ভোট নিয়ে অতীতের অভিযোগের পুনরাবৃত্তি চায় না সুজন

17

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে যেন অতীতের নেতিবাচক অনুষঙ্গ বা অভিযোগগুলোর পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য সতর্ক হওয়ার আহব্বান জানিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। গতকাল রবিবার চট্টগ্রাম বিকালে প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে সুজন চসিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে সেগুলো সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্যে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আকতার কবির চৌধুরী বলেন, মনোনয়ন ঘোষণার পর মেয়র পদে ১১ জন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৪৪১ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদের জন্য ৭৯ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে মেয়র পদে মোট ৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। এছাড়াও ৪১টি ওয়ার্ডে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২০৮ জন ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৫৭ জন অথ্যাৎ মোট ২৭৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। যাচাইবাছাই শেষে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে ৭ জন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১৭৩ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫৮ জনসহ মোট ২৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনে সকল পদেই ২০১৫ সালের তুলনায় প্রার্থী সংখ্যা হ্রস পেয়েছে। ২০১৫ সালে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে ১২ জন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২১৪ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৬২ জনসহ মোট ২৮৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও এবার মোট প্রার্থীর সংখ্যা ২৩৮ জন (স্থগিত ওয়ার্ডের প্রার্থীসহ)।
তিনি বলেন, বিভিন্ন অনিয়মের কারণে নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থাও অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই কোনো কোনো প্রার্থী বাধাদানের অভিযোগ করে আসছেন। ইতোমধ্যে নির্বাচনের মাঠ আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। হামলা-মামলার ঘটনা এই উত্তাপকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। গত কয়েকদিনে হামলা, ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চারটি মামলা হয়েছে। ১৪ জন গ্রেপ্তারও হয়েছে ইতোমধ্যেই। এসব ঘটনায় বিএনপির কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রতিদ্ব›দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। ঘটছে প্রাণহানির ঘটনাও। এমতাবস্থায় নির্বাচনের দিন পর্যন্ত সকল প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী মাঠে থাকতে পারবে কিনা, ভোটারা কেন্দ্রমুখী হবে কিনা, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ-সংশয় বাড়ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সুজনের সভাপতি প্রফেসর সিকান্দর খান।
নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী প্রার্থীগণ মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামা আকারে সাত ধরনের তথ্য রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের দাখিল করেন। সুজন এসব তথ্যসমূহ বিশ্লেষণ করে গণমাধ্যমের সহযোগিতায় জনগণের কাছে তুলে ধরে, যাতে ভোটাররা প্রার্থীদের সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন। সুজনের বিশ্লেষণ করা তথ্যগুলো হলো,
শিক্ষাগত যোগ্যতা: সাতজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৪ জনই উচ্চশিক্ষিত। ১৭৩ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে অধিকাংশ প্রার্থীর (৯২ জন) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি ও তার নিচে। এইচএসসির নিচ আছে ৬৪ জন, দুইজন শিক্ষাগত যোগ্যতার কলাম পূরণ করেননি। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থীর সংখ্যা ৪৭ জন। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীর ৫৮ জনের মধ্যে ৩২ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসি ও তার নিচে, ২২ জন এইচএসসির নিচে,স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থীর সংখ্যা মাত্র ১৮ জন।
প্রার্থী ও নির্ভরশীলদের বাৎসরিক আয় : সাতজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে বছরে ৫ লক্ষ টাকার নিচে আয় করেন ৪ জন। ৫ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা আয় করেন ৩ জন। সাতজন প্রার্থীর মধ্যে বছরে সর্বোচ্চ ২০ লক্ষ ৭৪ হাজার ৬২৫ টাকা আয় করেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। ১৭৩ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর অধিকাংশই বছরে ৫ লক্ষ টাকার কম আয় করেন। নির্ধারিত ছকে আয় উল্লেখ না করা ৬ জন সহ ৫ লক্ষ টাকার কম আয় করা কাউন্সিলর প্রার্থীর সংখ্যা ৯৬ জন। বছরে কোটি টাকার উপরে আয় করেন ২ জন। ৫৮ জন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ২৯ জনের আয় বছরে ৫ লক্ষ টাকার নিচে। মোট ২৩৮ জন প্রার্থীর মধ্যে ১২৩ জনের আয় ৫ লক্ষ টাকা বা তার কম। নির্ধারিত ছকে আয় উল্লেখ না করা ২৪ জন সহ এই সংখ্যা ১৪৭। স্বল্পসময়ে হলেও বিগত নর্বিাচনের তুলনায় অধিকাংশ প্রার্থীর আয় হ্রাস পেয়েছে।
প্রার্থী ও নির্ভরশীলদের সম্পদ : সাতজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৪ জন কোটি টাকার অধিক সম্পদের মালিক। চারজনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ কোটি ৫০ লক্ষ ২৫ হাজার ২২৭ টাকা মূল্যমানের সম্পদের মালিক বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। ১৭৩ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ১১০ জনের সম্পদ ২৫ লক্ষ টাকার কম। সম্পদের কলাম পূরণ না করা ৪ জনসহ এই সংখ্যা ১১৪ জন। কোটিপতি ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর সংখ্যা ২১ জন। ৫ কোটি টাকার উপরে সম্পদ রয়েছে ৫ জনের। ৫৮ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৪৪ জনের আয় বছরে ২৫ লক্ষ টাকার কম। সম্পদের কলাম পূরণ না করা ৪ জনসহ সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৮ জনে। একজন প্রার্থীর কোটি টাকার অধিক সম্পদ রয়েছে।
ঋণ : সাতজন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে শুধুমাত্র বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন ঋণগ্রহীতা। তার ঋণের পরিমাণ ৩ কোটি ৩৪ লক্ষ ৫২ হাজার ৪৪৫ টাকা। ১৭৩ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ঋণগ্রহীতা মাত্র ২০ জন। এরমধ্যে কোটি টাকার অধিক ঋণ গ্রহণ করেছেন ৭ জন। ৫ কোটি টাকার অধিক ঋণ গ্রহণ করেছেন ১জন। ৫৮ সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ঋণগ্রহীতা মাত্র ২জন।