ভূঁইয়া ইকবাল : দুর্লভ সংগ্রাহক ও সম্পাদক

105

ড. আহমেদ মাওলা

কৈশোর থেকেই অনেক গুণিমানুষের সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ হয়েছে আমার। নিজের লাজুক এবং নেপথ্যচারী স্বাভাবের কারণে আনেক ভালো কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও কখনো প্রচার-প্রপাগান্ডার ঝড় তুলতে চাইনি। পেশাগত জীবনেও পদলেহী, দলকানা হয়ে বাইনারি অপজিসনে দাঁড়িয়ে কোনো বিভেদের ব্যাকরণ তৈরি করিনি। এই রাজনীতি আক্রান্ত সমাজে তাই অনেক অপমান, নিগ্রহ,প্রবঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে আমাকে,তবে তার জন্য আমার কোনো আপসোস নেই। জীবনানন্দ দাশ থেকে ধার করে বলি-‘সকল লোকের মাঝে বসে/আমার নিজের মুদ্রাদোষে/ আমি একা হতেছি আলাদা/ আমার চোখেই ধাঁধা/ আমার পথেই বাধা?’ এই করোনা মহামারি অনেক গুণিমানুষকে কেড়ে নিল। অবস্থা এমনই যে, প্রবল অনুরাগ থাকা সত্ত্বেও তাদের শেষ শব যাত্রার সঙ্গি হতে পারিনি। এই আপসোস, দুঃখবোধ থেকে যাবে হৃদয়ে শোকের কালো চিহ্নের মতো। আমরা দিন দিন পিতৃহীন, অভিভাবকহীন,¯েœহছায়ার বৃক্ষহীন হয়ে পড়ছি। সম্প্রতি প্রয়াত হলেন আমার শিক্ষক, অভিভাবক প্রফেসর ভূঁইয়া ইকবাল। ১৯৯৫ সালের কথা। আমি তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এম.এ ক্লাসের ছাত্র। প্রফেসর ভূইয়া ইকবাল(১৯৪৬-২০২১) স্যার তখন বিভাগীয় চেয়ারম্যানের দায়িত্বে। তিনি আমাকে ডেকে বললেন, পান্ডূলিপি (বিভাগীয় গবেষণা র্জানাল) বেরুচ্ছে,তুমি এপর্যন্ত প্রকাশিত পান্ডূলিপি’র (১৫খন্ড) লেখাগুলোর ওপর একটা প্রবন্ধ দাও। স্কুল জীবন থেকে টুকটাক পত্রপত্রিকায় লেখা ছাপা হলেও স্যারে কথায় ভেতরে ভেতরে আমি বেশ ভয় পেয়ে যাই। পরদিন স্যার সেমিনার থেকে পান্ডূলিপি’র পনেরোটি সংখ্যা হাতে তুলে দেন। দায়িত্ব তো কাঁধে নিলাম কিন্তু আমি পারবো কী? ষোড়শ সংখ্যায় আমার লেখাটি বের হলো-এর আগে কোনো ছাত্রের লেখা পান্ডূলিপি’তে প্রকাশিত হয়নি। ভূঁইয়া ইকবাল স্যারের কাছে যাওয়া সাহস পাচ্ছিনা। প্রফেসর দিলওয়ার হোসেন (প্রয়াত) স্যার আমাদের রবীন্দ্রনাথের বলাকা কাব্য পড়াতেন। একদিন ক্লাস শেষে আমাকে তাঁর চেম্বারে নিয়ে গেলেন। বুকে দুরু দুরু টেনশন নিয়ে আমি তাঁর সামনে গিয়ে বসলাম। স্যার বললেন, তোমার লেখাটা আমি পড়েছি,তুমি অনেক বিখ্যাত পন্ডিতের লেখারও সমালোচনা করছ দেখছি, কথাটা বলে দিলওয়ার স্যার তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে শব্দ করে হেসে উঠলেন। গলায় লেষ্মা জমা ভাঙ্গাচোরা কণ্ঠে বললাম, স্যার…‘না তোমার সমালোচনার দৃষ্টিভঙ্গি ভালো’। স্যার হয়তো আরো কিছু বলতেন,এসময় শচীন চা দিয়েছে, আমি হাফছেড়ে বাঁচি। করিডোর দিয়ে হেঁটে যেতে দেখে ভূঁইয়া ইকবাল স্যার ডেকে বললেন,‘এই তুমি কেমন ছেলে বলোতো? আমার সাথে আর দেখাই করলে না?’ আমি থতমত খেয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম, ‘এসো-পত্রিকার কপি নিয়ে যাও।’ লেখার ত্রুটি নিয়ে স্যার কিছু বলেন কি-না, এভয়ে আমি তটস্ত ছিলাম। ১৯৯৮ সালে মাওলা ব্রাদার্স থেকে ভূঁইয়া ইকবাল স্যারের সম্পাদনায় (উল্লেখ্য, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সম্পাদনায় আনেক আগে বেরিয়েছিল।) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় পরিবর্ধিত সংকলনে ইকবাল স্যার ‘জননী:মানিক ও শওকত ওসমান’ শিরোনামে আমার একটি প্রবন্ধ অন্তর্ভূক্ত করেন। লেখাটি এর আগে শিবনারায়ণ রায় সম্পাদিত জিজ্ঞাসা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল কলকাতা থেকে । ‘ভূমিকায়’ ভূঁইয়া ইকবাল স্যার লিখেছেন, ‘এই সংকলনের সর্ব কনিষ্ঠ(জন্ম: ১৯৭১) লেখক আহমেদ মাওলা। মানিক ও শওকত ওসমান দু’জনই জননী উপন্যাস লিখেছেন দুই সম্প্রদায়ের দৃষ্টিকোণ থেকে। আহমেদ মাওলার লেখাটিতে তুলোনামূলক বিশ্লেষণ পাওয়া যায়।’ এই দু’টো বাক্য সেই সময় আমার মতো নগণ্য এক ছাত্রের কাছে আর্শীবাদ আর প্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছিল। ভূঁইয়া ইকবাল স্যারের কাছে এভাবে অপরিশোধ্য ঋণ আর স্নেহে আবদ্ধ হয়ে রইলাম। তিনি কেবল শিক্ষ ছিলেন না, হয়ে উঠেন আমার অভিভাবক। প্রফেসর ভূঁইয়া ইকবাল গ্রেগরি পেক ও অড্রে হেপবার্ন অভিনীত রোমান হলিডে ছবি দেখেঝ প্রথম যৌবনে সাংবাদিকতা পেশার প্রতি আকৃষ্ট হন। ছাত্রজীবনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি ও পরে রিপোর্টাও হিসেবে দৈনিক বাংলা (অধুনা লুপ্ত) পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৭৩ সালে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের আমন্ত্রণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে রিডার ও পওে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। প্রায় ৪৩ বছর চট্টগ্রামে কাটিয়ে অবসরগ্রহণের পর পুত্র অনিন্দ্য ইকবালের বুয়েটে শিক্ষকতা সূত্রে ঢাকায় চলে যান। ভূঁইয়া ইকবাল ছাত্রজীবনে ‘পূর্বলেখ’নামে ছোটকাগজ বের করতেন। কবি শামসুর রাহমান থেকে কবিতা নেয়ার জন্য একদিন তাঁর অফিসে যান। স¥ৃতিকথায় তিনি লিখেছেন-‘যতদূও মনে পড়ে ‘পূর্বলেখ’ আমি কবিতা দিয়েছিলাম। ভূঁইয়া ইকবালের কণ্ঠস্বরের জন্য নয়,ওর চশমার আড়ালে দীপ্ত দৃষ্টি লক্ষ্য করেই বুঝতে পারলাম সে দৃঢ়চেতা এবং নিজের কাছে সংকল্পবদ্ধ। তাকে ষনাক্ত করতে আমার ভুল হয়নি। আঠারো বছরে এই তরুণ বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর। ‘বাংলাদেশের উপন্যাসের সমাজচিত্র’ অভিসন্দর্ভেও জন্য পিএইচডি হাসিল করেছেন। বেশকয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বই উপহার দিয়েছেন পাঠকদের। ভূঁইয়া ইকবালের খ্যাতি আমাকে আনন্দিত করে খুবই। কারণ আমি তাকে চোখের সামনে গড়ে উঠতে দেখেছি।’(কালের ধুলোয় লেখা’পৃ.১৬৭) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার পর তিনি পেয়েছিলেন সমৃদ্ধ এক পরিবেশ। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক আবু হেনা মোস্তাফ কামাল,অধ্যাপক মনিরুজ্জামান,চারুকলা বিভাগের মুর্তজা বশীর, এর বাইরে ইউনুস পরিবারের মুহম্মদ ইব্রহীম মুহম্মদ জাহাঙ্গীরের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পদটি তিনি নিছক চাকরি হিসেবে নেননি, মনোযোগ দিয়েছিলেন পঠনপাঠন ও গবেষণামূলক তৎপরতায়। এমসয় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদনায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকশিত হলে তিনি বাংলাদেশ লেখক শিবির প্রদত্ত হুমায়ুন কবীর সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন। আশির দশকের শুরুতে অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের উপন্যাসে সমাজচিত্র শীর্ষক পিএইচডি গবেষণার জন্য কলকাতা যান। কলকাতা পর্বটা তাঁর জন্য বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠে। কলকাতার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, দেশ সম্পাদক সাগরময় ঘোষ, গৌরকিশোর ঘোষ প্রমুখ লেখক-সাহিত্যিকদের মধ্যে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেন। শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর মহাফেজখানা থেকে রবীন্দ্রনাথের বেশকিছু অপ্রকাশিত রবীন্দ্র-পত্র উদ্ধার করেন এবং সাগরময় ঘোষ দেশ পত্রিকার সাহিত্য সংখ্যায় তা প্রকাশ করে তাঁকে উৎসাহ প্রদান করেন। গবেষণা কাজে তাঁর তথ্যনিষ্ঠা ছিল অসাধারণ।বিভিন্ন লেখকের অপ্রকাশিত, অগ্রন্থিত লেখা, চিঠিপত্র সংগ্রহ ও অনুসন্ধান করা এবং সেগুলো তথ্যসহ সংকলন-সম্পাদনা ছিল তাঁর কাজের এলাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাকাডেমিক আঙ্গিনায় প্রথাগত ধারা হচ্ছে, চাকরির পদ-উন্নতি এবং ডিগ্রি আর্জন ছাড়া কেউ গবেষণা বা নিছক জ্ঞানচর্চা করতে আগ্রহী হয়না। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে ভূঁইয়া ইকবাল একজন ব্যতিক্রমধর্মী অনুসন্ধানী গবেষক ছিলেন। আমাদের আরেক স্যার অধ্যাপক গোলাম মুস্তফা সম্প্রতি এক লেখায় ‘ভূঁইয়া ইকবাল বিরল গষেক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে,-রবীন্দ্রনাথের একগুচ্ছ পত্র,রবীন্দ্রনাথ: তাঁর চিঠি,তাঁকে চিঠি,বাংলাদেশে রবীন্দ্র-সংবর্ধনা, পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্র-বক্তৃতা, রবীন্দ্রনাথ ও মুসলমান সমাজ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়,নির্বাচিতরচনা:আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, আনিসুজ্জামান:সমাজ ও সংস্কৃতি,আনিসুজ্জামানের অপ্রকাশিত পত্রাবলি,শামসুর রাহমান:নির্জনতা থেকে জনারণ্যে,শামসুর রাহমানের পান্ডূলিপি-চিত্র। মৃত্যুর পুবে ভূঁইয়া ইবাল ‘শিশির কুমার দাশের জীবনতথ্য পঞ্জি’ আবু সয়ীদ আইযুব এবং আনিসুজ্জামানের অগ্রন্থিত রচনা সংকলনে ব্যস্ত ছিলেন। গবেষণার রস সংগ্রহ করেছেন,তথ্য সংগ্রহ করেছেন,অবসর গ্রহণের পরও নিয়ত,এটা বিরল এক নজির। গবেষণার স্বীকৃতী স্বরূপ পেয়েছিলেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার কিন্তু আমি মনে করি,সমকালীন সমাজে যে আত্মকেন্দ্রিকতা,বস্তুগত উন্নতির প্রতি আকর্ষণ, সেখানে সামষ্টিক কল্যাণে সাহিত্য সেবা? সে তো ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর বেগার কাজ। ষাট-সত্তর দশকে সাহিত্য-সংস্কৃতির একটা গণমুখি ধারা স্বক্রিয় ছিল। সুসংহত সমাজ ও মানবতাবাদী শ্রেয়বোধের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাওয়া,ভূঁইয়া ইকবাল ছিলেন সেই ধারার একজন প্রকৃষ্ঠ মানুষ। আমৃত্যু তিনি সেই ব্রত পালন করে গেছেন।
রবীন্দ্রনাথ নিয়ে কাজ করা ভূঁইয়া ইকবাল স্যারের অন্যতম একটি ক্ষেত্র।Ñরবীন্দ্রনাথের একগুচ্ছ পত্র, রবীন্দ্রনাথ: তাঁর চিঠি,তাঁকে চিঠি, বাংলাদেশে রবীন্দ্র-সংবর্ধনা, পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্র-বক্তৃতা, রবীন্দ্রনাথ ও মুসলমান সমাজ -এই পাঁচটি গ্রন্থের মূল বিষয়ের দিকে তাকালে দেখা যায়, রবীন্দ্রনাথের পূর্ববঙ্গে কাটানো জীবনকে নানাভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি। তাঁর পর্যবেক্ষণ ও দৃষ্টির প্রধান জায়গাটি হচ্ছে- পূর্ব বাংলার মুসলমান সমাজ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের মনোভাব কী ছিল? এই নিয়ে রয়েছে নানা মত, নানা বিতর্ক-বিভ্রান্তি।কারণ, জমিদারি দেখাশোনার প্রয়োজনে রবীন্দ্রনাথ ১৮৮৯ থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত অবস্থান করেছিলেন। তাঁর জমিদারিতে অধিকাংশ প্রজারা ছিলেন মুসলমান চাষি। এছাড়া তৎকালীন পূর্ব বাংলার বৃহত্তর মুসলমান সমাজের সঙ্গেও রবীন্দ্রনাথের নিবিড় যোগাযোগ। ভূঁইয়া ইকবাল সংকলিত রবীন্দ্রনাথের একগুচ্ছ পত্র গ্রন্থে মুসলমানদের সঙ্গে পত্রালাপের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথের মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। এই পত্রগুচ্ছের রবীন্দ্র-মানসের অনুদ্ঘাটিত দিকটি উন্মোচিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মর্ধণ্য থেকে প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথ: তাঁর চিঠি,তাঁকে চিঠি গ্রন্থেও কবির উদ্দেশ্যে লেখা মুসলমানদের মনোভাবের পরিচয় মেলে। রবীন্দ্রনাথ নিয়ে ভূঁইয়া ইকবালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় কাজ রবীন্দ্রনাথ ও মুসলমান সমাজ Ñ‘ভূমিকা’য় তিনি উল্লেখ করেছেন,‘রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মুসলমান সমাজের যোগাযোগ ও সম্পর্কেও খতিয়ান তৈরির প্রয়াস এই বই।’ রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মুসলমান শিক্ষিত ও মধ্যবিত্তশ্রেণির যোগযোগ,পত্র বিনিময়,আরবি-ফার্সি শব্দ প্রয়োগ,শিক্ষাভাবনার বিষয়ে যে প্রসঙ্গগুলো সামনে এসেছেন,তা সত্যি প্রনিধানযোগ্য। বাংলাদেশের উপন্যাসের সমাজ চিত্র তাঁর ডক্টরাল থিসিস। উপন্যাসে বিধৃত বাংলা অঞ্চলের সমাজ মানে মূলত মুসলমানদের সামাজিক চেহারার স্বরূপ। তাঁর ফাইডিংসর হচ্ছে সংস্কারবদ্ধতা থেকে শিক্ষিত বাঙালির বেরিয়ে আসার সংগ্রমী চেষ্টা। যুক্তিশীল, প্রগতিবাদী জীবনের প্রতি বাঙালি মুলমানের এই আগ্রহের জায়গাটা তৈরি হয়েছে ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলনের প্রভাব থেকেই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণের পর কিছুদিন ভূঁইয়া ইকবাল চট্টগ্রামের দৈনিক সুপ্রভাত পত্রিকার সাহিত্য পাতা সম্পাদনার সাথে যুক্ত ছিলেন। সেই সময় সুপ্রভাতের সাহিত্য হয়ে উঠেছিল দেশের অন্য দৈনিকের সাহিত্য পাতার তুলনায় শ্রেষ্ঠ পাতা। তাঁর অনুরোধে আবু হেনা মোস্তফা কামালের প্রয়ান দিবস উপলক্ষে হেনা স্যারের কবিতার ওপর লিখেছি। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসে ওপর দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখতে একাধিকবার ফোন করেছিলেন। লেখক থেকে কীভাবে ভালো লেখা আদায় করতে হয়, সেটা ভূঁইয়া ইকবাল স্যার ছাত্রজীবনে ‘পূর্বলেখ’ ছোট কাগজ সম্পাদনা থেকে রপ্ত করেছিলেন। সুপ্রভাতের পাতা সম্পাদনা সূত্রে তরুণ লিখিয়েদের সাথে তাঁর একটা সম্পর্ক তৈরি হয় এবং তিনি বেশ উপভোগ করছিলেন তরুণদের সঙ্গ। বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়ার পর নিজেকে বেশ সম্মানিতবোধ করছিলেন। তাঁর অভিব্যক্তি ছিল ‘যোগ্যতার চেয়ে সমাদর পেয়েছি বেশি’। তাঁর মধ্যে কখনো অপ্রাপ্তির বেদনা ছিল না। এরকম সুসংস্কৃত,মানবতাবাদী, নির্লোভ, নিষ্ঠাবান গবেষক, সাহিত্য সেবকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও অপরিশোধ্য ঋণ আমাদের থেকেই যাবে।