়ে তুলতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের। আমরা আশা করি, সরকার স্বচ্ছতার সাথে বিদেশে শ্রমবাজার নির্বিঘœ করার উদ্যোগ নিলে আমাদের রেমিটেন্স প্রবাহ আরো বাড়বে যা দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে।