ভূমিদস্যু এয়াকুবের ৯ অনুসারী গ্রেপ্তার

120

ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়ার ঘটনায় অপহরণকারী চক্রের নয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে বাকলিয়া থানা পুলিশ। তারা স্থানীয় ভূমিদস্যু এয়াকুব আলীর অনুসারী বলে জানা গেছে। গত বুধবার রাত সাড়ে ১১ টায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান বাকলিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন।
মামলার বাদী মো. রায়হান উদ্দিন জানান, বাকলিয়া এলাকার প্রবাসী মো. ইয়াসিন (২৪) ও মো. বেলাল (৩০) গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার একটি ফ্লাইটে বিদেশ যাওয়ার কথা। কিন্তু আগের দিন সন্ধ্যায় ৮-৯ জনের একটি দল ডিবি পুলিশ পরিচয়ে প্রবাসী মো. ইয়াসিন, মো. বেলাল এবং তাদের সাথে থাকা বশির আহমদ (৪৫) ও মো. ফারুককে (২৩) তুলে নিয়ে বাকলিয়ার আব্দুল লতিফ হাটখোলা এলাকার মহিলা মাদ্রাসা স্কুলের পাশে লিচু ফ্যাক্টরির গার্ডরুমে আটকে রাখে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৯ অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার ৯ জন হলেন- মো. সোহাগ (২৪), জাহিদুর আলম (২৩), আবু হেলাল (২৮), মো. সাকিল (২৪), ইব্রাহিম (২০), মো. ইমরান (২৬), মো. মুজিব (২৫), শওকত আলী (২৬) ও মো. সাহাব উদ্দিন (১৯)। এসময় চার অপহৃত ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে আদায় করা প্রায় ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে গ্রেপ্তারকৃতদের সাংবাদিকদের সামনে আনা হলে তারা মো. এয়াকুব আলীর অনুসারী বলে দাবি করেন।
ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন বলেন, বাকলিয়ার ডেপুটি রোড হাফিজ টেলিকম সেন্টারে টাকা নিতে এলে প্রথমে জাহিদ ও আবু হেলালকে আটক করা হয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর আদালতে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, অপহরণকারীরা স্থানীয় ভূমিদস্যু ও নামধারী আওয়ামী লীগ নেতা মো. এয়াকুব আলীর অনুসারী। তারা এলাকায় ঘটা সবধরনের অপরাধ কর্মকান্ডে সাথে তারা জড়িত। অন্যের জায়গায় জোর করে সীমানা দেয়াল নির্মাণ, জাল দলিল তৈরি করে স্থানীয়দের জায়গা দখলে নেয়াসহ নানা অপকর্মের সাথে তারা লিপ্ত। একজনের জায়গা দখল করে অন্যজনের নামে করে দেওয়াই এদের মূল কাজ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক নেতা বলেন, মো. এয়াকুব আলী ১৯৯৫ সালের ৯ মে দেড় কেজি হেরোইনসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। জামিনে মুক্তি পেয়ে রাহাত্তারপুল থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত পুরো এলাকার অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। এলাকায় মাদকের কারবারের মূল হোতা এয়াকুব বলেও অনেকে দাবি করেন। বাকলিয়া থানায় এয়াকুব আলীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলে থানা সূত্রে জানা যায়।
বাকলিয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমেদ ইলিয়াস বলেন, গত নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার দায়ে বাকলিয়া থানায় আমি বাদি হয়ে একটি মামলা করি। তারপর থেকে আমাকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছে এয়াকুব আলী। আমার ঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এয়াকুব আওয়ামী লীগের কেউ নয়, সে নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা দাবি করে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করে। এমনকি অনেক জায়গায় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করে। লোকাল পুলিশকে ম্যানেজ করে এলাকায় নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এয়াকুব খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ২০১৫ সালে প্রায় ২০ কোটি টাকা ধার নেয়। পরে বিভিন্ন অজুহাতে সে টাকা আর ফেরত দেয়নি। এসব টাকার মূল লেনদেন হয় খাতুনগঞ্জের ইউনিয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে। আর একাউন্টটি তার ভাই জসিম উদ্দিনের নামে খোলা। তারা তিন ভাই এসব অপকর্মের সাথে জড়িত বলে উল্লেখ করেন এ আওয়ামী লীগ নেতা।
বিষয়টি নিয়ে পূর্ব বাকলিয়া ১৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হারুন উর রশীদ পূর্বদেশকে বলেন, এয়াকুব কি করছে না করছে সেটি সবাই জানে। বর্তমানে দেশের অবস্থা কেমন তা তো আপনি বুঝতেই পারছেন। পুলিশের সাথে যোগাযোগ করলে তার সম্পর্কে জানতে পারবেন।