ভালোবাসা সবার জন্য!

6

 

 

ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টের এক সদস্য আমার খুবই পরিচিত। সঙ্গত কারণেই তার নাম প্রকাশ করছি না। এ সদস্য গত কিছু দিন আগে মেসেঞ্জারে আমাকে নক দিয়ে কথা বলতে চেয়েছিল। তার সাথে এর আগে আমার কখনো কথা হয়নি। সেদিনই প্রথম। কথার এক ফাঁকে সে জানালো, এক ধরনের মেন্টাল ট্রমার মধ্য দিয়ে তার দিন যাচ্ছে। কয়েকবার সুইসাইড করারও প্ল্যান করেছিলো। এখনও তার মাথায় এই প্ল্যানিংটা আছে।
আমি কথাটা শুনে কিছুটা হতভম্ব হলাম। এই ছেলের ফেসবুক এক্টিভিটিস খুবই প্রশংসনীয় এবং সে প্রায় সময়ই চলমান ইস্যু নিয়ে ট্রলের মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতামূলক সংবাদ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়। তাকে আমি একজন স্ট্রং মানুষ হিসেবেই চিনি। অথচ সুইসাইড এটেম্পের কথা শুনে আমি তার ব্যক্তিত্বের সাথে কিছুতেই ব্যাপারটা মেলাতে পারলাম না। শেষ পর্যন্ত তার সমস্যার গল্পটা আমি ব্যস্ততার কারণে শুনতে পারিনি। তবে শুনবো হয়তো। তাকে আমি বুঝাতে চেষ্টা করলাম- মৃত্যু আসলে কোন সমাধান না। পৃথিবীর সমস্ত সমস্যাই একসময় সমাধানের পথে হাঁটতে থাকে। এর জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি হলো সময়ের বিনিয়োগ। প্রেমের সম্পর্কে বিচ্ছেদের পর মানুষের বাঁচতে ইচ্ছে হয়না। অনেকদিনের অভ্যাস থেকে বের হতে না পারার যন্ত্রনাটা প্রচুর। হুট করে এটা আসলে নেওয়া যায়না। মরে যেতে ইচ্ছে হয়। তারপর অনেকদিনের সম্পর্কে বিচ্ছেদের পর অনেকদিন কেটে গেলে, মানুষটাকে ছাড়াও বাঁচবার অভ্যাস হয়ে যায়। তখন আর মরতে ইচ্ছে হয়না। সময় মূলত মানুষকে বাঁচতে শেখায়। জটিলতাকে সহজ করে দেয়। সমস্যাকে সমাধান করে কিংবা তার গভীরতাকে নষ্ট করে দেয়।
মাঝে মাঝে বেকারত্বের কষ্টে, অর্থনৈতিক সমস্যায়, পারিবারিক কলহে, ভুল বিশ্বাসে, সন্দেহে, প্রেমহীনতায় মানুষের আর বাঁচতে ইচ্ছে হয়না। মানুষ মুক্তির জন্য মরতে চায়। মানুষগুলো বুঝেনা- মৃত্যু আসলে মুক্তি না। এটা সামাজিক এবং ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ অথবা পৃথিবীর কাছে মানুষ হয়ে জন্মাবার দায়বদ্ধতাকে এড়িয়ে যাওয়ার একটা অনৈতিক কৌশল।
আমি মৃত্যুকে ভয় পাই। অপেক্ষা করি। মৃত্যু তো একদিন নিশ্চিতই। যতটুকু সময় বেঁচে থাকা যায়, সেটাই বোনাস। বেঁচে থাকা যে কেবল আনন্দেরই হতে হবে, এই শর্ত দিয়ে আমাদের কেউ পৃথিবীতে পাঠায়নি। বেঁচে থাকা স্থান, কাল, পাত্র ভেদে আলাদা আলাদা হবে। কারো সুখের জীবন, কারো দুঃখের। আমাদের বরং বেঁচে থেকে দেখতে হবে- প্রাকৃতিক নিষ্ঠুরতা ও জীবনের নির্মমতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে টিকে থাকা যায় কিনা?
এই বেঁচে থাকাটা আসলে একটা চ্যালেঞ্জ! ভীরুরা ভয় পায়। সাহসীরা জীবনকে আগলে ধরে বেঁচে থাকে। একটা কথা মনে রেখো- মৃত্যুচিন্তা মানুষকে জীবনের কাছে হারিয়ে দেয়। এটাই মূলত আমাদের জন্মের ব্যর্থতা। প্রতিদিন কত মানুষ আর ক’টা দিন বাঁচবার আক্ষেপ নিয়ে মরে যায়। কত মানুষ আর ক’টা ঘণ্টা বেশি বাঁচতে চেয়েও বাঁচতে পারেনা। কত মানুষের বাঁচবার প্রত্যশায় কত জোড়া হাত মোনাজাত তুলে বসে থাকে, সে হিসেব আমাদের জানা নেই। মানুষ একেবারে মৃত্যুর কাছাকাছি না গেলে, বাঁচবার আনন্দটা টের পায়না। যখন টের পায়, তখন আর ফেরবার পথ থাকেনা।
আমি সেই ভাইটির কথা বলি। সে আসলে এই পৃথিবীতে একেবারে অপ্রয়োজনীয় কোন মানুষ নয়। গত কিছু দিন আগে আমার ফেসবুক ডিজেবল হওয়ার পর, এই ভাই আমাকে যে পদ্ধতিটা বলে দিয়েছিলো, আমি তার মাধ্যমেই আইডিটা ফেরত পেয়েছি। সে যদি তার মৃত্যুচিন্তাকে সফল করে ফেলতো, আমি এই সাহায্যটুকু পেতাম না। সবসময় নিজের জন্য বাঁচতে নেই। কখনো কখনো মানুষের জন্য বেঁচে থেকে দেখিয়ে দিতে হয়- আমার জন্মকে আমি বৃথা যেতে দিইনি।
বাঁচো, সবার জন্য বাঁচো! পৃথিবী কাউকে কখনো বঞ্চিত করেনি। করবেওনা। একদিন না একদিন সমস্ত দেনা-পাওনার হিসেব মিলিয়ে দিবে। শুধু একটু সময়ের বিনিয়োগ করো, তোমার আগে তোমার সমস্যার মৃত্যু হবে; নিশ্চিত থাকো।