ভেজালের কারখানা আমাদের মস্তিষ্ক

49

ভেজাল আমাদের কাছে অতি পরিচিত শব্দ। ভেজাল আমাদের চারপাশে, প্রতিনিয়ত আমাদের খাদ্যের সাথে বিরাজমান। আগে মরিচের গুঁড়ার সাথে ইটের গুঁড়ার মিশ্রণ এবং মাছে ফরমালিন দেওয়ার বিষয়ে মানুষ অবগত ছিল। বর্তমানে ভেজালের ভয়াবহতা এবং প্রকোপ এত প্রবল, তা আমাদেরকে বিচলিত করে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়ণের সাথে পাল্লা দিয়ে ভেজালের দৌরাত্ম দিন দিন বেড়ে চলেছে। চাল, ডাল, শাক-শবজি, মাছ, মাংস, ফলমূল ইত্যাদি আমাদের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া আমরা সর্বভূক হিসেবে স্বীকৃত। সুপারশপ সার্ভিসে পচা মাছ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ভোগ্যপণ্য বিক্রির কথা কারো অজানা নয়। ব্রয়লার মুরগীতে বিষাক্ত ক্রোমিয়াম থাকে। ইদানিং এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী টেনারীর বর্জ্য দিয়ে মুরগী এবং মাছের খাবারের ব্যবসা করে যাচ্ছে। পোলট্রিতে অ্যান্টিবায়োটিক পানিতে মিশিয়ে খাওয়ানো অত্যন্ত ভয়ানক ও বিবেকবর্জিত কাজ বলে চিহ্নিত হয়েছে। গরুর নামে মহিষের মাংস এবং খাসির নামে ভেড়ার মাংস বিক্রি নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার। বড়-ছোট ফার্মেসীতে নকল ঔষধ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ মওজুদ এবং বিক্রির বিষয়ে গণমাধ্যম এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত জ¦লন্ত সাক্ষী। প্রতিষ্ঠিত ব্রান্ডের মোড়কে ক্রীম, পেস্ট, সেন্ট, পারফিউম ইত্যাদি তৈরী হচ্ছে প্রকাশ্যে পুরান ঢাকাতে। ধান-চাল, শাক-শবজি এবং ফলমূলে অতিমাত্রায় কীটনাশক এবং রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে মানবদেহের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটু পিছনে ফিরে দেখি, চিংড়িতে লোহার পাত এবং জেল ব্যবহার রপ্তানীখাতকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বর্তমানে এসিআই লবণ এবং মোল্লা সল্টের কথা সবার কানেকানে। এই দেশের নামী-দামী হোটেলের রান্নাঘরে এবং মিষ্টির কারখানায় ঢুকলে অতি সহজেই বুঝা যায়, আমাদের খাদ্যের মান এবং খাদ্য নিরাপত্তা কোন পর্যায়ে। ফ্রিজে রক্ষিত সুস্বাধু খাবারের সাথে পোকা-মাকড়ের বসতি আমাদেরকে অবাক করে এবং জনমের স্বাদ ভুলিয়ে দেয়। রমজান মাসে শতশত মণ পচা খেজুর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ধ্বংস করেছে চোখের সামনে। কত হাজার মণ পচা খেজুর অজ্ঞাতসারে বেচাকেনা হয়েছে, তা কি কেউ জানে। ভেজাল খাদ্যের খবরাখবর প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। পত্রিকার পাতা খুললে আমরা জাগ্রত হই। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইনি প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টদের জরিমানা করে। তাতে ভেজালের পরিধি সংকুচিত হয় না। প্রকারান্তরে ভেজালকারীরা উৎসাহিত হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, ভেজাল খাবার এবং বিষাক্ত খাদ্য বাজারজাত করার জন্য এই দেশে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। খাদ্যে ভেজাল মেশানোর জন্য বা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ব্যবসা করার জন্য কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে আাজ পর্যন্ত অযোগ্য ঘোষণা করা হয়নি। অথচ বড়-ছোট ব্যবসায়ী এবং বিক্রেতাদের মধ্যে ভেজালকারীদের সংখ্যা পাঁচ শতাংশের নিচে। বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী তাদের কাছে জিম্মি। মুলতঃ তাদের মস্তিস্কে ভেজালের কারখানা।
এছাড়া আমাদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ কার্যক্রমের দ্বারা ভেজাল ও দূষণের মাত্রা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরীর উদ্দ্যোগে এক গবেষণায় চালে মারাত্মক ক্ষতিকর ভারী ধাতুর উপস্থিতি সনাক্ত হয়েছে। যাহা মানুষের শরীরে সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক গুণ বেশী। ঐ গবেষণায় চাল ছাড়াও আলু, বেগুন, টমেটো, মাছ, মুরগীর মাংস, কলের পানি, তরল দুধ ও গো-খাদ্যের উপর গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, তরল দুধ ও গো-খাদ্যে ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়ামের মত ভারী ধাতু রয়েছে। পাওয়া গেছে, ক্ষতিকর মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক এবং কীটনাশকের অস্তিত্ব। উল্লেখ্য, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, সিসা এবং আর্সেনিক মানুষের শরীরে প্রবেশ করে দীর্ঘ মেয়াদে কিডনী, লিভার ও মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাছাড়া ক্যান্সারসহ নানা ধরনের ক্রোনিক রোগের উৎস হচ্ছে- এসব রাসায়নিক। যা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে সক্ষম। কৃষকেরা জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক, রাসায়নিক ব্যবহার এবং শিল্প-কারখানার বর্জ্য দূষণ মাটির জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাতে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য মানব দেহে প্রবেশ করে মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে। তাছাড়া রাসায়নিক ও কীটনাশকযুক্ত ঘাস, পানি ও লতাপাতা গবাদিপশু খেলে তা দুধ এবং মাংসের মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। আমাদের দেশে গরু মোটাতাজাকরণ ও ওজন বাড়ানোর জন্য স্টেরয়েড ও অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ক্রমশ বেড়ে চলেছে। প্রাকৃতিক নিয়মে গবাদিপশু বেড়ে ওঠা এবং এই ধরনের কার্যক্রম রোধ করে গবাদিপশুর মাংস স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে হবে। নতুবা হরমোনসমৃদ্ধ গরু, মুরগীর মাংস ও গরুর দুধ গ্রহণের ফলে বাড়তি হরমোন সৃষ্টি শিশু এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হবে। তাছাড়া সংক্রামক রোগের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাবে।
এক সমিক্ষায় দেখা যায়, অশিক্ষিত ও হতদরিদ্র মানুষেরা হাতের নাগালে যাহা পায়, তাই খেতে অভ্যস্ত। দুর্গন্ধময়, ভেজাল, রাসায়নিকমিশ্রিত বা অস্বাস্থ্যকর খাবার যাচাই করার ক্ষমতা তাদের নেই। সত্যি কথা বলতে কি, প্রতিদিন ভেজাল খাদ্য খেয়ে মানুষের কর্মক্ষমতা, চিন্তাশক্তি ও বুদ্ধিমত্তা ক্রমশঃ লোপ পাচ্ছে। শাক-শবজি ও ফলমুলে অতিরিক্ত কীটনাশক ও বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে শিশুরা বেশী আক্রান্ত হয় ক্যান্সারে এবং জণগণ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে। যা হোক, দুই-চারটি ভেজাল পণ্য বাজার থেকে সরিয়ে নিলে বা ধ্বংস করে দিলে ভেজালমুক্ত হয়না, যেখানে দেশ ভেজালে সয়লাব হয়ে গেছে। খাদ্য নিরাপত্তার অভাবে শুধু জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, সরকারের জনপ্রিয়তাও হ্রাস পায়। * নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান সমন্বিত নীতিমালার মাধ্যমে একযোগে কাজ করলে অবশ্যই দেশের মানুষ তার সুফল ভোগ করবে। * আমাদের দেশে স্টেরয়েড ও অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে গবাদিপশু ও পোলট্রি উৎপাদন বন্ধে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিবে, তা জনগণ প্রত্যাশা করে। * শাক-সবজি ও ফলমূলে কীটনাশক, ক্যালসিয়াম কার্বাইড এবং ফরমালিনের ব্যবহার রোধে ও স্থাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচার অভিযান পরিচালনা করা এবং কৃষকদের উপজেলাভিত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জাগ্রত করতে হবে। * জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের যে কঠোর মনোভাব ও অঙ্গিকার, তেমনিভাবে ভেজালের রাজ্যকে ছোট করে ফেলতে হবে। * নামমাত্র জরিমানা করে ভেজাল উৎপাটন করা সম্ভব নয়। কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করে ভেজালকারীদের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটাতে হবে, যা অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
লেখক : প্রাবন্ধিকভেজালের কারখানা আমাদের মস্তিষ্ক

আ.জ.ম. সামশুল হক

ভেজাল আমাদের কাছে অতি পরিচিত শব্দ। ভেজাল আমাদের চারপাশে, প্রতিনিয়ত আমাদের খাদ্যের সাথে বিরাজমান। আগে মরিচের গুঁড়ার সাথে ইটের গুঁড়ার মিশ্রণ এবং মাছে ফরমালিন দেওয়ার বিষয়ে মানুষ অবগত ছিল। বর্তমানে ভেজালের ভয়াবহতা এবং প্রকোপ এত প্রবল, তা আমাদেরকে বিচলিত করে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়ণের সাথে পাল্লা দিয়ে ভেজালের দৌরাত্ম দিন দিন বেড়ে চলেছে। চাল, ডাল, শাক-শবজি, মাছ, মাংস, ফলমূল ইত্যাদি আমাদের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া আমরা সর্বভূক হিসেবে স্বীকৃত। সুপারশপ সার্ভিসে পচা মাছ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ভোগ্যপণ্য বিক্রির কথা কারো অজানা নয়। ব্রয়লার মুরগীতে বিষাক্ত ক্রোমিয়াম থাকে। ইদানিং এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী টেনারীর বর্জ্য দিয়ে মুরগী এবং মাছের খাবারের ব্যবসা করে যাচ্ছে। পোলট্রিতে অ্যান্টিবায়োটিক পানিতে মিশিয়ে খাওয়ানো অত্যন্ত ভয়ানক ও বিবেকবর্জিত কাজ বলে চিহ্নিত হয়েছে। গরুর নামে মহিষের মাংস এবং খাসির নামে ভেড়ার মাংস বিক্রি নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার। বড়-ছোট ফার্মেসীতে নকল ঔষধ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ মওজুদ এবং বিক্রির বিষয়ে গণমাধ্যম এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত জ¦লন্ত সাক্ষী। প্রতিষ্ঠিত ব্রান্ডের মোড়কে ক্রীম, পেস্ট, সেন্ট, পারফিউম ইত্যাদি তৈরী হচ্ছে প্রকাশ্যে পুরান ঢাকাতে। ধান-চাল, শাক-শবজি এবং ফলমূলে অতিমাত্রায় কীটনাশক এবং রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে মানবদেহের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটু পিছনে ফিরে দেখি, চিংড়িতে লোহার পাত এবং জেল ব্যবহার রপ্তানীখাতকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বর্তমানে এসিআই লবণ এবং মোল্লা সল্টের কথা সবার কানেকানে। এই দেশের নামী-দামী হোটেলের রান্নাঘরে এবং মিষ্টির কারখানায় ঢুকলে অতি সহজেই বুঝা যায়, আমাদের খাদ্যের মান এবং খাদ্য নিরাপত্তা কোন পর্যায়ে। ফ্রিজে রক্ষিত সুস্বাধু খাবারের সাথে পোকা-মাকড়ের বসতি আমাদেরকে অবাক করে এবং জনমের স্বাদ ভুলিয়ে দেয়। রমজান মাসে শতশত মণ পচা খেজুর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ধ্বংস করেছে চোখের সামনে। কত হাজার মণ পচা খেজুর অজ্ঞাতসারে বেচাকেনা হয়েছে, তা কি কেউ জানে। ভেজাল খাদ্যের খবরাখবর প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। পত্রিকার পাতা খুললে আমরা জাগ্রত হই। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইনি প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টদের জরিমানা করে। তাতে ভেজালের পরিধি সংকুচিত হয় না। প্রকারান্তরে ভেজালকারীরা উৎসাহিত হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, ভেজাল খাবার এবং বিষাক্ত খাদ্য বাজারজাত করার জন্য এই দেশে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। খাদ্যে ভেজাল মেশানোর জন্য বা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ব্যবসা করার জন্য কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে আাজ পর্যন্ত অযোগ্য ঘোষণা করা হয়নি। অথচ বড়-ছোট ব্যবসায়ী এবং বিক্রেতাদের মধ্যে ভেজালকারীদের সংখ্যা পাঁচ শতাংশের নিচে। বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী তাদের কাছে জিম্মি। মুলতঃ তাদের মস্তিস্কে ভেজালের কারখানা।
এছাড়া আমাদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ কার্যক্রমের দ্বারা ভেজাল ও দূষণের মাত্রা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরীর উদ্দ্যোগে এক গবেষণায় চালে মারাত্মক ক্ষতিকর ভারী ধাতুর উপস্থিতি সনাক্ত হয়েছে। যাহা মানুষের শরীরে সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক গুণ বেশী। ঐ গবেষণায় চাল ছাড়াও আলু, বেগুন, টমেটো, মাছ, মুরগীর মাংস, কলের পানি, তরল দুধ ও গো-খাদ্যের উপর গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, তরল দুধ ও গো-খাদ্যে ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়ামের মত ভারী ধাতু রয়েছে। পাওয়া গেছে, ক্ষতিকর মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক এবং কীটনাশকের অস্তিত্ব। উল্লেখ্য, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, সিসা এবং আর্সেনিক মানুষের শরীরে প্রবেশ করে দীর্ঘ মেয়াদে কিডনী, লিভার ও মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাছাড়া ক্যান্সারসহ নানা ধরনের ক্রোনিক রোগের উৎস হচ্ছে- এসব রাসায়নিক। যা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে সক্ষম। কৃষকেরা জমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক, রাসায়নিক ব্যবহার এবং শিল্প-কারখানার বর্জ্য দূষণ মাটির জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাতে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য মানব দেহে প্রবেশ করে মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে। তাছাড়া রাসায়নিক ও কীটনাশকযুক্ত ঘাস, পানি ও লতাপাতা গবাদিপশু খেলে তা দুধ এবং মাংসের মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। আমাদের দেশে গরু মোটাতাজাকরণ ও ওজন বাড়ানোর জন্য স্টেরয়েড ও অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ক্রমশ বেড়ে চলেছে। প্রাকৃতিক নিয়মে গবাদিপশু বেড়ে ওঠা এবং এই ধরনের কার্যক্রম রোধ করে গবাদিপশুর মাংস স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে হবে। নতুবা হরমোনসমৃদ্ধ গরু, মুরগীর মাংস ও গরুর দুধ গ্রহণের ফলে বাড়তি হরমোন সৃষ্টি শিশু এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হবে। তাছাড়া সংক্রামক রোগের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাবে।
এক সমিক্ষায় দেখা যায়, অশিক্ষিত ও হতদরিদ্র মানুষেরা হাতের নাগালে যাহা পায়, তাই খেতে অভ্যস্ত। দুর্গন্ধময়, ভেজাল, রাসায়নিকমিশ্রিত বা অস্বাস্থ্যকর খাবার যাচাই করার ক্ষমতা তাদের নেই। সত্যি কথা বলতে কি, প্রতিদিন ভেজাল খাদ্য খেয়ে মানুষের কর্মক্ষমতা, চিন্তাশক্তি ও বুদ্ধিমত্তা ক্রমশঃ লোপ পাচ্ছে। শাক-শবজি ও ফলমুলে অতিরিক্ত কীটনাশক ও বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে শিশুরা বেশী আক্রান্ত হয় ক্যান্সারে এবং জণগণ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে। যা হোক, দুই-চারটি ভেজাল পণ্য বাজার থেকে সরিয়ে নিলে বা ধ্বংস করে দিলে ভেজালমুক্ত হয়না, যেখানে দেশ ভেজালে সয়লাব হয়ে গেছে। খাদ্য নিরাপত্তার অভাবে শুধু জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, সরকারের জনপ্রিয়তাও হ্রাস পায়। * নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান সমন্বিত নীতিমালার মাধ্যমে একযোগে কাজ করলে অবশ্যই দেশের মানুষ তার সুফল ভোগ করবে। * আমাদের দেশে স্টেরয়েড ও অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে গবাদিপশু ও পোলট্রি উৎপাদন বন্ধে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিবে, তা জনগণ প্রত্যাশা করে। * শাক-সবজি ও ফলমূলে কীটনাশক, ক্যালসিয়াম কার্বাইড এবং ফরমালিনের ব্যবহার রোধে ও স্থাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচার অভিযান পরিচালনা করা এবং কৃষকদের উপজেলাভিত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জাগ্রত করতে হবে। * জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের যে কঠোর মনোভাব ও অঙ্গিকার, তেমনিভাবে ভেজালের রাজ্যকে ছোট করে ফেলতে হবে। * নামমাত্র জরিমানা করে ভেজাল উৎপাটন করা সম্ভব নয়। কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করে ভেজালকারীদের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটাতে হবে, যা অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
লেখক : প্রাবন্ধিক