ভেজাল প্রতিরোধ একা সরকারি সংস্থার পক্ষে সম্ভব নয়

49

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্ট্রিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) চট্টগ্রামের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. সেলিম রেজা বলেন, গুণগত মান পরীক্ষায় সরকারি বিভিন্ন তদারকি সংস্থ আছে। বিএসটিআই ১৮২টি পণ্যের মান পরীক্ষা করে সার্টিফাইড করে থাকে। আরো অনেক পণ্য আছে। বিএসটিআই খাদ্যপণ্যের মানসনদ যেমন দেয় তেমনি অন্যান্য ব্যবহার্য পণ্যের গুণগত মানসনদও প্রদান করে।
কিভাবে মানহীন পণ্য প্রতিরোধ করা যায় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজারে মানসম্পন্ন পণ্য যেমন আছে তেমনি নিম্নমানের পণ্যও আছে। ভেজাল পণ্য যখন বাজারে আসে তখন এটার দেখভালের দায়িত্ব সবার। এটা দমন করা সরকারি সংস্থার একার পক্ষে সম্ভব না। ভোক্তারও ভূমিকা আছে। ভোক্তা যদি কম দামের নিম্নমানের পণ্য না কিনে দেখেবুঝে পণ্য কিনে, তাহলে ভেজাল প্রতিরোধ সহজ হবে। পণ্য কেনার আগে ভোক্তার পণ্যের আইডেন্টিফিকেশন দেখা দরকার। ভেজাল ও মানহীন পণ্য প্রতিরোধে ভোক্তার দায়িত্ব বড়।
বিএসটিআইয়ের তদারকি সম্পর্কে ইঞ্জিনিয়ার সেলিম রেজা বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান পণ্য তৈরি করে। গুণগতমান পরীক্ষা করে থাকি। অবকাঠামো এবং পারিপাশ্বিক অবস্থা দেখা হয়। কারখানা পরিদর্শন করে ল্যাবরেটরিতে চেক করা হয়। এরপর তিনবছরের জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়। লাইসেন্স প্রদানের পর সার্ভিলেন্স করা হয়। বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে সমমানের পণ্য উৎপাদন করছে কিনা সেটা তদারকি করা হয়। কোনো ধরনের সমস্যা পেলে শোকজ করা হয়। সব সময় আমরা তদারকির মধ্যে রাখি। তাছাড়া জেলা প্রশাসক থেকে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।
বিএসটিআই চট্টগ্রাম অফিসের সক্ষমতা সম্পর্কে সেলিম রেজা বলেন, সক্ষমতার শেষ নেই। এখন ১৮২টি পণ্য আছে, কিছুদিন পর আরো কিছু পণ্য অন্তর্ভুক্ত হবে। তখন আরো জনবল, ল্যাবরেটরি প্রয়োজন হবে। জেলাপর্যায়ে অফিস করতে হচ্ছে। সেখানেও জনবল ও ল্যাবরেটরি দরকার হবে। এখন আমরা চট্টগ্রাম থেকে ৮০ শতাংশ পণ্যের পরীক্ষা করতে পারি। বাকি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠাতে হয়।
মানহীন পণ্যের প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাই হচ্ছে খাদ্য ঝুঁকিমুক্ত হতে হবে। খাদ্যপণ্য নিম্নমানের হলে শারীরিক অসুবিধা হতে পারে। শারীরিক নানান উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

তদারককারীদের
সক্ষমতায় বড়
ঘাটতি আছে
এসএম নাজের হোসাইন
সভাপতি ক্যাব, চট্টগ্রাম

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘নিরাপদ মানসম্মত পণ্য’ এবারের ভোক্তা অধিকার দিবসের মূল থিম। এদিক থেকে বাংলাদেশ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছে। ইলেকট্রনিক আইটেম ও হোম মেটেরিয়াল পণ্যের মধ্যে বেশিভাগই মানহীন। এগুলো বিএসটিআইয়ের তদারকি করার কথা। এর মধ্যে কিছু পণ্য বিএসটিআইয়ের আওতায় থাকলেও অনেক পণ্য আবার তাদের আওতায় নেই। বিএসটিআইয়ের অনেক দুর্বলতাও আছে। তারপরও কার্যকর উদ্যোগ নিলে ভোক্তারা নিরাপদ পণ্য পেতো।
বাজারে মানহীন পণ্যের প্রবেশ রোধ করতে করণীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানহীন পণ্য বন্ধ করতে হলে বাজার তদারকি বাড়াতে হবে ব্যাপকহারে। বিদেশ থেকে নিম্নমানের পণ্য না আসার ব্যবস্থা করতে হবে। বিদেশ থেকে আসা বেশিরভাগ মোবাইল সেটই মানহীন। আরও রয়েছে টাইলস, টিউবলাইট, ফ্যান, সিকিউরিটি সিস্টেম, ইন্টারনেট, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন সমাগ্রী। কম দামে বা লোভে পড়ে মানুষ এসব পণ্য কিনছে। মানুষ না জেনেই কিনছে আর প্রতারণার শিকার হচ্ছে। মানহীন পণ্যের প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং আইনের আওতায় আনতে হবে।
মানহীন পণ্যের ক্ষতিকর প্রভাব প্রসঙ্গে এস এম নাজের হোসাইন বলেন, মানহীন পণ্য মানুষের আর্থিক ও শারীরিক দিক দুটোই ক্ষতি করে। যেমন মানহীন মোবাইল ফোনে তেজষ্ক্রিয়তা বেশি। এগুলো মানুষের শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে। আবার মানহীন পণ্য কেনায় আর্থিক ক্ষতিরও শিকার হয় ভোক্তা।
মাননিয়ন্ত্রণ ও তদারককারী প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে সকল প্রতিষ্ঠান ভোক্তার অধিকার ও মানসম্পন্ন পণ্য নিশ্চিত করার কথা তাদের সক্ষমতায় ঘাটতি আছে। আবার তাদের আন্তরিকতারও ঘাটতি আছে। তারা ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিলে সাধারণ মানুষ ঠকে। আবার ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিলে তাদের লাভ, মানুষের ক্ষতি।

জনবল-লজিস্টিক
সাপোর্টের অভাব
রয়েছে
মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান
সহকারী পরিচালক, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, এ পর্যন্ত ৯১৫টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকার অধিক জরিমানা আদায় করা হয়েছে। ৩ হাজার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাঁচ সহস্রাধিক প্রতিষ্ঠান মনিটরিং করা হয়েছে। ৬টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মুচলেকা দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান আবার খুলেছে। তাছাড়া আমরা বিভিন্ন সময় মতবিনিময় সভা করেছি, গণশুনানি করেছি। ঈমামদের সাথে আমরা মতবিনিময় করেছি। ঈমামরা যেন মসজিদে খুতবায় ভেজাল ও মানহীন পণ্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করেন। আমরা মানসম্মত পণ্য নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
বাজারে কোন ধরনের অভিযোগ বেশি পাওয়া যাচ্ছে জানতে চাইলে হাসানুজ্জামান বলেন, বর্তমানে মাছ-মাংসে টেক্সটাইল রং ও চিংড়িতে জেলি মেশানো হচ্ছে বেশি। রং দিয়ে মহিষের মাংস গরুর মাংস বলে চালিয়ে দেয়া, ওজনে কারচুপি, জিলাপিতে হাইড্রোজ, অননুমোদিত ফ্লেভার, মেয়াদোত্তীর্ণ ও অনিবন্ধিত ওষুধ বিক্রির ঘটনা ঘটছে বেশি। আমরা এসব বিষয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে অভিযোগ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেক পরিবর্তন হচ্ছে। অপরাধ প্রবণতা কমে আসছে।
সক্ষমতা সম্পর্কে তিনি বলেন, জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্টের অভাব রয়েছে। ল্যাবরেটরি থাকলে অনেক উপকার হতো। তখন চোখের দেখায় কাজ করতে হতো না। ল্যাবরেটরি হলে কাজে গতিও আসতো। তবে আমরা সক্ষমতার চেয়ে একটু বেশি কাজ করি। দুইদিন ছুটি থাকলেও আমরা একদিন ছুটি ভোগ করি। সপ্তাহের ৬ দিনই আমরা কাজ করি।
হাসানুজ্জামান বলেন, আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রমে ভোক্তাদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমরা যখন কোনো প্রতিষ্ঠানে যাই, তখন অপরাধ ব্যাখা করি। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করি। লিফলেট বা প্রচারপত্র বিলি করি। এর কারণে আমাদের কাছে অভিযোগের সংখ্যাও বেড়েছে। ২০১৮ সাল থেকে আমাদের কাছে অভিযোগ আসার সংখ্যা বেড়েছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত এক হাজারের বেশি অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগগুলোর আমরা নিস্পত্তি করেছি, মাত্র ৫৬টি অভিযোগ পেন্ডিং আছে।
নিরাপদ মান সম্পন্ন পণ্য সম্পর্কে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, নিরাপদ মানসম্মত পণ্য এটা এভারের ভোক্তা অধিকার দিবসের মূল থিম। এ দিক থেকে বাংলাদেশ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছে। ইলেকটনিক আইটেম, হোম মেটেরিয়াল এসব পণ্যের মধ্যে বেশিভাগই মানহীন পণ্যে ভরপুর। এগুলো বিএসটিআই তদারকি করার কথা। এরমধ্যে কিছু পণ্য বিএসটিআইয়ের আওতায় থাকলেও অনেক পণ্য আবার তাদের আওতায় নেই। বিএসটিআইয়ের অনেক দূর্বলতাও আছে। এরমধ্যেও মানের দিক থেকে শক্ত উদ্যোগ নিলে ভোক্তা নিরাপদ পণ্য পেতো।
মানহীন পণ্যের প্রবেশ রোধ করতে করনীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানহীন পণ্য বন্ধ করতে হলে বাজার তদারকি বাড়াতে হবে ব্যাপক হারে। বিদেশ থেকে নিম্মমানের পণ্য না আসার ব্যবস্থা করতে হবে। বেশিরভাগ মোবাইলই মানহীন। টাইলস, টিউবলাইট, ফ্যান, সিকিউরিটি সিস্টেম, ইন্টারনেট, কম্পিউটার সমাগ্রী এসব পণ্যের বেশিরভাগ মানহীন। কম দামে বা লোভে পড়ে মানুষ এসব পণ্য কিনছে। মানুষ না জেনেই কিনছে পরক্ষণে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। মানহীন পণ্যের প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং আইনের আওতায় আনতে হবে।
মানহীন পণ্যের ক্ষতিকর প্রভাব প্রসঙ্গে এস এম নাজের হোসাইন বলেন, মানহীন পণ্য মানুষের আর্থিক ও শরিরিক দুটোই ক্ষতি করে। এগুলো মারাত্মক ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত। যেমন মানহীন মোবাইল ফোনে তেজস্কীয়তা বেশি। এগুলো মানুষের শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে। আবার মানহীন পণ্য কেনায় আর্থিক ক্ষতিরও শিকার হয় ভোক্তা।
মান নিয়ন্ত্রণ ও তদারককারী প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেসকল প্রতিষ্ঠান ভোক্তার অধিকার ও মান সম্পন্ন পণ্য নিশ্চিত করার কথা তাদের সক্ষমতার ঘাটতি আছে। আবার তাদের আন্তরিকতারও ঘাটতি আছে। তারা ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিলে সাধারণ মানুষ ঠকে। আবার ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিলে তাদের লাভ, মানুষের ক্ষতি।