ভূমি অধিগ্রহণের আড়াই কোটি টাকা মেরে দেয়ার চেষ্টা

62

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখায় মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের তিন একর ৫০ শতক জমি অধিগ্রহণ বাবদ দুই কোটি ৪৯ লক্ষ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে তুলতে গিয়ে শাহ আলম (৪৫) নামে এক ব্যক্তি আটক হয়েছেন। মিরসরাইয়ের মঘাদিয়া ইউনিয়নের সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির জায়গা নিজে পাওয়ার অব এটর্নি (আমমোক্তার নামা) নিয়েছেন দাবি করে ভুয়া কাগজপত্র সৃজন করে এলএ শাখায় টাকা তুলতে গিয়েছিলেন শাহ আলম। গতকাল সন্ধ্যায় ফেনীর সোনাগাজি উপজেলার সোনাপুর বাজার এলাকার রহিম উল্লাহর ছেলে শাহ আলমকে পুলিশের হাতে সৌপর্দ করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামাল পূর্বদেশকে বলেন, শাহ আলম নামে এক ব্যক্তি জালিয়াতি করে ভুয়া পাওয়ার অব এটর্নি নিয়ে এলএ শাখায় আসেন। তিনি আমাদেরকে জানান পাওয়ার অব এটর্নি দেয়া ব্যক্তি আমেরিকা চলে যাওয়ায় তাকে এই ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আমরা যাচাইবাছাই করে নিশ্চিত হই পাওয়ার অব এটর্নিটি ছিল জাল। এই ব্যক্তি তিন একর ৫০ শতক জায়গা অধিগ্রহণ বাবদ দুই কোটি ৪৯ লক্ষ টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করেছিলেন। আমরা তাকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে দিয়েছি। একদম প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। উনি আগে আবেদন করেছেন। কিন্তু আজকেই (রোববার) প্রথম এলএ শাখায় এসেছেন। পাওয়ার দাতাকে টেলিফোনে ডেকে এনে জালিয়াতি ও প্রতারণার বিষয়টি নিশ্চিত হই। যে প্রতারককে আটক করা হয়েছে তিনি আরোও কয়েকজনের নাম বলেছেন। মামলার পর কারা জড়িত ছিল তা পুলিশ খতিয়ে দেখবে।
জানা যায়, মিরসরাই উপজেলার দক্ষিণ মঘাদিয়া মৌজার বিএস জরিপের ৩৬৭ নং খতিয়ানভুক্ত ও আরএস জরিপের ৭৮০ দাগের এবং বিএস ১০৮৭ দাগের তিন একর ৫০ শতক জায়গার জন্য এলএ শাখায় ১৩/২০১৭-২০১৮ মামলা হয়। এই জায়গা অধিগ্রহণ বাবদ দুই কোটি ৪৯ লক্ষ টাকা পেতে শাহ আলম নামে এক ব্যক্তি চট্টগ্রাম এলএ শাখায় মোছাম্মৎ আর জাহান রীনা, সাইফুল ইসলাম, শামসুন নাহারের কাছ থেকে পাওয়ার অব এটর্নি নিয়েছেন দাবি করে কাগজপত্র জমা দেন। কিন্তু অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ)সহ অপরাপর কর্মকর্তাদের নির্দেশে সার্ভেয়ার, কানুনগোরা কাগজপত্র যাচাইবাছাই করতে গিয়ে নিশ্চিত হন পাওয়ার অব এটর্নিটি ভুয়া। যে কারণে শাহ আলমকে আটক করা হয়।
গতকাল সন্ধ্যায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামালের কার্যালয়ে আটককৃত ব্যক্তি শাহ আলম বলেন, ২০২১ সালে আমার নামে পাওয়ার অব এটর্নি করা হয়েছে। আমাকে দিয়ে একটি দালাল চক্র এটি করিয়েছে। জোবাইর, ফখরুল, সোহেল আমাকে দিয়ে করিয়েছেন। এদের বাড়ি মিরসরাই। অপরিচিত একটা লোক আমাকে সাথে নিয়ে এখানে এসেছেন। পরে আমাকে রেখে উনি চলে গেছেন। আমি এলএ শাখায় আগে কখনো আসি নাই। ফেনী থেকে সোহেলের সাথে যোগাযোগ করে এসেছি। আমি যে ধরা পড়বো বুঝি নাই। টাকাগুলো উঠিয়ে এদেরকে দিতে বলেছেন। সাইফুল ইসলামকে আমি চিনি না। জায়গা কে আমাকে রেজিস্ট্রি কিংবা পাওয়ার অব এটর্নি দিয়েছেন সেটিও জানি না। একটি অফিসে নিয়ে আমার স্বাক্ষর নেয়া হয়েছিল। এটি রেজিস্ট্রি অফিস নাকি অন্য অফিস চিনি না। রেজিস্ট্রি করতেও সোহেল নিয়ে গিয়েছিলেন।
জায়গার মালিক মিরসরাইয়ের মঘাদিয়ার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এলএ অফিস থেকে হঠাৎ ফোন করে দ্রæত অফিসে আসতে বলেন। এখানে আসলে বলা হয়, কে বা কারা ভুয়া কাগজ দিয়ে টাকা তুলতে চেয়েছে। আমি শাহ আলম নামে কোনো ব্যক্তিকে চিনি না। আমি কিংবা আমার পরিবারের পক্ষ থেকে কাউকে পাওয়ার অব এটর্নিও দেয়া হয়নি। মিথ্যা তথ্য ও ভুয়া কাগজ দিয়ে টাকা তুলতে চেয়েছে। এই জায়গা নিয়ে একটি মামলা থাকায় টাকা তুলতে পারি নাই। মামলা থাকায় আমরা টাকা তুলতে পারছি না অথচ কোথাকার কে এসে টাকা তুলে নিতে চাইলো।’