সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিল
ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে ইদানীং সগৌরবে আয়োজন হয় বইমেলা। বিশেষ করে বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলা, ঢাকা জাতীয় বইমেলা, চট্টগ্রামের অমর একুশে বইমেলা ইত্যাদি। বইমেলার বিশেষ গুরুত্ব এবং আবেদনও থাকে যথেষ্ট। বিভাগীয় ও জেলা শহর ছাড়া মফস্বলেও সা¤প্রতিককালে বইমেলার ব্যাপক কদর বেড়েছে এবং সাফল্যের সাথে তা সম্পন্ন হয়। চন্দনাইশ পৌরসদরে উপজেলার প্রথম হিসেবে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম ট্রাস্টের আয়োজনে প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম বইমেলা যাত্রা করে। ভাষা আন্দোলন, শহীদ স্মরণে এবং ভাষা আন্দোলন সূচনাকারী, সাবেক গণপরিষদের সদস্য, ঢাকাস্থ সরকারি বাংলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা, তমদ্দুন মজলিসসহ বহু প্রতিষ্ঠান ও সংগ্রামের অন্যতম স্থপতি প্রিন্সিপাল আবুল কাসেমকে অমর করে রাখতে চন্দনাইশের প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম বইমেলার সূচনা হয়। “বই হোক আমার সাথী, বই হোক সবার সাথী” এ স্লোগান নিয়ে এবার পঞ্চমবারের মত অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম বইমেলা -২০২০। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। শুরু থেকে এ অবধি বইমেলার সকল কার্যক্রম সর্বসাধারণের যথেষ্ট আস্থা ও সুনাম অর্জন করেছে। গণমানুষকে করেছে বইপ্রেমী। এই বইমেলা আরো বেশি উদ্দীপ্ত ও অনুপ্রাণিত করবে এ প্রত্যাশা করেন চন্দনাইশবাসী। প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম বইমেলায় বরাবরই চট্টগ্রাম -১৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য, চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা, পুলিশ প্রশাসন, চন্দনাইশ প্রেস ক্লাব, বরমা প্রেসক্লাব, চন্দনাইশ সাংবাদিক সমিতি, চন্দনাইশ ছাত্র সমিতি-চট্টগ্রাম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা থাকে।
প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম বইমেলার সফল সূচনায় অবদান রাখেন প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম ট্রাস্ট, চন্দনাইশ ছাত্র সমিতি- চট্টগ্রাম, চন্দনাইশ পৌরসভা, ব্যক্তিপর্যায়ে নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম ট্রাস্টের সেক্রেটারি মাহমুদ বিন কাসেম, উপসচিব (তৎকালীন ইউএনও) সনজীদা শরমিন, উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার চৌধুরী, পৌরমেয়র মাহবুব আলম (খোকা), সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা আকতার চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম একরাম হোসেন, তৎকালীন ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া, অধ্যাপক ও লেখক আবু তালেব বেলাল, সাংবাদিক সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিল, চন্দনাইশ ছাত্র সমিতির সভাপতি নোমান উল্লাহ বাহার, গাছবাড়ীয়া পিপিএস মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল হক চৌধুরী, শিল্পোদ্যোক্তা নজরুল ইসলাম, মাস্টার শাহজাহান আজাদ, তানভীর আহমদ সিদ্দিকী প্রমুখ।
প্রতিবছর বিভিন্ন লেখকের বই প্রকাশনা উৎসব ও মোড়ক উন্মোচন হয় এ মেলামঞ্চে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়াও মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচিতে থাকে আলোচনা সভা, কবিগান, পুঁথিপাঠ, জারিগান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ঐতিহাসিক ছবি প্রদর্শনী, স্মরণিকা প্রকাশ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের লেখা বইয়ের প্রকাশনা উৎসব-মোড়ক উন্মোচন ইত্যাদি।
বাংলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, তথ্য অধিদপ্তর, শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ), মনন প্রকাশন, বসন্ত প্রকাশনী, আবীর প্রকাশন, কালধারা, বলাকা, মমভাষা, ডিজিটাল হাউজ, মৌমিতা, সুখপাঠ, মানুষের ঠিকানা, মাতৃভূমি, আধুনিক লাইব্রেরি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের স্টলে বই প্রদর্শনী ও বিক্রি হয় এ মেলায়। বইয়ের তালিকায় থাকে নোবেল বই, ইতিহাস, উপন্যাস, প্রবন্ধ, গল্প, নাটক, কবিতা, ছড়া, কৌতুক, কার্টুন, বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবই ইত্যাদি।
প্রাণের উৎসবে পরিণত হয় চন্দনাইশ পৌরএলাকার এ বইমেলা। নারী-পুরুষ, মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ, ধনী-গরিব, বড়-ছোট সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সমাগম ঘটে এ বইমেলায়। যেখানে কোন থাকে না কোন বৈষম্য, থাকে না কোন সংঘাত। নিকট আত্মীয়ের মত সকলে সমবেত হন এ প্রাণের মেলায়।
উৎসুক জনগণ এ মেলার জন্য অধীর প্রতীক্ষায় উদগ্রীব হয়ে আছেন। এ বইমেলা পল্লী জনপদের জন্য প্রেরণা ও বিখ্যাত ইতিহাস বা ঐতিহ্য হয়ে থাকবে। প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম বইমেলা বরাবরের মত এবারও সাফল্যের সাথে সম্পন্ন হবে -এ প্রত্যাশা সকলের।
লেখক: সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও সংগঠক
