ভারত জানালেই পিকে হালদারকে আনার ব্যবস্থা : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

8

পূর্বদেশ ডেস্ক

হাজার হাজার কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারে অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার হালদারকে (যিনি পি কে হালদার নামে বেশি পরিচিত) গ্রেপ্তারের বিষয়ে ভারত এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সরকারকে কিছু জানায়নি। ভারত এ ব্যাপারে জানালেই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
গতকাল রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, পি কে হালদার ওয়ান্টেড ব্যক্তি, ইন্টারপোলের মাধ্যমে অনেক দিন ধরে তাকে চাচ্ছি।
সে গ্রেপ্তার হয়েছে, তবে আমাদের কাছে এখনও (ভারত থেকে) অফিসিয়ালি কিছু আসেনি। আমাদের যা কাজ থাকে, তা হল আইনগতভাবে তাকে…। ‘শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: ইতিহাসের পুনঃনির্মাণ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পি কে হালদারের বিষয়ে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে বাংলাদেশের আর্থিক খাত থেকে বিপুল অর্থ আত্মসাতের পর পালিয়ে থাকা এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদার নামে পরিচিত।
হাজার কোটি টাকা আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে বছর কয়েক ধরে ফেরারী জীবনযাপন করা পি কে হালদার কানাডায় পালিয়েছিলেন বলে গুঞ্জন ছড়ালেও গ্রেপ্তার হয়েছেন ভারতে; যেখানে তার ও সহযোগীদের বিপুল সম্পদ রয়েছে বলে অভিযোগ আসছে।
ভারতের ব্যাঙ্কশাল স্পেশাল সিবিআই আদালত পি কে হালদার ও তার চার সহযোগীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে বলে খবর এসেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে।
পি কে হালদার গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে কীভাবে দেশে ফিরিয়ে আনা যায়, সে বিষয়টিই সামনে আসছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শনিবার বলেছিলেন, ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে জানালে যত দ্রুত সম্ভব বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তবে কবে নাগাদ তাকে আনা সম্ভব, সে বিষয়ে কোনো ধারণা তিনি দিতে পারননি।
বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পি কে হালদারের বিপুল অর্থ আত্মসাতের ঘটনা সামনে আসার পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত নামলে গা ঢাকা দেন তিনি।
দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর ভারতে গ্রেপ্তারের খবরের সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রী সুস্মিতা সাহা এবং তার ভাইকেও পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়।
হঠাৎ করে শুক্রবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তার এবং সহযোগীদের সম্পদের খোঁজে অভিযান শুরু হলে নতুন করে ওঠে আলোচনা। তাদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে পশ্চিমবঙ্গের অন্তত ১০ জায়গায় অভিযানের খবর শুক্রবার ভারতের সংবাদ মাধ্যমে আসে।
দেশটির কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এই অভিযান চালায় পি কে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধা, প্রীতিশ কুমার হালদার, প্রাণেশ কুমার হালদার এবং তাদের সহযোগীদের নামে থাকা বাড়ি ও সম্পত্তিতে।
এদের সবাইকে বাংলাদেশি নাগরিক উল্লেখ করে তাদের নামে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে সম্পত্তি রয়েছে বলে খোঁজ পাওয়ার কথাও এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় ইডি। এর একদিন বাদেই পি কে হালদারের আটকের খবর আসে।
এদিকে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পি কে হালদারকে দেশে ফেরাতে অন্তত তিনমাস লাগতে পারে বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবীরা ধারণা করছেন। অবশ্য অবৈধভাবে নাগরিকত্ব নেয়ার অভিযোগে ভারতে তার বিরুদ্ধে বিচার শুরু হলে সেটি সময় সাপেক্ষও হয়ে উঠতে পারে। কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বাংলাদেশের আর্থিক খাত থেকে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠার পর কয়েক বছর ধরে পলাতক ছিলেন পি কে হালদার। শনিবার তাকে গ্রেপ্তার করে ভারতের আর্থিক গোয়েন্দা দপ্তর। সেই সময় পি কে হালদারসহ ছয়জনকে আটক করা হয়, যার মধ্যে তার স্ত্রীও রয়েছেন।
ঢাকার একটি ব্যাংক ও অপর একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠার পর দীর্ঘদিন ধরেই তিনি পলাতক ছিলেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক পি কে হালদার এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মোট ৩৪টি মামলা করেছিলো। এসব মামলায় তাদের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়।
দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি হবে
পি কে হালদারকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসে বিচারের মুখোমুখি করার কথা জানিয়েছেন প্রধান আইন কর্মকর্তা বা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
তিনি বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ফিনান্সিয়্যাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, দেশের সংস্থাগুলো কিন্তু তৎপর, সজাগ আছে। এজেন্সিগুলো কাজ করছে, আপনারা দেখবেন অচিরেই তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের সম্মুখীন করা হবে।
পি কে হালদারের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি অবৈধভাবে ভারতের পাসপোর্ট ও ভোটার আইডি কার্ড নিয়েছেন। ভারতের আইন অনুযায়ী এটি গুরুতর অপরাধ। এই অপরাধে তার বিরুদ্ধে ভারতে একটি মামলা দায়েরর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলছেন, ভারতের আইনে জাল-জালিয়াতির কারণে তার বিচার হবে। সে মিথ্যা নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট গ্রহণ করেছে, সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু আমাদের এখানে যে আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলাগুলো তো বিচারাধীন রয়ে গেছে। সেই মামলায় বিচারের জন্য তাকে আনতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আশা করি দ্রুততার সঙ্গে তাকে নিয়ে আসা সম্ভব হবে।
শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির পাশাপাশি রবিবার বাংলাদেশে বৌদ্ধ পূর্ণিমার সরকারি ছুটি থাকায় দপ্তরগুলো বন্ধ ছিল। ফলে পি কে হালদার গ্রেপ্তার হলেও সেই বিষয়ে এখনো বাংলাদেশে কোন কর্মকান্ড শুরু হয়নি। আগামীকাল (আজ) আশাকরি হয়তো এই বিষয়ে আলাপ আলোচনা শুরু হবে, তিনি বলছেন। পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের আটই জানুয়ারি রেড নোটিশ জারি করেছিল ইন্টারপোল।
কীভাবে ফেরাতে পারে বাংলাদেশ
ভারতের সঙ্গে ২০১৩ সালে একটি বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি করে বাংলাদেশ। সেই চুক্তির আওতায় দুই দেশ বন্দি বিনিময় করে থাকে। এই চুক্তির স্বাক্ষরের পর ভারতের উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলায় আলোচিত নূর হোসেনকে এই আইনে ফিরে আনা হয়।
এই চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ বা ভারতের কোন অপরাধী আরেক দেশে লুকিয়ে থাকলে অথবা সাজাপ্রাপ্ত অবস্থায় কারাগারে থাকলে তাকে নিজ দেশে হস্তান্তর করা যাবে।
কিন্তু কারও বিরুদ্ধে সেই দেশে কোন মামলা বিচারাধীন থাকলে তাকে হস্তান্তর করার কোন বিধান এই আইনে রাখা হয়নি।
বিবিসি জানিয়েছে, প্রশান্ত কুমার হালদারকে গ্রেপ্তারের পর অশোক নগরের স্থানীয় আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। সেখানে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে থাকা মামলার বিবরণসহ ভারতে অর্থ পাচারের অভিযোগও আনা হয়েছে। মঙ্গলবার মামলাটি কলকাতার অর্থ পাচার আদালতে মামলা স্থানান্তর হবে। এরপর সেখানেই পি কে হালদারে বিচার কার্যক্রম চলবে। খবর বিবিসি, বিডিনিউজ।