মদের চাহিদা কমছে, ভাঙছে আঙুর ক্ষেত

10

অস্ট্রেলিয়ায় আঙুরের অধিক ফলনের কারণে এর দাম পড়ে গেছে। বিশ্বজুড়ে কমছে মদের চাহিদাও। এতে হুমকিতে পড়েছে আঙুর চাষী ও মদ প্রস্তুতকারকদের জীবিকা। ফলে উৎপাদনের রাশ টেনে ধরতে চাষীরা ভেঙে ফেলছেন আঙুরক্ষেত।
বিশ্বজুড়ে মদের চাহিদা কমতে থাকায় অস্ট্রেলিয়া বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষত, সস্তা লাল মদের (রেড ওয়াইন) চাহিদা দ্রুত কমায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। কারণ, অস্ট্রেলিয়ায় লাল মদই বেশি তৈরি হয়।
সাম্প্রতিক কয়েক বছরে চীনের বাজারের ওপরই অস্ট্রেলিয়ার মদ সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের কারণে চীন ২০২০ সালে মদ আমদানি বন্ধ করায় বিপত্তি দেখা দিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ওয়াইন রপ্তানিকারক দেশ। ২০২৩ সালের মধ্যভাগে দেশটিতে ২০০ কোটি লিটারের বেশি মদ ছিল। অর্থাৎ, প্রায় দুই বছরের উৎপাদন মজুদ ছিল। এ পরিস্থিতিতে কিছু মদ নষ্ট হচ্ছে। অনেক মদ উৎপাদকই যে কোনো দামে বাজারে মদ ছেড়ে দিতে উদ্যত হচ্ছেন।
অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিফিথ শহরে চতুর্থ প্রজন্মের আঙুর উৎপাদক জেমস ক্রেমাসসো খননযন্ত্র দিয়ে আঙুরক্ষেত ভাঙতে ভাঙতে বলেন, ‘এভাবে বেশি উৎপাদন করে আর কতদিন লোকসান দেওয়া যায়’।
অস্ট্রেলিয়ায় আঙুরের দুই-তৃতীয়াংশ উৎপাদিত হয় এই গ্রিফিথ শহরের মতো জায়গায়। ১৯৫০-এর দশকে ইতালির অভিবাসীরা আঙুর চাষের কৌশল সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন। খবর বিডিনিউজের
ট্রেজারি ওয়াইনস ও কার্লাইল গ্রুপের মতো মদ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন দামী মদ উৎপাদনে জোর দিয়েছেন। কারণ, দামী মদই বিক্রি হচ্ছে ভাল। ফলে সস্তা লাল মদের আঙুর জোগানদাতা চাষিরা বিপত্তিতে পড়েছেন। গাছে শুকিয়ে যাওয়া আঙুর দিনের পর দিন বাড়ছেই।
মনে হচ্ছে একটি যুগের অবসান ঘটছে- বলেছেন, তৃতীয়-প্রজন্মের আঙুরক্ষেত মালিক ও মদ প্রস্তুতকারক ‘ক্যালাব্রিয়া ওয়াইনের’ অ্যান্ড্রু ক্যালাব্রিয়া।
অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেতে স্তুপাকারে পড়ে থাকা বিপুল পরিমাণ আঙুর তুলে পরিস্কার করাটাও এখন কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রিফিথ অঞ্চলে প্রায় ১১ লাখ আঙুরগাছের অবশেষ রয়েছে। যতদূর চোখ যায় স্তুপাকারে পড়ে থাকতে দেখা যাবে এই অবশেষ।
সবচেয়ে বেশি দাম কমেছে লাল মদের। ফলে এই পণ্যটির অন্যতম কাঁচামাল আঙুরের দাম ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপ ‘ওয়াইন অস্ট্রেলিয়ার’ হিসাবমতে, গতবছর গড়ে এক টনে ৩০৪ অস্ট্রেলীয় ডলার কমে গেছে। কয়েক দশকের মধ্যে এই দাম সর্বনিম্ন এবং ২০২০ সালের চেয়ে ৬৫৯ অস্ট্রেলীয় ডলার কম।
অস্ট্রেলিয়ার সরকার পরিস্থিতির গুরুত্ব স্বীকার করেছে এবং এই খাতকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে চাষীরা মনে করছেন, এ বিষয়ে সরকারের আরও অনেক করণীয় আছে।
বাজারে ভরসাম্য ফেরাতে এবং দাম বাড়াতে এখন গ্রিফিথের মতো এলাকাগুলোতে এক-চতুর্থাংশ আঙুরক্ষেত ধ্বংস করা বাঞ্ছনীয়- বলেছেন, একটি কৃষক গোষ্ঠীর প্রধান জেরেমি ক্যাস।
এ পদক্ষেপ নেওয়া হলে ১২ হাজার হেক্টর এলাকাজুড়ে ধ্বংস হবে ২ কোটিরও বেশি আঙুরক্ষেত; যা অস্ট্রেলিয়ার মোট আঙুরক্ষেতের প্রায় ৮ শতাংশ। ওয়াইন অস্ট্রেলিয়ার হিসাব অনুযায়ী এই পরিসংখ্যান দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
অন্যান্য অঞ্চলের আঙুরচাষী এবং মদ প্রস্তুতকারকরাও আঙুরক্ষেত নষ্ট করছেন। তবে অস্ট্রেলিয়ার কোনো কোনো চাষী বলছেন, অস্ট্রেলিয়ার অর্ধেক আঙুর তুলে ফেলা হলেও সংকটের সমাধান নাও হতে পারে। অনেক চাষী এখনও বাজার আবার ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় আঙুরক্ষেত নষ্ট করতে চাইছেন না।
বর্তমান বিশ্বে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের অভ্যাস পরিবর্তনের ফলে তারা কম অ্যালকোহল পান করছে বা পান করলেও দামী ওয়াইন পান করছে। সেকারণে অস্ট্রেলিয়ার সস্তা রেড ওয়াইনের বাজার ধসে গেছে।
কেবল অস্ট্রেলিয়াই নয়; চিলি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশও আঙুরের বাড়তি উৎপাদনে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। এই দেশগুলোও হাজার হাজার আঙুরক্ষেত ধ্বংস করছে।