ভোটের আগে নৌকার লড়াই

77

পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। প্রথমধাপে সারাদেশে ২৫টি পৌরসভায় আগামী ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড পৌরসভাও আছে। এ নির্বাচনে প্রার্থী হতে কোমর বেঁধে নেমেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এক্ষেত্রে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি নীরবতার মধ্যদিয়ে দলীয় প্রার্থী দেয়ার পথে এগুলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একাধিক জন প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে আছেন। এক প্রকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভোটের আগেই ‘নৌকার লড়াই’ শুরু হয়ে গেছে। দলীয় মনোনয়ন ভাগিয়ে নিতে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ।
এদিকে আজ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন। আগামী ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নের জন্য আবেদন পত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানান, ‘সংশ্লিষ্ট জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত রেজুলেশনে প্রস্তাবিত প্রার্থীগণ মনোনয়ন ফরম ক্রয় করতে পারবেন। যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে এবং কোন ধরনের লোকসমাগম ছাড়া প্রার্থী নিজে অথবা প্রার্থীর একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে আবেদন পত্র সংগ্রহ ও জমা প্রদান করতে হবে। আবেদনপত্র সংগ্রহের সময় প্রার্থীকে অবশ্যই প্রার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সঙ্গে আনতে হবে। প্রথমধাপে যে ২৫টি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেগুলোর মনোনয়ন পত্রের আবেদন সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।’
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, নির্বাচনী উত্তাপ শুরু হয়ে গেছে পৌর এলাকাগুলোতে। বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটযুদ্ধে নামতে উম্মুখ হয়ে আছেন। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে চলছে প্রার্থিতা ভাগানোর নিত্য নতুন কৌশল। দলীয় প্রতীক ভাগিয়ে নিয়ে পৌরসভার ভোটের মাঠে বাজিমাত করতে প্রস্তুত হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রায় শতাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী। প্রতিটি পৌরসভাতেই গড়ে ৫ থেকে ১০জন মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী আছেন। মনোনয়ন যুদ্ধের অংশ হিসেবে সরকার দলীয় প্রার্থীরা নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়েছেন। সভা-সমাবেশে শোডাউন দিয়ে নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জাহির করেছেন। সাঁটিয়েছেন ব্যানার-পোস্টার। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের মনজয়ের চেষ্টা করছেন। দিনের অধিকাংশ সময়ই নেতাকর্মী বেষ্টিত থেকে নির্বাচনী বুলি ছুঁড়ছেন নিয়মিত। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটের আগেই নেমে পড়েছেন নৌকা ভাগানোর মিশনে। তবে এবার দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর ছাড়া দলীয় ফরম নিতে না পারার বাধ্যবাধকতা দেয়ায় প্রার্থীরা কিছুটা বেকায়দার মুখে পড়বেন। বিশেষ করে দলীয় মনোনয়ন না পেলে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার যে প্রকোপ ছিল তা এবার কমে যাবে। মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে অনেকেই বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও দলীয় পরিচয়ে পিছিয়ে পড়বেন।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম পূর্বদেশকে বলেন, কেন্দ্র থেকে এখনও কোন গাইডলাইন দেয়া হয়নি। অবশ্য গঠনতন্ত্রে মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে একটি গাইডলাইন দেয়া আছে। এখন সেই গাইডলাইনের বাইরে নতুন করে কেন্দ্র কোন নির্দেশনা দেয় কিনা দেখবো। নয়তো গঠনতন্ত্র মোতাবেকই প্রার্থী বাছাইয়ে প্রস্তাবনা পাঠাবো। এক্ষেত্রে তৃণমূলের সিদ্ধান্তকেই প্রাধান্য দেয়া হবে।
সূত্র জানায়, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রার্থীদের যোগ্যতা বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন করে সম্ভাব্যতা যাচাই করেছেন। এর মধ্যে প্রার্থীর বর্তমান ও অতীতের রাজনৈতিক কর্মকান্ড, দলীয় কার্যক্রমে উপস্থিতি, দল পরিবর্তনকারী কিনা, পারিবারিক অবস্থান, সাংগঠনিক পরিচিতি, নির্বাচিত হওয়ার কারণ, গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা যাচাই-বাছাই করেছেন গোয়েন্দারা। এ রাজনৈতিক হিসেব ধরেই দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হবে বলে মনে করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, আগামী ২০২১ সালের প্রথম দিকে অনেক পৌরসভার মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে। এ সকল পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর ২০ (২) ধারা অনুযায়ী ‘পৌরসভা প্রথমবার গঠনের ক্ষেত্রে এই আইন বলবৎ হইবার পরবর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে এবং পৌরসভার মেয়াদ শেষ হইবার ক্ষেত্রে, মেয়াদ শেষ হইবার পূর্ববর্তী ৯০দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে’।
মেয়াদোত্তীর্ণ পৌরসভাগুলোর মধ্যে মিরসরাই ও বারইয়ারহাট পৌরসভায় ২০১৬ সালের ৭মার্চ, সীতাকুন্ডে ৩ ফেব্রূয়ারি, রাউজানে ২৪মার্চ, রাঙ্গুনিয়ায় ৩ এপ্রিল, সন্দ্বীপে ২৪ জানুয়ারি, পটিয়ায় ২৮ ফেব্রূয়ারি, চন্দনাইশে ২৫ ফেব্রæয়ারি, সাতকানিয়ায় ২৪ ফেব্রূয়ারি, বাঁশখালীতে ১৮ ফেব্রূয়ারি প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।