ভূমিকম্পে লন্ডভন্ড তুরস্ক-সিরিয়া

15

পূর্বদেশ ডেস্ক

তুরস্ক ও সিরিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রায় দুই হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজদের বেশির ভাগই ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভূমিকম্পে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধারে উদ্ধারকর্মীদের অভিযান চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার ভোররাত ৪টা ১৭ মিনিটে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। ভূমিকম্পটি যখন আঘাত হানে, তখন বেশির ভাগ মানুষ ঘুমাচ্ছিলেন।
সংস্থাটি আরও জানায়, তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারাসহ দেশটির অন্যান্য শহরে এবং পার্শ্ববর্তী সিরিয়াসহ প্রতিবেশী দেশ লেবানন, সাইপ্রাস, ইসরায়েলেও এই ভূকম্পন অনুভূত হয়। এরপর কয়েকবার পরাঘাত আঘাত হানে। এগুলোর মধ্যে একটি ছিল ৬ দশমিক ৪ ও একটি ৬ দশমিক ৫ মাত্রার। প্রায় ৮৪ বছর পর গতকাল তুরস্কে আবারও ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে। এতে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। ভূমিকম্পে তুরস্কের ১ হাজার ৫৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন শহরে অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজ অব্যাহত রয়েছে। তবে বাদ সেধেছে প্রতিকূল আবহাওয়া। শীতকালীন তুষারঝড়ের কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। তুষারে অনেক সড়ক ঢেকে গেছে। এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ার সরকার, হাসপাতাল ও উদ্ধারকর্মীরা ভূমিকম্পে প্রায় ৯৬৮ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, ভূমিকম্পে সিরিয়ার আলেপ্পো, হামা, তারতুস প্রদেশে অসংখ্য ভবন ধসে পড়েছে। আতঙ্কিত মানুষজনকে ছোটাছুটি করতে দেখা যাচ্ছে।
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, তুরস্কে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো হলো কাহরামানমারাস, গাজিয়ানতেপ, সানলিউরফা, দিয়ারবাকির, আদানা, আদিয়ামান, মালত্য, ওসমানিয়ে, হাতায় ও কিলিস। আর সিরিয়ার আলেপ্পো, ইদলিব, হামা ও লাতাকিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভ‚মিকম্পে দুই দেশের কয়েক হাজার ভবন ধসে পড়েছে। ঘটনার পরপরই অনুসন্ধানকারী ও উদ্ধারকারী দল কাজ শুরু করে। তবে তুরস্কে শীতকালীন তুষারঝড়ের কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। তুষারে অনেক সড়ক ঢেকে গেছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ভূমিকম্পে হতাহতদের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি এই বিপর্যয় মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন।
প্রথম ভূমিকম্পের কয়েক ঘণ্টা পর গাজিয়ানতেপ থেকে প্রায় ৮০ মাইল দূরে তুরস্কের কাহরামানমারস প্রদেশের ইলবিস্তান জেলায় আরও একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫। তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানায়, এটি কোনো পরাঘাত নয়। এটা নতুন ভূমিকম্প।
তুরস্কে প্রথম ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের অঞ্চলে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দিনের তাপমাত্রা ৩-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসবে আর রাতে তা হিমাঙ্কের নিচে থাকবে। প্রায় ৩-৫ সেন্টিমিটার পুরু তুষারপাত হতে পারে। আর উত্তরে ভারী তুষারপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আরও পার্বত্য অঞ্চলে আগামী দিনগুলোর তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ওপরে উঠবে না বলে মনে করা হচ্ছে। যার অর্থ ৫০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার তুষারপাত হতে পারে।
প্রথম ভূমিকম্পে তুরস্কে অন্তত ২ হাজার ৮০০ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মানে হাজারো মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে। তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকাতে বলেন, যত দ্রুত সম্ভব আমরা দুর্গতদের কাছে পৌঁছাতে চেষ্টা করছি। প্রচন্ড ঠান্ডা, অনেক মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছে, তারা খোলা জায়গায় আছে। ইতিমধ্যে সিরিয়ার উত্তরাংশে লাখ লাখ মানুষ তাঁবুতে ঠাঁই নিয়েছে। তিনি বলেন, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্কের ১০টি শহর ও প্রদেশের স্কুলগুলো এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শহর ও প্রদেশগুলে হলো কাহরামানমারাশ, হাতায়, গাজিয়ানতেপ, ওসমানিয়ে, আদিয়ামান, মালত্য, শানলিউরফা, আদানা, দিয়ারবাকির ও কিলিস।
তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের আদানা বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছ বেসরকারি বার্তা সংস্থা দেমিরোরেন। এ ছাড়া মারাস ও আন্তেপের বিমানবন্দরগুলোতে বেসামরিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
রয়টার্স-এর প্রতিবেদনে বলা হয় আলেপ্পোর স্বাস্থ্য পরিচালক জিয়াদ হেগ তাহা বলেন, ঢেউয়ের মতো আহত মানুষ হাসপাতালে আসছে। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা যায়, উদ্ধারকারী দলগুলো ভারী বৃষ্টি ও তুষারপাতের মধ্যে বেঁচে থাকা মানুষদের খুঁজছে।
তুরস্কে জরুরি সহায়তা দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এরই মধ্যে ১০টি অনুসন্ধান ও তল্লাশি দল পাঠিয়েছে। বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, ফ্রান্স, গ্রিস ও নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড ও রোমানিয়া থেকে প্রাথমিক উদ্ধারকাজে এই দলগুলোকে পাঠানো হয়। ইতালি ও হাঙ্গেরিও সহায়তা করতে আগ্রহপ্রকাশ করেছে। এ ছাড়া রাশিয়া, কাতার, ইউক্রেন, ভারত, চীনও সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্ক ও সিরিয়াকে কীভাবে সহায়তা করা যায়, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
উল্লেখ্য, তুরস্ক পৃথিবীর অন্যতম ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। দেশটিতে ১৯৯৯ সালে শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে ১৭ হাজার লোক নিহত হন।