ভয়াবহ বন্যা : পুনর্বাসন ব্যবস্থায় আমাদের করণীয়

26

 

‘মানুষের কৃত কর্মের দরুন জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে তাদেরকে তাদের কোন কোন কর্মের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে ওরা ফিরে আসে’। -আল কোরআন সূরা রুম, আয়াত- ৪১। পবিত্র কোরআনের এ আয়াতের আলোকে মানুষের কৃতকর্মের দরুন সৃষ্টির ধারায় আল্লাহর গজব নাজিল হয়। আল্লাহর গজব পূর্বেও আদ সামূদ ও লুত সহ তৎকালীন বিশ্বের উন্নত জাতি ধ্বংস হয়েছিল। তেমনি আল্লাহর গজব স্বরুপ এই উপ মহাদেশে বিভিন্ন সময়ে নেমে আসে ভয়াবহ বন্যা, প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, ভূমিকম্প ইত্যাদি। বায়ু আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহরই হুকুমে তা প্রবাহিত হয়। পানি আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহরই হুকুমে তা বর্ষিত হয়। বায়ু ও পানি ছাড়া যেমন মানুষের জীবন অচল তেমনি এই পানি-বায়ুই হতে পারে তার জীবননাশেরও কারণ। আল্লাহর হুকুমের কাছে মানুষ কত অসহায়।
আমরা জানি পানি প্রবাহের ধরণ-প্রক্রিয়া, জলবায়ুর কারণ ও ভৌগলিক অবস্থানগত কাঠামোর ফলে বাংলাদেশ প্রাকৃতিকভাবেই বন্যাপ্রবণ। বাৎসরিক বন্যা হলেও জুন থেকে সেপ্টেম্বরের এই সময়ে বাংলাদেশে বন্যা মারাত্মক রূপ ধারণ করে। তেমনি বর্তমান বাংলাদেশের উত্তর পূর্বে সিলেট সুনামগঞ্জ অঞ্চলে বন্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। এই দুই জেলায় প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে প্রশাসনের হিসাবে বলা হচ্ছে।বন্যার পানিতে তলিয়ে সুনামগঞ্জ শহর পুরো দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে বিভিন্ন নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠী বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দারিদ্র্যপীড়িত মানুষ সবসময় নানাবিধ সমস্যা ও কষ্টের সম্মুখিন হয়। বিগত অর্ধশতাব্দীতে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ বন্যা সংঘটিত হয়েছিল। এর মধ্যে ১৯৫৪, ১৯৬৩, ১৯৭৪, ১৯৭৮, ১৯৮৪, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৪, ২০০৭ সালের বন্যা অন্যতম। ১৯৯৮ সালের বন্যা ছিল সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এবং দেশের অধিকাংশ জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বন্যার পানিতে বংশবিস্তার করছে হাজার হাজার রোগ-জীবাণু। বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানুষ যখন এই দূষিত পানি পান করছে কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করছে, তখন তারা আক্রান্ত হয়ে পড়ছে নানা ধরনের অসুখ-বিসুখে। ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, কৃমির সংক্রমণ দেখা দেয় মহামারি হিসেবে। ডায়রিয়ার কারণে মৃত্যু ঘটে অনেকের। বন্যায় প্রথমেই পানির বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। পানিকে বিশুদ্ধ করে খাওয়া ও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করতে পারলে এসব রোগের হাত থেকে বাঁচা সম্ভব হবে। বন্যার ফলে শুধু জলদূষণই না, কৃষক সমাজ আর্থিকভাবে যথেষ্ট ক্ষতির মুখে পড়েছে। আমনে তাদের জন্য সরকার বিশেষ সহায়তা না দিলে এই ধানের মৌসুমে কৃষকের পক্ষে উৎপাদন অব্যাহত রাখা কঠিন হবে। আর পরবর্তী বোরোতে তারা ধান উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে যা আমাদের খাদ্য নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলবে। সেদিকেও সতর্ক থাকতে হবে। তাছাড়া বন্যার পূর্বাভাস ও আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা আরো দ্রæত, আধুনিক ও শক্তিশালী করতে হবে। এতে স্থানীয় সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আরো বড় ধরনের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন পর্যায়ে জরুরি ভিত্তিতে বন্যা মোকাবেলায় এগিয়ে আসাটাকে গুরুত্ব দিতে হবে। জরুরি তহবিল গঠনে সংশ্লিষ্ট খাতে এনজিওগুলোকে সম্পৃক্ত করা। একইসাথে সরকারের দিক থেকে নির্ধারিত কাজে তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চত করা।
অপরদিকে কর্তৃপক্ষকে বন্যা মোকাবেলার ও পুনর্বাসনের সরঞ্জমাদি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্টোর, টিন, চট, বাঁশ, কাঠ, তাবু তৈরির জিনিসপত্র, লাইফ জ্যাকেট, পানি শোধনের ওষুধ বা অন্যান্য প্রক্রিয়া, জরুরি চিকিৎসা-ওষুধ, তরল ও শুকনো খাবার, খাবার পানি, পোশাক-কাপড়, সাময়িক লেট্রিন স্থাপন, ও পয়ঃনিষ্কাসন ব্যবস্থা, কেরোসিন তেল, হারিক্যান, চেরাগ, হ্যাজাক লাইট, চার্জ লাইট, টিউবওয়েল স্থাপন, পাইপ ও পরিবহনসহ ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যথাযথ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। সুতরাং দেশে এমন অনেক বিত্তবান ব্যক্তি আছেন, যারা ইচ্ছে করলেই শত শত মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে পারেন। কাজেই সবাই সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসলে লক্ষ লক্ষ দুর্গত মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘব হতে পারে।
‘জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। ইহার ফলে তাদেরকে তাদের কোন কোন কর্মের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে ওরা ফিরে আসে’। -আল কোরআন সূরা রুম, আয়াত- ৪১।
পবিত্র কোরআনের এ আয়াতের আলোকে মানুষের কৃতকর্মের দরুন সৃষ্টির ধারায় আল্লাহর গজব নাজিল হয়। আল্লাহর গজব পূর্বেও আদ সামূদ ও লুত সহ তৎকালীন বিশ্বের উন্নত জাতি ধ্বংস হয়েছিল। তেমনি আল্লাহর গজব স্বরুপ এই উপ মহাদেশে বিভিন্ন সময়ে নেমে আসে ভয়াবহ বন্যা, প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, ভূমিকম্প ইত্যাদি।
বায়ু আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহরই হুকুমে তা প্রবাহিত হয়। পানি আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহরই হুকুমে তা বর্ষিত হয়। বায়ু ও পানি ছাড়া যেমন মানুষের জীবন অচল তেমনি এই পানি-বায়ুই হতে পারে তার জীবননাশেরও কারণ। আল্লাহর হুকুমের কাছে মানুষ কত অসহায়। আমরা জানি পানি প্রবাহের ধরণ-প্রক্রিয়া, জলবায়ুর কারণ ও ভৌগলিক অবস্থানগত কাঠামোর ফলে বাংলাদেশ প্রাকৃতিকভাবেই বন্যাপ্রবণ। বাৎসরিক বন্যা হলেও জুন থেকে সেপ্টেম্বরের এই সময়ে বাংলাদেশে বন্যা মারাত্মক রূপ ধারণ করে। তেমনি বর্তমান বাংলাদেশের উত্তর পূর্বে সিলেট সুনামগঞ্জ অঞ্চলে বন্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। এই দুই জেলায় প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রশাসনের হিসাবে বলা হচ্ছে।বন্যার পানিতে তলিয়ে সুনামগঞ্জ শহর পুরো দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠী বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দারিদ্র্যপীড়িত মানুষ সবসময় নানাবিধ সমস্যা ও কষ্টের সম্মুখিন হয়। বিগত অর্ধশতাব্দীতে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ বন্যা সংঘটিত হয়েছিল। এর মধ্যে ১৯৫৪, ১৯৬৩, ১৯৭৪, ১৯৭৮, ১৯৮৪, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৪, ২০০৭ সালের বন্যা অন্যতম। ১৯৯৮ সালের বন্যা ছিল সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এবং দেশের অধিকাংশ জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বন্যার পানিতে বংশবিস্তার করছে হাজার হাজার রোগ-জীবাণু। বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানুষ যখন এই দূষিত পানি পান করছে কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করছে, তখন তারা আক্রান্ত হয়ে পড়ছে নানা ধরনের অসুখ-বিসুখে। ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, কৃমির সংক্রমণ দেখা দেয় মহামারি হিসেবে। ডায়রিয়ার কারণে মৃত্যু ঘটে অনেকের। বন্যায় প্রথমেই পানির বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। পানিকে বিশুদ্ধ করে খাওয়া ও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করতে পারলে এসব রোগের হাত থেকে বাঁচা সম্ভব হবে। বন্যার ফলে শুধু জলদূষণই না, কৃষক সমাজ আর্থিকভাবে যথেষ্ট ক্ষতির মুখে পড়েছে। আমনে তাদের জন্য সরকার বিশেষ সহায়তা না দিলে এই ধানের মৌসুমে কৃষকের পক্ষে উৎপাদন অব্যাহত রাখা কঠিন হবে। আর পরবর্তী বোরোতে তারা ধান উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে যা আমাদের খাদ্য নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলবে। সেদিকেও সতর্ক থাকতে হবে।
তাছাড়া বন্যার পূর্বাভাস ও আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা আরো দ্রæত, আধুনিক ও শক্তিশালী করতে হবে। এতে স্থানীয় সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আরো বড় ধরনের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন পর্যায়ে জরুরি ভিত্তিতে বন্যা মোকাবেলায় এগিয়ে আসাটাকে গুরুত্ব দিতে হবে। জরুরি তহবিল গঠনে সংশ্লিষ্ট খাতে এনজিওগুলোকে সম্পৃক্ত করা। একইসাথে সরকারের দিক থেকে নির্ধারিত কাজে তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চত করা।
অপরদিকে কর্তৃপক্ষকে বন্যা মোকাবেলার ও পুনর্বাসনের সরঞ্জমাদি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্টোর, টিন, চট, বাঁশ, কাঠ, তাবু তৈরির জিনিসপত্র, লাইফ জ্যাকেট, পানি শোধনের ওষুধ বা অন্যান্য প্রক্রিয়া, জরুরি চিকিৎসা-ওষুধ, তরল ও শুকনো খাবার, খাবার পানি, পোশাক-কাপড়, সাময়িক লেট্রিন স্থাপন ও পয়ঃনিষ্কাসন ব্যবস্থা, কেরোসিন তেল, হারিক্যান, চেরাগ, হ্যাজাক লাইট, চার্জ লাইট, টিউবওয়েল স্থাপন, পাইপ ও পরিবহনসহ ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যথাযথ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। সুতরাং দেশে এমন অনেক বিত্তবান ব্যক্তি আছেন, যারা ইচ্ছে করলেই শত শত মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে পারেন। কাজেই সবাই সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসলে লক্ষ লক্ষ দুর্গত মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘব হতে পারে।
লেখক: প্রাবন্ধিক