ভিন্ন আঙ্গিকে নতুনত্ব নিয়ে ধনী-গরিবের কালেকশন

7

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নগরীর সব মার্কেট এখন সরব। সকাল ১০টায় মার্কেট খুললেও তা বন্ধ হয় রাত ২টার পর। কারণ এখন কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। নগরীর চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্সের অবস্থাও তাই। নতুন নতুন কালেকশন নিয়ে এবার সেজেছে এ শপিং কমপ্লেক্সটি। শুধু বড়লোক বা ধনীরা নয়, গরীবরাও তাদের পছন্দমত পণ্য নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের অক্টোবর মাসেই এ শপিং কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। দুই তলা বিশিষ্ট এ শপিং কমপ্লেক্সে নতুন পুরাতন মিলিয়ে দোকান রয়েছে ৪১০টি। তার মধ্যে শৈশব, রেড ট্যাগ, আমেনা ফ্যাশনসহ বেশ কয়েকটি দোকান ক্রেতাদের নজর কাড়ছে।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত দুই বছর মন্দা গেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। দেশে দেশে কঠোর বিধিনিষেধে ব্যাহত হয়েছে স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্য। ভাটা পড়েছিল আমদানি-রপ্তানিতে। করোনার অভিঘাত ছায়া ফেলে ঈদ আনন্দেও। তবে এবারের চিত্রটা ভিন্ন। দেশে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি শিথিল হওয়ায় জীবনযাত্রায় ফিরেছে স্বাভাবিক ছন্দ। মন্দাকাল কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যও। এরপরও হতাশায় ভুগছেন ব্যবসায়ীরা। রমজান মাসের অর্ধেক সময় চলে আসলেও তেমন ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না তারা।
শপিং এ আসা ক্রেতা মো. কাদের বলেন, ‘রমজান যতই এগোবে মার্কেটগুলোতে লোকজনের ভিড় ততই বাড়বে। এতো ঠাসাঠাসির মধ্যে আরামে কেনাকাটা করা যায় না। তাই এবার একটু আগেভাগে এসেছি। তবে কাপড়ের দাম অন্য বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে।’
শৈশব কালেকশনের ব্যবস্থাপক মো. কলিম উল্লাহ আজাদ বলেন, ‘আমরা এ বছর পুরো শো রুমে নতুনত্ব এনেছি। কিন্তু যে আশা ভরসা ছিল তা আর পূরণ হবে না। মার্কেটে ক্রেতা সংকটের কারণে বিক্রি কম হচ্ছে।’
কারণ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে স্কুল-কলেজ খোলা। সে সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষা চলছে। অভিভাবকদের মন চাইলেও শপিংমলমুখী হতে পারছে না। ২০ রমজানের পর কিছুটা চাপ বাড়তে পারে। তখন আমরা আশার আলো দেখব।’
এদিকে মার্কেটে থান কাপড়, রেডিমেড কাপড় ও জুতোর দোকানগুলোতে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া মার্কেট ও বিপণীকেন্দ্রগুলোর বাইরেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা টেইলার্সগুলোতে হুমড়ি খাচ্ছেন অনেকে।
শাড়ির দোকান নিশানের স্বত্বাধিকারি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার কাছে কাতান, অর্গঞ্জা, লগ্ন স্টিচ, অপেরা কাতান, ইতালিয়ান ক্রেপ সিল্ক, টাঙ্গাইলের বালুচুড়ি, টাঙ্গাইলের মসলিন জামদানি শাড়ির কালেকশন এখানে রেখেছি। এখানে সর্বনিম্ন এক হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত দামের শাড়ি রয়েছে। ক্রেতাদের পছন্দমত শাড়ি ক্রয় করতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ শপিং সেন্টারে শুধু ভিআইপি নয়, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও ভাল কাপড় ও প্রসাধনী সামগ্রীর জন্য সব শ্রেণির লোকজনই আসেন। এছাড়াও এখানে রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সব জায়গায় রয়েছে সিসি টিভি ক্যামেরা ও পার্কিং ব্যবস্থা।’
সেলাই কারিগর রইসুল আজাদ বলেন, ‘ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ব্যস্ততা ততই বাড়ছে। অনেক অর্ডার রয়েছে। সবাইকে যেন সময়মতো ডেলিভারি দেওয়া যায় সেজন্য এখন দিনরাত কাজ করছি। রমজান শুরুর এক সপ্তাহ পর থেকে আমরা নতুন অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।’
চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এসএম মঈনুল ইসলাম শামিম পূর্বদেশকে বলেন, ‘চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স চট্টগ্রামবাসীর পরিচিত একটা মার্কেট। গত দুই বছর আমরা কোন ব্যবসা করতে পারিনি। এবারে ভাল কিছু করার প্রত্যাশা নিয়ে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা রেখেছি পুরো কমপ্লেক্স জুড়ে। এখানে নিয়মিত ভোলান্টিয়ার চারজন, পুলিশ আটজন এবং নিরাপত্তাকর্মী রয়েছে ১২ জন। সুতরাং ক্রেতারা কোন ঝামেলা ছাড়াই কেনাকাটা করতে পারবেন।’
দাম বেশির অভিযোগ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একেবারে কমমূল্যে সকল পণ্য বিক্রি করছি। আবার যেসব পণ্যের মান ভাল সেগুলো একটু বেশি দাম রাখতে হচ্ছে। তবে এটা বলতে পারি, ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত লাভ করছে না। এটা নিয়ে নিশ্চিত থাকতে পারবেন।’