ভোটের দিন যান চলাচল ও অফিস খোলা রাখার চিন্তা

84

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিন সীমিত আকারে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যান্য অফিস খোলা রাখার পক্ষে মতামত চেয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম। গতকাল রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আয়োজিত প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী-রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহায়ক কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়ে তিনি এমন পরিকল্পনার কথা জানান।
নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আইনানুগ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে কি করতে হবে তা শুনতে এখানে এসেছি। একটা সময় ছিল মানুষ যে জায়গার ভোটার সেখানেই থাকতেন। বাসা থেকে হাঁটতে হাঁটতে ভোট দিয়ে চলে আসতেন। এখানের বাস্তবতা ভিন্ন। তখন আমরা যানবাহন বন্ধ করে দিয়ে নির্বাচন করতে পেরেছি। বর্তমানে পুরোপুরি যান চলাচল বন্ধ করে যদি নির্বাচন করতে যাই তাহলে অনেক মানুষকে ভোটদান থেকে পরোক্ষভাবে বিরত রাখার চেষ্টা করছি বলে মনে হবে। যে কারণে আমরা চাইছি সীমিতসংখ্যক হলেও যান চলাচল চালু রাখতে। যাতে কেউ ভোট দান থেকে বিরত না থাকে। কিন্তু এটা করতে গিয়ে একেবারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত দেয়া উচিত হবে না। সবার মতামত নিতে হবে।
ভোটের দিন অফিস খোলা রাখার পরিকল্পনাও ইসির আছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্কুল-কলেজ যেহেতু কেন্দ্র হিসেবে রাখা হবে সেটা খোলা রাখার সুযোগ নেই। নির্বাচনের দিন আমরাই এসব ব্যবহার করবো। আমরা ভাবছি, অফিস খোলা রেখে নির্বাচন করা যায় কিনা। যদি অফিস খোলা রাখা হয় এক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হবে কিনা। সবার কাছ থেকে মতামত নিয়ে এগিয়ে যাবো। ঝামেলা থাকলে সেটি থেকে সরে আসবো।
সুষ্ঠু নির্বাচনের শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে একটি ওয়ার্ডে দুইজন প্রার্থী মুখোমুখি হয়েছে। অথচ এখনো পোস্টার লাগানো হয়নি, প্রতীক বরাদ্দ হয়নি। তারা শক্তি প্রয়োগ করে নিজেদের ক্ষমতা দেখিয়েছেন। আমি সত্যি সত্যি শঙ্কিত। প্রতীক বরাদ্দের পর এ অবস্থার আরো অবনতি ঘটলে বড় সমস্যা হবে। দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে আসলে এ ধরনের কার্যক্রম চালানো সম্ভব কিনা ভেবে দেখতে হবে। আমি কোনো অবস্থাতেই এ ধরনের পরিস্থিতি মানবো না। নির্বাচন কমিশনও পরিস্থিতির অবনতি ঘটুক চায় না। আমি শতভাগ এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশ দিচ্ছি। এখানে কোনো রকম ব্যত্যয় দেখতে চাই না।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভোটারদের উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশনার বলেন, সবাইকে ভিজিবল দেখতে চাই। কোনো কার্পণ্য করবেন না। আপনারা শক্তির যথাযথ প্রয়োগ করবেন। কেউ যদি পোস্টিং ঝামেলা করবে মনে করেন কথা দিচ্ছি আমরা সিরিয়াস আছি। পাশে থাকবো। ভোটারদের আশ্বাস দিতে চাই তারা একেবারে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার মধ্যে ভোট দিতে পারবে। এজন্য আমরা আগেও ভোট গ্রহণে যেমন পদক্ষেপ নিয়েছি এখানে তার চেয়ে বেশি কোনো পদক্ষেপ নিতে হবে কিনা ভেবে দেখছি। স্থানীয় প্রশাসন যেটাকে ভালো বলবে সেটি মেনেই কাজ করা হবে।
পোস্টারের ভয়াবহ অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, লেমেনেটিং পোস্টার কেউ না ছাপালেও ঢাকায় যে পরিমাণ পোস্টার ছাপানো হয়েছে সেরকম হলে চট্টগ্রামে ভয়াবহ অবস্থা হবে। এসব পোস্টার সব ড্রেনে যাবে। বর্ষাকালে চট্টগ্রামকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। এ অবস্থার আরো অবনতি ঘটুক তা আমরা চাই না। আমাদের পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে হবে। পোস্টার ছাপানো কিভাবে সীমিত করা যায়, কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা যায় কিনা, নির্বাচনের পরপর খুব দ্রুত পোস্টার সরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম গণতন্ত্রেও জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান উপাদান। নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হই। অনেক সমালোচনা, মন্তব্য শুনতে হয় কমিশনকে। আমি এটুক বলতে পারি এই নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনে বিন্দুমাত্র ক্রুটি করে না। সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য আইনানুগ নির্বাচন হবে। আমরা বাস করি বাংলাদেশে। গণতন্ত্র ও নির্বাচনের বিষয় যখন আসে সুইজারল্যান্ডের সাথে আমাদের তুলনা করা হয়। ৭০০ বছর আগের গণতন্ত্রের দেশ ব্রিটেনের সঙ্গে তুলনা করা হয়। এসব আমরা মেনে নিয়েছি। যত তুলোধুনাই হোক আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমাদের একটাই উদ্দেশ্য আমরা গ্রহণযোগ্য আইনানুগ নির্বাচন করতে চাই।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান, বিজিবি পরিচালক লে. কর্নেল মো. মুনীর হাসান, র‌্যাব অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আমেনা বেগম, আনসার ভিডিপি সহকারী জেলা কমান্ডেন্ট মো. আনোয়ার হোসেন, ডিজিএফআই উপ-সহকারী পরিচালক মো. আতিকুর রহমান খন্দকার, অতিরিক্ত জেলা মাজিস্ট্রেট এ.জেড.এম শরীফ হোসেন, জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান প্রমুখ।
মনোনয়নপত্র যাচাই আজ: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়া মেয়র পদে ৯ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫৮ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদের ২২০ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে আজ। চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই করা হবে।