ভালোবাসার চেয়ে বড়ো অস্ত্র আর কিছুই হতে পারেনা

11

লায়ন মোঃ আবু ছালেহ্

প্রায় তিন মাস হয়ে গেছে অনুপমার কথা হয়নি অনিন্দ্যর সাথে। ওদের সম্পর্কটা খুব সাধারণ, কিন্তু প্রায় ওরা লড়াই করে একে অপরের সাথে, প্রায় প্রতিদিনই ছোটখাটো কোনো বিষয়ে ঝগড়া হয় ওদের কিন্তু দিনশেষে একে অপরকে ছেড়ে থাকতে পারেনি কখনও, মানিয়ে নিয়েছে, কেউ সরি বলেই দেয় দোষ না থাকা সত্তে¡ও, ওরা ওদের সম্পর্কের গুরুত্ব টুকু বোঝে। এগুলো সম্পর্কে ভীষন ভাবে প্রয়োজন, গতানুগতিক সম্পর্কের বাইরে এই ঝগড়া গুলোই ইউএসপি হয়ে ওঠে, মাঝে মাঝে এই ছোট ছোট ঝগড়ার ফলে একে অপরের পছন্দ অপছন্দ বোঝা যায়, আরও কাছে আসা যায়। মাঝে মাঝে সম্পর্কে দূরত্ব প্রয়োজন হয় গুরুত্ব বোঝার জন্য।
এর আগে ওদের ঝগড়া হলে খুব জোর একদিন কথা না হয়ে থেকেছে তারপর কেউ না কেউ আগে এসে ঠিক করে নেয়, তবে এবারের টা তিন মাস হয়ে গেছে, যেটা আগে ঘটেনি কখনও। এর আগে যত ঝগড়া হয়েছে ওদের বারবার মনে হয়েছে এটাই শেষ কথা ওদের, এরপর হয়তো আর কথা হবেনা, কিন্তু সব ঠিক হয়েই যেতো, ইগো ওদের মাঝে কখনও আসেনি আর সেটাই আসল কারন ওদের এতদিন একসাথে পথ চলার।
শেষ ঝগড়াটাও আগের বারগুলোর মতোই ছোট সামান্য বিষয় নিয়ে শুরু হয়েছিল, দুজন দুজনকে অভিযোগ, এক্সপ্ল্যানেশন, আর সেটা না বুঝে আরও জোর গলায় চেঁচানো, কেউ কারোর নিজের ভুল না বুঝে জিতে যাওয়ার এই প্রচেষ্টাই ওদের সম্পর্কের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনুপমা খুব সহজে কাঁদে না কিন্তু কাঁদলে সেটা সত্যি সিরিয়াস বিষয়, অনিন্দ্য এসব জেনেও জোর গলায় চিৎকার করেছিল সেদিন। অনুপমা ফোন কেটে সুইচ অফ করে দেয় আর তারপর থেকে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টা সবজায়গায় অনিন্দ্যকে রাগের মাথায় বøক করে ইনফ্যাক্ট তারপর থেকে অনুপমা সোস্যাল মিডিয়ায় আর অনই হয়নি।
অনিন্দ্য নিজের দোষ বুঝতে পেরেছিল কিন্তু সাহস সঞ্চয় করে একবার মুখ ফুটে সরি বলতে পারেনি অনুপমাকে, বুঝেছিল অনেক দেরি হয়ে গেছে। অনুপমাও অনেক বার চেষ্টা করেছে বলার কিন্তু কিছু একটা বারবার আটকে দিচ্ছে ওকে, ও পারছেনা। অনুপমা ভেবেছিল অন্তত আনব্লক করতে অনিন্দ্যকে যাতে ও নিজে থেকে কিছু বলতে আসুক একবার, ভীষন মিস করছে ও, ফিরিয়ে নেবে ও কিন্তু অনিন্দ্যর মনে যদি ওর জন্য জায়গা না থাকে আর? কাজটা অনুপমাও ঠিক করেনি, ও নিজে থেকে সরি বলবে কি? নাহ্! হয়তো দেরি হয়ে গেছে, এতদিন অনিন্দ্যই নিজে থেকে প্রতিবার ঝগড়া মিটিয়ে এসেছে, ও অনুপমাকে ছাড়া একমুহুর্ত থাকতে না পেরে আগে মেসেজ করতো, ফোন করতো অথবা অফিসের সামনে ফুল, আইসক্রিম বা চকলেট নিয়ে আসতো, এবার সেটা হয়নি আর তিন তিনটে মাস কেটে গেছে, এবার ভুলে থাকাটাই হয়তো সবচেয়ে ভালো হবে ওর জন্য।
অনুপমা সেদিন রাতে শেষবারের মতো বøক খুলে ওর প্রোফাইল টা সার্চ করলো, তিন মাস ওরও কোনও অ্যাক্টিভিটি নেই টাইমলাইন জুড়ে, মোবাইল আপলোডে গিয়ে ছবিগুলো দেখছে এমন সময় একটা কল ঢুকলো ফোনে, ইটস্ অনিন্দ্য। টেলিপ্যাথি কিনা জানিনা তবে রিসিভ করবে কি করবেনা ভেবে হাত কাঁপছে অনুপমার, বুকের ধুকপুকানি দ্বিগুণ আর সেটার শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে ও। ফাইনালি রিসিভ করেই ফেললো আর ওপাশ থেকে শোনা গেল,
‘দেখ সিন ক্রিয়েট করবিনা, ব্যালকনির নিচে দাঁড়িয়ে আছি স্কুটারে এখুনি নেমে আয় আর প্লিজ নাটক করিসনা, আমি আর পারছিনা, তাড়াতাড়ি আয়…’
অনুপমা বুঝতে পারছেনা এগুলো সত্যি হচ্ছে কিনা স্বপ্ন দেখছে, চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে আবার অদ্ভুত রকম আনন্দে মুখে হাসিও রয়েছে। অনুপমা দৌড়ে অনিন্দ্যর কাছে পৌঁছাতেই অনিন্দ্য ওকে জড়িয়ে ধরে, আর কেঁদে ফেলে।
‘ফিরে আয় প্লিজ, তুই জানিস তোকে ছাড়া আমি কিছুই না, তিনমাস কিভাবে কেটেছে আমিই জানি, আর এটাও জানি তুইও ভালো ছিলিনা, আগের কথা সব গুলি মার ওসব ভালো লাগছেনা বলতে। প্লিজ থেকে যা, আর যাসনা প্লিজ।’
ওদের গল্প ইন্টারভালের পর আবার দৌড়াতে শুরু করেছে, অনুপমা নিজের পছন্দের চকলেট পেয়ে সব ভুলে গেছে, তবে একটু ধমক দিচ্ছে অনিন্দ্যকে আবার সিগারেট খাওয়া নিয়ে। তবে ওরা প্রমাণ করে দিয়েছে এই জীবন ঘৃণা, অবহেলা, স্বার্থ, অজুহাত এসবের জন্য খুব ছোট, এগুলোকে সম্পর্কের মাঝে আনতে নেই, পৃথিবীতে একটাই সত্যি সবসময় মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, আর সেটা হলো ভালোবাসা। ভালোবাসার চেয়ে বড়ো অস্ত্র আর কিছুই হতে পারেনা।