মডেল মসজিদ ইসলামি মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে

11

বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ব্যক্তি জীবনে একজন উদার ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ ছিলেন- এতে কারো কিঞ্চিত মাত্র সন্দেহ নেই। তাই বলে তিনি কখনো নিজের ধর্মকে ভুলে যান নি, ধর্মীয় রীতি-নীতি ও বিধি-বিধানের প্রতিপালনে তিনি ছিলেন খুবই আন্তরিক ও যতœশীল। বঙ্গবন্ধুর বংশীয়ধারা ও পারিবারিক শিক্ষা দুটিতে ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক ও নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি উদার-মননশীল, অসাম্প্রদায়িক চিন্তার দারুন মিল লক্ষ করা যায়। বঙ্গবন্ধু গর্বের সাথে বলতেন, ‘আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান’। স্বাধীনতার পর মাদ্রাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, ঈদে মিলাদুন্নবী, শবে বরাত, শবে কদরসহ ধর্মীয় দিবসগুলোতে জাতীয় ও ঐচ্ছিক ছুটি প্রদান, টঙ্গীতে তাবলীগ জামাতের জন্য ইজতেমার মাঠ বরাদ্দসহ ইসলামের প্রচার ও ইসলামি সঠিক বিধিবিধান প্রতিপালনে মুসলমানদের উদ্বুদ্ধ করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তবে পবিত্র ধর্ম ইসলামের নামে যে কোন সাম্প্রদায়িক উস্কানি, প্রতারণামুরক কর্মকাÐ, ইসলামের নাম ব্যবহার করে রাজনৈতিক ধোকাবাজি, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন আপোষহীন। তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও একই চরিত্রের সমাবেশ দৃশ্যমান। ইসলাম ও মানুষের প্রতি তাঁর অগাধ বিশ্বাস, বাঙালি জাতিস্বত্তাকে উর্ধ্বমুখী করতে তাঁর অব্যাহত প্রয়াসগুলো আজ বিশ্বসভায় সমাদৃত। সম্প্রতি ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে গণমূখী করতে ব্যয়বহুল বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নসহ দেশব্যাপী মডেল মসজিদ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ শুধু বাংলাদেশে নয়, মুসলিম বিশ্বেও বাংলাদেশ প্রশংসা অর্জন করেছে। শুক্রবার দৈনিক পূর্বদেশসহ সকল সহযোগী গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদসূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার সারা দেশে ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিক পর্যায়ে চট্টগ্রামের ৪টিসহ ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধনের সময় দেওয়া ভাষণে ইসলামের প্রকৃত মর্মবাণী প্রচারে এই মসজিদগুলো ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ইসলামের মর্মবাণী যেন এ দেশের মানুষ জানতে পারে, বুঝতে পারে। আমরা বাংলাদেশের মানুষ ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি, স্ব স্ব ধর্ম যত্নসহকারে লালন-পালন করি এবং সংরক্ষণ করি। ইসলাম আমাদের সেই মানবতার শিক্ষাই দিয়েছে।’ শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশে সঠিক ইসলামি মূল্যবোধের চর্চা ও উন্নয়ন এবং ইসলামি সংস্কৃতি বিকাশের উদ্দেশ্যেই আমরা প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ আমরা জেনেছি, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সরকার সারা দেশে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। বিশ্বে এ ধরনের প্রকল্প নজিরবিহীন। পদ্মা বহুমুখী সেতুর পর নিজস্ব অর্থায়নে এটা সরকারের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রকল্প। ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এই যৌথ উদ্যোগ বাস্তবায়িত করেছে সরকারের গণপূর্ত অধিদপ্তর। চারতলাবিশিষ্ট প্রতিটি মসজিদে একসঙ্গে ১ হাজার ২০০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। অন্যদিকে, তিনতলাবিশিষ্ট মডেল মসজিদগুলোয় একত্রে ৯০০ জন মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে।
প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. নজিবর রহমান মডেল মসজিদ প্রকল্প নিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, মডেল মসজিদগুলো শুধু নামাজ পড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এখানে ইসলামী সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি জ্ঞান অর্জন ও গবেষণা সুযোগ থাকবে, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। লাইব্রেরী সুবিধার আওতায় প্রতিদিন ৩৪ হাজার পাঠক এক সঙ্গে কোরআন ও ইসলামিক বই পড়তে পারবেন। ইসলামিক বিষয়ে গবেষণার সুযোগ থাকবে ৬ হাজার ৮০০ জনের। ৫৬ হাজার মুসল্লি সব সময় দোয়া, মোনাজাতসহ তসবিহ পড়তে পারবেন। মসজিদগুলো থেকে প্রতি বছর ১৪ হাজার হাফেজ তৈরির ব্যবস্থা থাকবে। আরও থাকবে ইসলামিক নানা বিষয়সহ প্রতিবছর ১ লাখ ৬৮ হাজার শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা। ২ হাজার ২৪০ জন দেশি-বিদেশি অতিথির আবাসন ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হবে প্রকল্পের আওতায়। কেন্দ্রগুলোতে পবিত্র হজ পালনের জন্য ডিজিটাল নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকবে। ‘বিশুদ্ধ ইসলাম প্রচারের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাÐের কেন্দ্রে পরিণত হবে এই মসজিদগুলো। পরিচালনা করবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।’ তিনি আরো জানান, ‘বিশ্বে কোনো মুসলিম শাসকের একসঙ্গে ৫৬০টি মসজিদ নির্মাণ এই প্রথম।’ আমরা এ ধরণের ধর্মীয় স্থাপনা ও কমপ্লেক্স নির্মাণকে স্বাগত জানায়। মানুষকে নৈতিক মুল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে ধর্মীয় শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিধি বিধান পালনে আন্তরিক হতে হবে। এজন্য সরকারের মডেল মসজিদ প্রকল্প প্রশংসার দাবি রাখে। তবে এ প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের সতর্কতার সাথে জনবল নিয়োগ দিতে হবে। কোন স্বাধীনতা বিরোধী উগ্রবাদী শক্তি যেন এ প্রকল্পে নিয়োগ না পায়, সেই দিকে নজর দিতে হবে। অন্যথায় সরকারের আসল লক্ষ্য অপূর্ণতায় থেকে যাবে।