ভারী বর্ষণের সতর্কবার্তা

21

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার প্রভাবে আজ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘণ্টায় চট্টগ্রামসহ তিন বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সতর্কবার্তা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গতকাল সোমবার অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে অতি ভারী বর্ষণের এ সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। এতে নগরীতে জলাবদ্ধতার আতঙ্ক ভর করেছে নিম্নাঞ্চলের মানুষের মাঝে।
এদিকে, সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাসমূহে গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার প্রভাব থাকায় সমুদ্র বন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। গতকাল সোমবার অধিদপ্তরের প্রচারিত সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপক‚লীয় এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে সমুদ্র বন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দেশের উপক‚লীয় এলাকার উপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আলামত পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ কারণে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজারসহ উপক‚লীয় এলাকাসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপক‚লের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ছয়টার পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগের উপক‚লীয় অঞ্চল হাতিয়ায় দেশের সর্বোচ্চ ৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া রাজধানী ঢাকায় ৩১, চট্টগ্রাম মহানগর ও আশপাশের এলাকায় ১২, কক্সবাজারে ২৯ এবং কুতুবদিয়ায় ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এর আগে আবহাওয়ার তিন মাস মেয়াদী (মে থেকে জুলাই) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মে মাসে ভারী বৃষ্টিপাত ও নিম্নচাপের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কতিপয় স্থানে স্বল্প মেয়াদী আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তবে এবার জুন মাসের প্রথমার্ধেই সারাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বা বর্ষাকাল বিস্তার লাভ করতে পারে। এ মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিস্নাতের পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি পারে। পরবর্তী জুলাই মাসেও স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার আলামত বিদ্যমান রয়েছে।
অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বিগত ১৯৯৭ সালের পর ২০১৯ সালের বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছিল দক্ষিণ চট্টগ্রাম। ভারী বর্ষণের পাশাপাশি উজান থেকে নদ-নদী দিয়ে নেমে আসা ঢলের পানিতে সড়ক-মহাসড়ক থেকে শুরু করে বাড়ি-ঘর ও মাঠ-ঘাট তলিয়ে যায়। মহাসড়কের ওপর দিয়ে কয়েক ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হয় বানের পানি। টানা ১০ দিনের ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, পটিয়া, আনোয়ারার পাশাপাশি উত্তরের ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, বোয়ালখালী উপজেলার প্রায় সাড়ে চার লাখ বাসিন্দাকে সপ্তাহকালেরও বেশি সময় ধরে পানিবন্দি অবস্থায় অনাহারে-অর্ধাহারে দিনযাপন করতে হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, চট্টগ্রাম-বান্দরবান ও চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মহাসড়ক। সেসময় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী, হালদা ও সাঙ্গু নদীর পানি কয়েকদিন ধরে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। একইভাবে এবারও ভারী বর্ষণের পাশাপাশি উজানের পাহাড়ি ঢলের পানিতে দেশের অন্য অঞ্চলের পাশাপাশি চট্টগ্রামও বন্যার ঝুঁকিমুক্ত নয় বলে আভাস দেয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, চার বছর আগে অর্থাৎ বিগত ২০১৯ সাল বা ১৪২৫ বঙ্গাব্দের বৈশাখেই ‘শ্রাবণের উপস্থিতি’ আগাম বর্ষার একধরণের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। সেই বছর মধ্য বৈশাখ পর্যন্ত দেশে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, তা বিগত সাড়ে তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে, আষাঢ়-শ্রাবণকেই বর্ষাকাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বর্ষার রেশ থেকে যায়। অর্থাৎ জুনের শেষ থেকে আগস্টের শেষ সপ্তাহ পর্যন্তই বর্ষা মৌসুম ধরা হয়।