ভাড়া নিয়ে দিনভর বাড়াবাড়ি

8

তুষার দেব

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর সবচেয়ে বেশি অস্থিরতা তৈরি হয়েছে পরিবহন খাতে। গতকাল শনিবার নগরীতে গণপরিবহন সঙ্কটের পাশাপাশি ভাড়া নিয়ে উত্তোলনকারী ও যাত্রীদের মধ্যে দিনভর বাড়াবাড়ি হয়েছে। সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে অনেকে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করেছে বাড়তি ভাড়া। অনিশ্চয়তার কারণে এ নিয়ে ভাড়া আদায়কারী পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রী উভয়েই অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর গত শুক্রবার রাতেই নগরীতে গণপরিবহণ না নামানোর ঘোষণা দিয়েছিল সড়ক পরিবহন মালিক গ্রæপ ও সিটি বাস মালিক সমিতি। তবে পরদিন দুপুরের পর তারা ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে নগরীর বিভিন্ন রুটে গণপরিবহনের চলাচল স্বাভাবিক করে। শহর এলাকার বাস চলাচলকারী দুটি মালিক সমিতির একটি হচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ এবং অন্যটি হলো সিটি বাস মালিক সমিতি। এর মধ্যে সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব হলেন গোলাম রসুল বাবুল। আর অন্যটির সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বেলাল।
প্রতিদিনের মত গতকাল শনিবার সকালে কর্মস্থলে যেতে বাসা থেকে বের হন একটি বেসরকারি সংস্থার রকিবুল ইসলাম। তবে যাত্রাপথে ভাড়া নিয়ে বাড়াবাড়ির প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জেনেছি। কিন্তু গণপরিবহনের ভাড়া পুনর্নির্ধারণের কোনও তথ্য তো আমরা পাইনি। অথচ, হিউম্যান হলারে কর্মস্থলে আসতে গিয়ে আমাদেরকে বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ভাড়া সমন্বয়ের আগেই বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি অলি আহম্মদ পূর্বদেশকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির খবর চাউর হতে না হতেই পেট্রল পাম্পগুলো তেল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। তারপর নতুন করে নির্ধারিত বাড়তি দামেই পরিবহন শ্রমিদেরকে পাম্পগুলো থেকে জ্বালানি তেল কিনতে হয়েছে। সেই হিসেবে ভাড়া বাড়িয়ে না নিলে তো তাদেরকে লোকসান গুনতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে আলাপ আলোচনা চলছে। শিগগির একটি গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত আসবে বলে আমরা আশা করি।
এদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর আনুষ্ঠানিক কোনও পরিবহন ধর্মঘটের ডাক না দিলেও গতকাল শনিবার বিভিন্ন স্থানে বাস চলাচলে বাধা সৃষ্টি করেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এ কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। সকাল থেকে নগরীর ইপিজেড এলাকা, টাইগারপাস, এ কে খান মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়ার অভিযোগ ওঠে। এ কারণে সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা কমে যায়। অফিস ও কলকারখানাগামী মানুষকে বিপাকে পড়তে হয়েছে। কিছু কিছু গণপরিবহন চললেও ভাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গুনতে হয়েছে। ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে শ্রমিকদের বাগ্বিতন্ডা হয়েছে বিভিন্ন স্থানে। সকালের দিকে কিছু গণপরিবহন চললেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কের বিভিন্ন মোড়ে শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেন। সকাল দশটার দিকে নগরীর এ কে খান মোড়ে শ্রমিকরা সড়কে নেমে লাঠিসোঁটা নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। একইভাবে শ্রমিকদের বাধার মুখে ইপিজেড এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বিরাজমান পরিস্থিতিতে পরিবহন খাতের প্রভাবশালী সংগঠন সিটি বাস মালিক সািমতির সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বেলাল পূর্বদেশকে বলেন, হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করা হলেও ভাড়া তো সমন্বয় করা হয় নি। তাই পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা তৈরির ঝুঁকি রয়েছে। যৌক্তিক কারণেই আমরা গণপরিবহন না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তবে যাত্রীদের ভোগান্তির বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমরা দুপুরের পর পূর্বের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসি। ভাড়া সমন্বয়ের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের বৈঠক চলছে।
সিটি বাস ওনার্স এসোসিয়েশন নামে নগরীতে অপর একটি সংগঠনের তৎপরতা রয়েছে। এই সংগঠনের সভাপতি তরুণ দাশগুপ্ত বলেন, সকালে কিছু গাড়ি চলেছে। তবে বেলা বাড়ার পর থেকে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় শ্রমিকরা বাধা দিচ্ছেন। এ ছাড়া খরচ বেশি পড়ার কারণে শ্রমিকরা বাস চালাতে চাইছে না। ভাড়া পুনর্নির্ধারণ না করা পর্যন্ত আসলে গণপরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরবে না।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট রাত দশটায় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রেরণ করে। এতে ওইদিন দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে লিটারপ্রতি ডিজেল ৮০ টাকা থেকে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে একশ’ ১৪ টাকা, কেরোসিন ৩৪ টাকা বাড়িয়ে একশ’ ১৪ টাকা, অকটেন ৪৬ টাকা বাড়িয়ে একশ’ ৩৫ টাকা এবং পেট্রোল লিটার প্রতি ৪৬ টাকা বাড়িয়ে একশ’ ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ৪ নভেম্বর শুধুমাত্র ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয়েছিল। সেই সময় এই দুই জ্বালানির দাম লিটারপ্রতি ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়। ওই সময় পেট্রোল আর অকটেনের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছিল। আট মাসের ব্যবধানে এবার সব ধরনের জ্বালানি তেলেরই দাম বাড়ানো হলো।