ভোটের আগেই বিজয়ের আনন্দ

50

রাহুল দাশ নয়ন

চট্টগ্রাম-৮ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর নোমান আল মাহমুদ এখন আওয়ামী লীগের ‘মধ্যমনি’। তাঁকে ঘিরে উৎফুল্ল চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ। প্রতিটি সভা-সমাবেশেই আলাদাভাবে গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে এই নেতার। যেখানেই যাচ্ছেন নেতাকর্মীরা ফুল নিয়ে বরণ করছেন। মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে নোমান আল মাহমুদের ঘাসিয়া পাড়া বাড়িতেও মানুষের উপচেপড়া ভিড়। যেন ভোটের আগেই জয়ের আনন্দ উপভোগ করছেন এই নেতা। অথচ রাজনৈতিকভাবে স্বচ্ছ ও ক্লিন ইমেজের অধিকারী এই নেতাকে ঘিরে আগে নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর এক সিদ্ধান্তেই পাদপ্রদীপের আলোয় চলে এসেছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীকে ঘিরে নেতাকর্মীদের এমন উচ্ছ্বাসে ভোটের পরিবেশ নিয়ে বাকি প্রার্থীরা উদ্বিগ্ন। তারা বলছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার কারণে দলীয় প্রার্থী বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন। যার প্রভাব নির্বাচনে পড়বে। এতকিছুর পরেও নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু থাকলে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে জনগণের কাছে ভালো বার্তা পৌঁছাতে পারবে সরকার। তবে যাচাই-বাছাই, প্রত্যাহার ও প্রতীক বরাদ্দের পরেই ভোটের পরিবেশ নিয়ে ভাবার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান পূর্বদেশকে বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ নিয়ে যাচাই-বাছাই, প্রত্যাহার শেষেই বলা যাবে। এখনও কতজন প্রার্থী থাকছেন সেটি নিশ্চিত নই। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেমন প্রার্থী থাকছেন তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। কোনো দলের প্রার্থী যদি এখনই বিজয় উদযাপন করেন সেটি তার ব্যক্তিগত বিষয়। এটি আমাদের দেখার বিষয় না।’ মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের একজন অন্তপ্রাণ মানুষকে প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দিয়েছেন। অত্যন্ত ক্লিন ইমেজের মানুষ হিসেবে পরিচিত নোমান আল মাহমুদ। কিন্তু ভোটের আগে যেভাবে নেতাকর্মীরা উনাকে ফুল দিয়ে বরণ করছেন এতে ভোটের পরিবেশ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। সবার উচিত ফুলের মোহ কাটিয়ে নির্বাচনী মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়া। এমনিতেই ভোটের পরিবেশ নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। এরমধ্যে দলীয় প্রার্থীকে নিয়ে এত উৎসাহ বিরোধীপক্ষকে আরো কথা বলার সুযোগ করে দিবে।
গত ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সিদ্ধান্তের খবরটি রাজনৈতিক কর্মসূচিতেই পান নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ। এরপর থেকে গত চারদিন এই নেতাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। যেখানেই যাচ্ছেন তাকেই ঘিরেই নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস। মনোনয়নপত্র জমা দিয়েই ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়ে বিজয়ের আভাস দিয়েছেন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী ফুল নিয়ে নোমান আল মাহমুদের সান্নিধ্যে যাচ্ছেন। গত সোমবার নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারাও ফুল দিয়ে বরণ করেছেন। ফুলের সাথে দেয়া শুভেচ্ছা বার্তায় লিখা হয়েছে, ‘চট্টগ্রাম-৮ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ ভাইকে ফুলেল শুভেচ্ছা।’ গতকাল মঙ্গলবার মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর বাসভবনে গেলে সেখানে নোমান আল মাহমুদকে ফুলের মালা পরিয়ে দেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। গতকাল বিকালে নিজ বাসভবনে প্রচুর মানুষ ফুল নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সাথে সাক্ষাৎ করতে যান। ভোটে বিজয়ের পর যে পরিবেশ তৈরি হওয়ার কথা সেটি এখনই দেখা মিলছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নোমান আল মাহমুদের বেলায়।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আবদুস সামাদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ের নির্বাচন হওয়ায় ভোটের পরিবেশ ভালো থাকবে বলেই মনে করছি। কারণ নির্বাচন কমিশন নিয়েও অনেকের প্রশ্ন আছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন আছে। আমরা আশা করছি সরকার সব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য এই নির্বাচনটা সেভাবে করবে। যারা ক্ষমতায় থাকে তারা সবসময় বিশেষ সুবিধা পেয়ে আসছেন। এটা বাংলাদেশের চিরন্তন সত্য হয়ে গেছে। যাচাই-বাছাই শেষ হলেই এসব সুবিধার বিষয়ে আমরা যথাসময়ে বলবো।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, মনোনয়ন ফরম দাখিল করেছি নির্বাচন করার জন্য। আপাতত কিছু বলতে চাই না। যাচাই-বাছাইয়ে টিকলেই এসব বিষয়ে মন্তব্য করবো। এ পর্যন্ত ভোটের পরিবেশতো কোনো জায়গায় ভালো থাকেনি। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কোনোধরনের দুর্নাম আছে বলে শুনিনি। ভোটাররা যাকেই চাইবেন তিনিই জিতবেন। আগেভাগে উচ্ছ্বাসের কোনো কারণ নেই। ভোটের পরিবেশটা ভালো হোক সেটাই চাইছি। অনেক জায়গায় দলীয় প্রার্থী চাইলেও সবকিছু করতে পারে না। ব্যতিক্রমও মাঝেমধ্যে হয়েছে। অনেক জায়গায় ভোটের পরিবেশ ভালো ছিল। এখানেও সেটি দেখার অপেক্ষায় আছি।’
এ বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দলীয় প্রার্থী নোমান আল মাহমুদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে মনোনয়ন পাওয়ার পর সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, আমাকে মূল্যায়ন করে প্রধামনন্ত্রী তৃণমূলকে মূল্যায়িত করেছেন। নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর এমন সিদ্ধান্তে খুশি।
গত সোমবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির মো. কামাল পাশা, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আবদুস সামাদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী, মীর মো. রমজান আলী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তফসিল অনুযায়ী, আজ প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৫ এপ্রিল। ৬ এপ্রিল দেওয়া হবে প্রতীক বরাদ্দ। ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হবে ২৭ এপ্রিল।