ভেজাল প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে

23

দেশের সর্বত্র ভেজালের ছড়াছড়ি। খাদ্যে ভেজাল, ওষুধে ভেজাল, প্রসাধনীতে ভেজাল, ইলেকট্রিক সামগ্রীতে ভেজালসহ ভেজালের রাজত্বে দেশের ক্রেতা সাধারণ চরম ভাবে প্রতারিত হচ্ছে। বিভিন্ন সামগ্রীর ভেজাল তৈরির কারখানা গজিয়ে উঠেছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থা তথা বিএসটিআই ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দেশের খাদ্যের মান ও ভেজাল প্রতিরোধে কাজ করে থাকে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন সারকারি উক্ত দুটি প্রতিষ্ঠান তাদের দায়িত্ব কতটুকু পালন করতে সক্ষম হচ্ছে! দেশের বাজার ব্যবস্থায় যে সকল স্বেচ্ছাচারিতা চলছে তা নিয়ে সরকারও প্রশাসন কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। শুধু বর্তমান সরকারকে এর জন্য একক ভাবে দোষারোপ করা যাবে না, কেননা দেশ স্বাধীন হবার পর হতে দেশের কোন সরকার দেশের বাজার ব্যবস্থা ও বাজার দর স্থিতিশীল করার কোন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। এর জন্য এককভাবে বর্তমান সরকারকে দায়ী করা ঠিক হবে না। আমরা জানি দেশের বাজার ব্যবস্থা খুবই অস্থিতিশীল পরিবেশের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। কারণে অকারণে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি, ওজনে কম দেয়া, খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে অধিক মোনাফা অর্জনের প্রচেষ্টা, গুদামজাত করণের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দেশের বাজারকে অস্থিতিশীল করতে এক শ্রেণির অসাধু সুবিধাবাদী সিন্ডিকেট কাজ করে যাচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙ্গার কার্যকর কোন উদ্যোগ নেই কারো। গুদামজাতকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থাও খুব একটা দেখা যায় না দেশে। যার কারণে দেশের সাধারণ মানুষ অধিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবার পাশাপাশি শারীরিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছে।
শরীর যখন নানা রকম রোগেআক্রান্ত হয় তখন চিকিৎসা ও ওষুধ সেবনের মাধ্যমে সুস্থতা অর্জন করাও সম্ভব হচ্ছে না অনেকের পক্ষে। বৈদ্যুতিক ও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীতে ভেজাল থাকার কারণে ব্যক্তিগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে টেকসই উন্নয়ন করতে পারছেনা। এ রকম সমস্যার জন্য এক শ্রেণির লোভী অসাধু কিছু মানুষ দায়ী, তবে তারা এসব কর্মকাণ্ড চালানোর পথে সরকারি ভাবে দায়িত্বশীল সংস্থা ও ব্যক্তিরা দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করছে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য আন্তরিকতা থাকলেও আনুষাঙ্গিক পর্যাপ্ত সাপোর্ট না পাওয়ার কারণে দেশের ভেজাল কর্মকাণ্ড বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার কিছু সরকারি দুর্নীতিবাজ কর্মচারী ও কর্মকর্তার কারণেও ভেজাল প্রতিরোধ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে । সরকারি সুপরিকল্পনার অভাব, পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব এবং নিরন্তর প্রচেষ্টার অভাবেই দেশে ভেজালের দৌরাত্ম্য বাড়ছে।
সরকার দেশের ব্যবসায়ীদের প্রকৃত হিসাব তৈরি করছে বলে আমাদের জানা নেই। আমদানি রপ্তানির হিসাব ও নানা প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের জাঁতাকলে আবর্তিত। দেশে খাদ্য কারখানা, খাদ্য বাজারজাত করণ কারখানা, ভেজাল ওষুধ কারখানা, প্রসাধনীসামগ্রী বাজারজাত করণসহ সর্বক্ষেত্রে সরকারি সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। যার কারণে অনুমোদনহীন ভেজাল পণ্যসামগ্রী দেশের বাজারে বেড়ে গেছে। সরকারিভাবে মাঝেমধ্যে নানা অভিযান চালিয়ে সাময়িক কোন কোন ব্যক্তি বা ভেজাল কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়। বিগত ৫ ফেব্রæয়ারি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগরীর বায়েজিদ ‘জেবি কেয়ার বাংলাদেশ’ নামে একটি ভেজাল প্রসাধনীর কারখানায় অভিযান চালাতে দেখা যায়। উক্ত অভিযানে কারখানার ম্যানেজারকে ১ বছরের জেল ও ৪ লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। যদি কারখানা স্থাপনের পূর্বে সরকারি নিয়ম কানুন না মেনে কারখানা স্থাপনে বাধা সৃষ্টির কার্যকর ব্যবস্থা থাকতো অসংখ্য ক্রেতা ভেজাল প্রসাধনীর প্রতারণার শিকার হতো না। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা দেশে খুবই দুর্বল, বিএসটিআই’র লোকবল যেমন কম তেমনি নিয়মিত বাজার মনিটরিং এর ব্যবস্থাও খুবই দুর্বল। অন্যদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম আরো দুর্বল। দেশের মিল-কারখানা, প্যাকেজিং কোম্পানি, ব্যবসায়ীসহ বাজার ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্টদের প্রকৃত হিসাব সরকারের খাতায় বাধ্যতামূলকভাবে লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থার পাশাপাশি সরকারি তদারকি সকল সংস্থার কার্যক্রম যথাযথ ভাবে পরিচালনার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করলে দেশের বাজারে ভেজাল খাদ্য ও সব ধরনের সামগ্রীর ভেজাল প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।