ভিটামিন ‘এ’ প্লাস খাওয়ানোর ক্যাম্পেইন প্রসঙ্গে

164

ভিটামিন অর্থ খাদ্য প্রাণ। একথা সত্য যে, ভিটামিন খাদ্যের সহায়ক কিন্তু খাদ্য না খেয়ে শুধু ভিটামিন এ খেলে কোন লাভ হয় না। পুষ্টিকর খাদ্য মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, সবুজ শাক-সবজি, ফলমূল এইগুলো খাওয়ার জন্য সকলের ইচ্ছা থাকে কিন্তু এই সকল খাদ্য দারিদ্র্যের কারণে অনেকের কেনা ক্ষমতা হয় না। ভিটামিন ‘এ’ প্লাস খাওয়ানোর ক্যাম্পেইন বিষয়ে মেডিসিনের প্রফেসর এ.এফ.এম আমিনুল ইসলাম এমআরসিপি (লন্ডন) তাঁর মতামত জানতে চাইলে তিনি জানান, ভিটামিন ‘এ’ অতিমাত্রায় খেলে বিষক্রিয়া হয় এবং ভক্ষণকারী মারাও যেতে পারে। প্রতিবছর ভিটামিন এ ক্যাম্পেইনের সময় কিছু শিশু ক্যাপসুল খাওয়ানের পর অসুস্থ হয়ে পরার এবং মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কর্তৃপক্ষ এইসব মৃত্যুর সঠিক কারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে এইসব মৃত্যুর জন্য অতিমাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ দায়ী নয় বলে মত প্রকাশ শ্বেত ভল্লুকের লিভার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পরা ও কিছু লোক মারা যাওয়ার কারন অনুসন্ধান দেখা যায় শ্বেত ভল্লুকের লিভারে অতিমাত্রায় (১২মিলিগ্রাম প্রতিগ্রামে) ভিটামিন ‘এ’ আছে। দৈনিক ৬ মিলিগ্রাম (২০০০০ ইউনিট ভিটামিন ‘এ’ গ্রহণে ২ মাসের মধ্যে বিষক্রিয়া শুরু হয়। ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুলে ২০০০০০ ইউনিট ভিটামিন ‘এ’ থাকে। রাতকানা, কর্ণিয়ার ক্ষত, চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়া শেষ পর্যন্ত অন্ধত্ব ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবের সবচেয়ে মারাত্মক পরিণতি। যে এলাকাতে অনেকের রাতকানা রোগ আছে বুঝতে হবে সে এলাকাতে জনগণের মধ্যে অপুষ্টি এবং ভিটামিন এ মারাত্মক অভাব আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) এই সব এলাকার জন্যে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন করার পরামর্শ দিয়ে ছিল সারাদেশের জন্য নয়। তাছাড়া প্রতিবছরের জন্যেও নয়। আমাদের দেশে অপুষ্টি আছে কিন্তু মারাত্মক রাতকানা রোগ হওয়ার মত ভিটামিন ‘এ’ অভাব আছে এইরকম কোন বড় এলাকা আছে বলে আমার মনে হয় না। কারণ সবুজ এবং রঙিন সবজির মধ্যে ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়।
মাছ, মাংস, দুধ ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণ সব সময় খেতে না পারলেও সবজি থেকেও কিছু ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়। আমার মতে, পুষ্টিকর খাদ্য না খাইয়ে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানোর কোন যৌক্তিকতা নেই। ভিটামিন ‘এ’ বেশি মাত্রায় অপুষ্টিতে ভুগছে এমন শিশুদের উপরে বিষর মত কাজ করে এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। তাছাড়া একই এলাকাতে অপুষ্টিতে ভুগছে এবং হৃষ্ট-পুষ্ট শিশু পাশাপাশি বাস করে এই অবস্থায় সারাদেশের শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ালে কিছু শিশু অবশ্যই অসুস্থ হওয়া অথবা মৃত্যুর থেকে রক্ষা পাবে না। সব বিষয় বিবেচনা করলে দেখা যাবে যে, ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ানোর ক্যাম্পেইনের ফলে পুষ্টির ক্ষেত্রে দেশের জনগণের কোন উপকার হচ্ছে না।
এই দেশের জন্য ভিটামিন ‘এ’ কেনার দাম আমাদের সরকারে দিক বা কোন বিদেশি সংস্থায় দিক দেখা যাবে প্রচুর লাভ হচ্ছে কোন একটি বিদেশি ঔষধ কোম্পানির। এই দেশে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস খাওয়ানোর প্রথা সর্ম্পূণরূপে বাদ দেওয়া উচিত। ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর যে ক্যাম্পইনের জন্য যে অর্থ ব্যয় করা হয় সে অর্থে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে নিয়মিত দুধ, ডিম মাছ, মাংস ইত্যাদি ভর্তুকি দিয়ে সহজলভ্য করে বিতরণ করতে হবে।

এম.আমিন উল্লাহ মেজু
আগ্রাবাদ চট্টগ্রাম