ভেজাল রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর নজরদারি জরুরি

14

 

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ, অনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে রাতারাতি কোটিপতি হচ্ছে। সে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে কোটিপতি বৃদ্ধির হিড়িক লক্ষ করা যাচ্ছে। দেশের কিছু সংখ্যক নাগরিক যেভাবেই হোক অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার জন্য পাগলপারা। এদের মধ্যে প্রথম কাতারে রয়েছে অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীরা। দ্বিতীয় স্থানে আছে অফিসিয়াল দুর্নীতির রাজত্ব। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভেজাল কারবারিরা। মাদক দেশের নীতি-নৈতিকতা ও সামাজিক স্থিতিশীলতাসহ সামাজিক পারিবারিক বন্ধনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। দেশের প্রত্যেকটি সেক্টরে দুর্নীতির সয়লাব চলছে। অফিসের বাইরে সাইনবোর্ড টাঙ্গানো হয়েছে যে, ‘আমি ও আমার অফিস দুর্নীতি মুক্ত’। অথচ সাধারণ মানুষ সরকারি-বেসরকারি কোন অফিস হতে বাধ্যগত দুর্নীতির তীর বিদ্ধ না হয়ে কোন সেবাই পাচ্ছে না। ঘুস-দুর্নীতি অসহনীয় পর্যায়ে চলছে সবখানে। সরকারি-বেসরকারি কোন বরাদ্দই ঘুসহীন পাওয়া যায় না। সেবা হতে শুরু করে সব কাজ ঘুসের বিনিময়ে সম্পন্ন করতে বাধ্য হচ্ছে দেশের জনসাধারণ। ঘুস, দুর্নীতি বর্তমানে একপ্রকার অসংস্কৃতিরূপে প্রতিষ্ঠিত। যার কবল হতে কেউ রেহাই পাচ্ছে না। ঘুস ও মাদকের বিরুদ্ধে অনেক ধরনের চেষ্টা ও কৌশল দেশে গ্রহণ করা হয়েছিল এবং হচ্ছে। কিন্তু মানুষের নৈতিকতা বর্তমানে শূন্যের কোটায় পৌঁছায় দুর্নীতি আর ঘুস সংশ্লিষ্টতা ছাড়া মানুষ অচল হয়ে পড়েছে। জীবন সচল রাখতে ঘুস, দুর্নীতি আর সুদ দেশের মানুষের জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে।
সবচেয়ে মারাত্মক যে বিষয়টি বর্তমানে মাথাছাড়া দিয়ে ওঠেছে তা হলো ভেজাল। ভেজাল মেশানো হচ্ছে খাদ্যে, ওষুধে। খাদ্যে এবং ওষুধে ভেজালের কারণে দেশের জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখিন। দেশের অধিকাংশ মানুষ পুষ্টিকর সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না। দুর্নীতি, ঘুস ও সুদের সাথে জড়িত হয়ে যারা লাভবান হচ্ছে তারা হয় তো পুষ্টিকর খাদ্য কিনতে সক্ষম হচ্ছে। সাধারণ খেটে খাওয়া স্বল্প আয়ের মানুষ সুসম খাদ্য গ্রহণের কল্পনাও করতে পারছে না। আমরা বলছি দেশের মানুষের আয় বেড়েছে। মূলত দেশের মানুষের ব্যয়ভারই বাড়তে দেখা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের আয় ব্যয়ের মধ্যে কোন সমন্বয় দেখা যাচ্ছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের সংখ্যা দেশে বেশি। তাদের জীবন যাত্রার ব্যয় যে হারে বেড়েছে তাতে দেশের মানুষের গড় জীবন যাত্রার মান ভয়ানক রকম নিম্নগামী। একজন দিনমজুর ৬/৭ শত টাকা বেতনে কাজ করলেও চাল, ডাল ভোজ্যতেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য ক্রয় করতে সকল টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। তরকারির কেজি যদি ৮০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত হয় তা হলে মাছ মাংস তো এদের জন্য স্বপ্ন। ভালো নেই দেশের মানুষ। তার উপর সাধারণ আহারের জন্য মরিচ, হলুদ, মশলা, ধনিয়া কেনার সামর্থ্য স্বল্প আয়ের মানুষের নেই। অন্যদিকে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী যারা কেজি বরাদে মরিচ, হলুদ, মশলা, ধনিয়া ক্রয় করতে না পেওে গুঁড়ামরিচ, হলুদ, ধনিয়া ও মশলার আশ্রয় নেয়; তাদের ভেজাল খাইয়ে ধ্বংস করছে ওইসব ব্যবসায়ী নামের নর-পশুরা।
দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায়- নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন খাতুনগঞ্জে হলুদ, মরিচ ও ধনিয়ায় কেমিক্যাল মিশিয়ে তা বাজারজাত করছে। শুধু খাতুনগঞ্জ নয় আরও বহু স্থানে এক শ্রেণির মন্দলোক এভাবে খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে বিক্রয় করছে। পত্রিকার প্রতিবেদন হতে জানা যায় র‌্যাব গত বৃহস্পতিবার খাতুনগঞ্জ বাজারের ৫নং হামিদুল্লাহ মিয়া চৌধুরী বিল্ডিংয়ের নিচ তলা হতে ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। এরকম অপরাধের জন্য গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠালে তা বন্ধ হবে না। জেল হাজত হতে এমন অপরাধিরা প্রথমে জামিনে ছাড়া পাবে। তারপর আবার এহেন অপকর্ম অন্যকোন স্থানে গিয়ে শুরু করবে। সয়াবিন তেল, সরিষার তেল, মরিচ, হলুদ, ধনিয়া, মশলা এবং ওষুধে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন জরুরি। তাদের শাস্তি দৃষ্টান্তমূলক হওয়া প্রয়োজন।
ঘুস, দুর্নীতি, মাদকের চেয়েও গুরুতর অপরাধ খাদ্যদ্রব্য ও ওষুধে ভেজাল মেশানো। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সংস্থা, বিএসটিআইসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ নিয়মিত বাজার মনিটরিং এবং খাদ্যের মান পরীক্ষাপূর্বক এসব ক্ষেত্রে যারা জনগণের ক্ষতিসাধন করছে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত তৎপরতা অব্যাহত রাখলে কিছুটা জনসাধারণ স্বস্তি পাবে। বাজারের ভেজাল প্রতিরোধে যে সকল কর্তৃপক্ষ কাজ করে থাকে তারা দায়সারা ভাবে কাজ করছে। এদের পর্যাপ্ত লোকবলও নেই। সরকার ওষুধ এবং বাজারের খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মেশানো নরপশুদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট সেবায় নিয়োজিত কর্তৃপক্ষসমূহের মধ্যে সমঝোতা ও সমন্বয় সাধনপূর্বক ভেজালকারী নরপশুদের বিরুদ্ধে কঠোর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে দেশের জনস্বাস্থ্য দ্রুত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাবে।
দেশের মানুষ তাদের সামর্থ্য অনুসারে যা খেতে পারে তা যেন স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা সরকার করে- এমন দাবি দেশের সকল মানুষের। সরকার চাইলে অসম্ভব বলতে কিছু নেই। মুষ্টিমেয় অসাধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, মুষ্টিমেয় দুর্নীতিবাজ কর্মচারী-কর্মকর্তা এবং স্থানীয় প্রশাসনে গুটিকয়জন ব্যক্তি হয়তো এমন কর্মকান্ডের অংশিদার হয় কখনো কখনো। সরকার চাইলে এইসব ভেজাল কারবারিদের যেকোন উপায়ে শায়েস্তা করতে সক্ষম।