ভাদ্রের শেষেও ভারী বৃষ্টি উপকূলে

25

ঋতুচক্রের হিসাব মেনে শরতের আয়ুষ্কাল অর্ধেক ফুরোতে চলেছে। কিন্তু, আকাশে পেঁজা তুলোর মত সাদা মেঘের ভেলা চোখে পড়ছে না গত কয়েকদিন ধরে। উল্টো বৃষ্টিবাহী কালো মেঘে ঢাকা আকাশের গোমরা মুখ। উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল হয়ে ওঠা মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভাদ্রের একেবারে শেষপ্রান্তে এসেও ভারী বৃষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকা। তবে গতকাল শুক্রবার থেকে ফের দম হারিয়ে প্রবল থেকে মাঝারি অবস্থার পথ ধরেছে মৌসুমি বায়ু। এ কারণে আজ শনিবার থেকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাস পাবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের রেকর্ড অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘন্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের আওতাধীন কক্সবাজারের সমুদ্রউপকূলবর্তী দ্বীপাঞ্চল কুতুবদিয়ায় দেশের সর্বোচ্চ একশ’ ৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। একইদিন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ একশ’ চার মিলিমিটার বৃষ্টিপাতও রেকর্ড করা হয়েছিল চট্টগ্রাম মহানগর ও আশপাশের এলাকায়। সেই ধারাবাহিকতা মেনে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘন্টায়ও দেশের সর্বোচ্চ একশ’ ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে চট্টগ্রামের দ্বীপাঞ্চল সন্দ্বীপে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল হাতিয়ায়। এছাড়া, চট্টগ্রাম মহানগর ও আশপাশের এলাকায় ১১ মিলিমিটার, সীতাকুন্ডে ৬৬, রাঙামাটিতে ১৫, কুমিল্লায় ১১, নোয়াখালীতে ৬২, ফেনীতে ৬১, কক্সবাজারে ১১, কুতুবদিয়ায় ১০ এবং টেকনাফে ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ মো. আফতাব উদ্দিন জানান, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় বিরাজমান থাকার কারণে গত কয়েকদিন চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হয়েছে। তবে, মৌসুমী বায়ু ফের ছন্দ হারিয়ে মাঝারি অবস্থায় গেছে। তা ক্রমশ দুর্বল হতে পারে। তাতে পরবর্তী আটচল্লিশ ঘন্টা বা দু’দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাস পাবে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী চব্বিশ ঘন্টার জন্য প্রচারিত পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল অতিক্রম করে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় বিরাজমান। এর প্রভাবে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরণের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
এর আগে গত পয়লা সেপ্টেম্বর দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দেয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটির নিয়মিত বৈঠক শেষে জানানো হয়েছিল, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু জায়গায় স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। ভারী মৌসুমি বৃষ্টির কারণে এই বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া, এ মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে এক থেকে দুটি মৌসুমী নিম্নচাপ। সেপ্টেম্বরে বৃষ্টিপাতের সম্ভাব্য পরিমাণের বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়, এ মাসে ঢাকায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৭৮ মিলিমিটার হলেও ২৫০ থেকে ৩০৫ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। একইভাবে ময়মনসিংহে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩৫২ মিলিমিটার হলেও তা ৩১৫ থেকে ৩৮৫ মিলিমিটার, চট্টগ্রামে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩১৭ মিলিমিটার হলেও তা ২৮৫ থেকে ৩৮৫ মিলিমিটার, সিলেটে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪০৭ মিলিমিটার হলেও তা ৩৬৫ থেকে ৪৫০ মিলিমিটার; রাজশাহীতে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩১৫ মিলিমিটার হলেও তা ২৮৫ থেকে ৩৪৫ মিলিমিটার; রংপুরে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪১৭ মিলিমিটার হলেও তা ৩৭৫ থেকে ৪৬০ মিলিমিটার, খুলনায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪১৭ মিলিমিটার হলেও তা ২৫০ থেকে ৩০৫ মিলিমিটার এবং বরিশালে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩১৬ মিলিমিটার হলেও তা ২৮৫ থেকে ৩৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে।