মধুর আড্ডায় মুখর গ্রাম

68

চাকরি-ব্যবসাসহ নানা কর্ম ব্যস্ততার কারণে বছরের পর বছর গ্রামের বাইরে থাকেন। দুই ঈদকে উপলক্ষ করেই পরিবার-পরিজনের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করেন। অল্পদিনের মহা আনন্দের সময়টুকু স্মৃতির পাতায় ধরে রাখতে কার না ভালো লাগে। আর এই ভালো লাগাতেই এবারের ঈদে অনেকেই খুঁজে ফিরেছেন শৈশব ও কৈশর। পরিবার-পরিজন ছাড়াও দীর্ঘদিনের বন্ধু-বান্ধবদের নিয়েও মেতে ছিলেন গল্প আড্ডায়। আনন্দে উল্লাসিত হয়েছেন। বেদনায় সমব্যথীও হয়েছেন। খুনসুটিতো ছিলই। বিনোদনের মাত্রাও ছিল বেশ। ঘুরেফিরে সময় কাটিয়েছেন এদিক সেদিক। এবারের ঈদের ছুটিতে শহর ফাঁকা থাকলেও এভাবেই মধুর আড্ডায় মুখর ছিল গ্রাম।
ঈদের আমেজ আসার আগেই অনেকেই গ্রামের বাড়িতে চলে যান। গত ৭ আগস্ট থেকে গ্রামে ইট কংক্রিটের বাসিন্দাদের আনাগোনা দেখা যায়। ঈদে বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে আনন্দের উপসর্গ বের করতেও ভুল করেননি বন্ধুপ্রিয় গ্রæপগুলো। দল বেঁধে পৃথক পৃথক গ্রুপ সমুদ্র সৈকত, ইকোপার্ক, চা-বাগান, সাফারি পার্ক, পাহাড়, ঝর্নায় মেতে ছিলেন ব্যাপক বিনোদনে।
কোন গ্রুপের আয়োজনে ছিল স্মৃতিচারণ, সঙ্গীত পরিবেশন। এবাড়ি ওবাড়ি দাওয়াতে মশগুল ছিলেন সবাই। অনেকেই বাড়তি আনন্দ পেতে ঘুরে বেড়িয়েছেন বাপ-দাদার পৈত্রিক ক্ষেতখামারে। পুকুরে গোসল করা, মাছ ধরা এবারের ঈদের আনন্দের মাত্রা বাড়িয়েছে। যে বন্ধু ছুটি পায়নি তাকেও মিস করা হয়েছে। মুঠোফোনেই ব্যস্ততা ছিল বেশি। পাড়া মহল্লার অলিগলিতে বসে একজোটে কেউ মেতেছিল মুঠোফোনের আলাপচারিতায়। আবার কেউ মুঠোফোনে ফেসবুকিং, গেম খেলেই সময় পার করেছেন। বৃষ্টির মৃদু চোখ রাঙানিতো ছিলই। শহরে কর্মব্যস্ত মানুষগুলো যান্ত্রিক জীবনের দূষিত বাতাস থেকে বাঁচতে যেন তিনদিনেই স্বস্তি খুঁজেছেন। গ্রামের সবুজ শ্যামল মেঠোপথে দলবেঁধে নির্মল বাতাস উপভোগ করেছেন। এরমধ্যেই বেজে উঠেছে বিদায়ের করুণ সুর। কর্মজীবী মানুষগুলো ফিরে আসে কোলাহল ঘেরা শহরে। যেখানে ঈদের ছুটিতে ফাঁকা থাকা নগরটি আবারো মুখর হবে কোলাহলে।
ঈদের দিন চকরিয়া সাফারি পার্কে দেখা হয় লোহাগাড়া থেকে বেড়াতে যাওয়া চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ব্যাচ। যারা এক রঙের পোশাক গায়ে জমিয়ে আড্ডা দিয়েছে। ঘুরে বেড়িয়েছে এদিক-সেদিক। প্রাণ খুলে হেসেছে, গেয়েছে গলা ছেড়ে গান।
তাদেরই একজন সাগর দাশ। তিনি বলেন, মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব হলেও ঈদকে কেন্দ্র করে আমরাও ছুটি পাই। এই সময়টাতে গ্রামে সকল বন্ধুদের একসাথে পাওয়া যায়। তাই আমরা ঈদে আনন্দে মাতোয়ারা হই। হিন্দু-মুসলিম মিলেমিশে ঘুরেফিরে বন্ধের দিনগুলো উপভোগ করি। আর সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হই।’
ঈদের দ্বিতীয় দিন বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতে দেখা হয় আরও একটি গ্রæপ। যারা এক স্কুলে লেখাপড়া না করলেও বন্ধুত্বের সম্পর্কে সবাই একই কাতারে সামিল হয়েছেন। আনন্দে মাতোয়ারা এ গ্রæপটিতে তরুণ যুবকদের মধ্যে বয়সের তারতম্য থাকলেও আলোচনায় ছিল বন্ধুত্বের মনোভাব। ফুটবল খেলে, সৈকত দাপিয়ে বিকালটা পাড়ি দিয়েছেন তারা।
এ গ্রুপের একজন শাহেদ আজগর বলে উঠলেন, ‘আমরা বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে মিলিত হয়েছি। একটি ফেসবুকিং গ্রুপের সদস্য সবাই। আমাদের মধ্যে আত্মার টান আছে। সমুদ্র সৈকতে আগে আসলেও ঈদের আসার মধ্যে পার্থক্য আছে। মুক্ত বাতাসে ঘুরে মধুর আড্ডায় মেতে ওঠার মজাই আলাদা। যা বছর ঘুরে পাওয়া যায় দুই ঈদে দুইবার।’