ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের

34

ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পিডিভিএসএ’র বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো এবং তার মিত্ররা এখন থেকে আর দেশটির জনগণের সম্পদ হরণ করতে পারবে না।’ নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কাজে সহযোগিতার জন্য দেশটির সেনাবাহিনীর প্রতিও আহব্বান জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। ভেনেজুয়েলার বৈদেশিক আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত্ব তেল কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞাকে এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন নিষেধাজ্ঞা বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, তেল খাতে ভেনেজুয়েলার আয় করা অর্থের অপচয় রোধকল্পে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এদিকে যে কোনও পরিস্থিতিতে ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বিরোধী নেতাকে দেশটির প্রেসিডেন্টের স্বীকৃতির পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেনাদের এ নির্দেশ দেন তিনি। নিজের শক্তি প্রদর্শনে রবিবার বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি পরিদর্শন করেন ৫৬ বছরের এই বাম রাজনীতিক। এ সময় তিনি আসন্ন সামরিক মহড়ার প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করেন। মাদুরো বলেন, নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক মহড়ার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিভিন্ন ঘাঁটি পরিদর্শনকালে তিনি সামরিক বাহিনীর ব্যবহৃত রুশ হার্ডওয়্যার, অ্যান্টি এয়ারক্রাফট ফ্ল্যাক, পার্বত্য এলাকায় ট্যাংকের মহড়ার মতো নানা সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষণ করেন।
অন্যদিকে নিজেকে ‘অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট’ দাবি করা ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা জুয়ান গুইদো সামরিক বাহিনীর সদস্যদের তার সঙ্গে যোগ দেওয়ার আহব্বান জানিয়েছেন। মাদুরো সরকারের পক্ষত্যাগ করলে তাদের ক্ষমা করে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মার্কিন মদতপুষ্ট জুয়ান গুইদো। সরকারবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি নিজেকে ভেনেজুয়েলার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন দেশটির বিরোধী নেতা জুয়ান গুইদো। কয়েক মিনিটের মাথায় তাকে ‘স্বীকৃতি’ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘ভেনেজুয়েলার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির প্রেসিডেন্ট জুয়ান গুইদোকে আমি দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছি।’ কিন্তু রবিবার বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি পরিদর্শন করে নিজের প্রতি সামরিক বাহিনীর আনুগত্যের জানান দিলেন নিকোলাস মাদুরো। বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশটির সামরিক বাহিনী যেদিকে দাঁড়াবে, ক্ষমতার পাল্লা সেদিকেই হেলে পড়বে। ফলে এদিক থেকে এগিয়ে আছেন মাদুরো।

এখন পর্যন্ত সামরিক বাহিনীর সমর্থন না পেলেও যুক্তরাষ্ট্র এবং দেশটির বলয়ে থাকা একাধিক প্রভাবশালী রাষ্ট্রের সমর্থন পেয়েছেন ভেনেজুয়েলার স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট জুয়ান গুইদো। রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের দুই মিত্র ইসরায়েল ও অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে তার প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছে। তবে আমেরিকার বাইরে রাশিয়া, তুরস্ক ও চীনের মতো দেশগুলো মাদুরোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। জুয়ান গুইদোর জন্য এটা স্পষ্টতই অস্বস্তিকর। এর আগে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে নিজেকে ভেনেজুয়েলার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট দাবি করেন ৩৫ বছরের জুয়ান গুইদো। জুয়ান গুইদো প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের নাম ঘোষণার কয়েক মিনিটের মাথায় তাকে ‘স্বীকৃতি’ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। অন্য দেশগুলোকেও একই পথ অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছে ওয়াশিংটন। তবে সে পরামর্শ অনুযায়ী এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি দেশ গুইদোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
এদিকে সুবিখ্যাত মার্কিন ভাষাতাত্ত্বিক ও মানবতার পক্ষের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর এবং যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটি’র প্রফেসর এমিরিটাস নোম চমস্কিসহ ৭০ জন বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে তা বন্ধ করার আহব্বান জানিয়েছেন। এক খোলা চিঠিতে তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ভেনেজুয়েলাকে সংকটের চূড়ায় ঠেলে দিয়েছে। জুয়ান গুইদোকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন সুস্পষ্টভাবে ভেনেজুয়েলার সংকটকে তীব্র করেছে। তারা ভেনেজুয়েলা সেনাবাহিনীকে বিভক্ত ও জনগণের মেরুকরণকে আরও তীব্র করতে কোনও একটি পক্ষকে বেছে নিতে বাধ্য করছে। এর সুস্পষ্ট লক্ষ্য হচ্ছে নিকোলাস মাদুরোকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করা। খোলা চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘মার্কিন সরকারকে অবশ্যই ভেনেজুয়েলার সরকার উৎখাতের উদ্দেশে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সবধরণের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে করতে হবে। ট্রাম্প প্রশাসন এবং এই গোলার্ধে তাদের মিত্ররা মিলে ভেনেজুয়েলার পরিস্থিতি ভয়াবহ করে তুলেছে। যা মানুষকে অপ্রয়োজনীয় দুর্ভোগ, সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।’ সূত্র: রয়টার্স, আল জাজিরা, আনাদোলু এজেন্সি।