ভাটিয়ারিতেই হচ্ছে চট্টগ্রামের এফডিসি

74

ওয়াসিম আহমেদ

এক বছর আগে বীর চট্টলার মানুষকে সুখবর দিয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) চট্টগ্রাম শাখা স্থাপনের কথা জানিয়েছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ইতোমধ্যে জঙ্গল ভাটিয়ারি মৌজায় ৭০ একর জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। একইসাথে অবকাঠামো গড়ে তুলতে বিএফডিসির ২৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। তথ্যমন্ত্রীর একান্ত প্রচেষ্টার কারণে ঢাকার পর চট্টগ্রামেই একমাত্র শাখা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ থেকে বাস্তবায়নের পথ সুগম হয়েছে বলে বিশ্বাস সংশ্লিষ্টদের।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে তথ্য মন্ত্রীর উদ্যোগেই এক একর জমি ব্যবহারিক ভিত্তিতে বিএফডিসির কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ। জায়গা পেয়ে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করে বিএফডিসি। প্রকল্পটি অর্থমন্ত্রণালয়ের ছাড়ের পর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য যাবে। বিষয়টি পূর্বদেশকে নিশ্চিত করে বিএফডিসির তত্ত্বাববধায়ক প্রকৌশলী (প্রকল্প) কেএম আয়ুব আলী বলেন, ‘বিটিভি এক একর জায়গা দিয়েছে চট্টগ্রামে এফডিসি করার জন্য। এ জায়গার উপর একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় হয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলো। বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিরূপ অবস্থা পার হওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড় করবে কিনা, তা জানতে চেয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে। ওখান থেকে ছাড়পত্র আসলে প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য যাবে। তবে পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ৭০ একরের মত জায়গা দরকার। এ জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে খাস জায়গা চাওয়ার প্রক্রিয়া অবধি তিনি অবগত ছিলেন বলে পূর্বদেশকে জানান প্রকৌশলী আয়ুব আলী।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল হাসান পূর্বদেশকে জানান, চট্টগ্রাম এফিডিসি করার জন্য ৭০ একর জায়গা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। প্রথমে হাটহাজারীতে একটি জায়গা পছন্দ করা হয়। তাতে সমস্যা দেখা দিলে সেটা বাদ দিয়ে জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় জঙ্গল ভাটিয়ারি মৌজায় জায়গা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে ইতোমধ্যে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে পূর্বদেশকে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।
চট্টগ্রামের সন্তান তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামে এফডিসি স্থাপনের উদ্যোগ, বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছেন। তিনি গত বছর এক অনুষ্ঠানে বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রামে এফডিসির একটি স্থাপনা সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য আনন্দ ও উৎসাহের। চলচ্চিত্রের শ্যুটিং স্পট এবং অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণে পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষা এবং নান্দনিকতার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন মন্ত্রী। একইভাবে ‘দামপাড়া’ সিনেমা নির্মাণ শুরুর আনুষ্ঠানিকতায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রামের এফডিসি নিয়ে বলেন, চট্টগ্রামে যারা ছবি বানাতে চান, এটা তাদের জন্য সুখবর। চট্টগ্রামে ঢাকার এফডিসির আদলে একটি প্রতিষ্ঠান নির্মিত হবে। সেটি বিএফডিসির অধীনেই থাকবে বলেও উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী।
চট্টগ্রাম এফডিসি নির্মাণে একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন ও নির্মাতা আহমেদ ইকবাল হায়দার পূর্বদেশকে জানান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ভৌগোলিক কারণে সিনেমা তৈরিতে চট্টগ্রামে শ্যুটিং করতে আসতে হয়। আবার চট্টগ্রামের অনেক নির্মাতাকে ঢাকায় কাজ করতে হবে। সম্ভাবনা ও সুযোগ থাকা স্বত্তে¡ও এফডিসির মত অবকাঠামো গড়ে উঠেনি। যেটা নির্মাণের কথা শুনে আসছি সেই পূর্ব পাকিস্তানের আমল থেকে, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। গত বছর নতুনভাবে উদ্যোগ নেয়া হলে এখন প্রকল্প ও জায়গা বরাদ্দ দুটোই এফডিসি বাস্তবায়নের উদ্যোগ চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য মহাআনন্দের খবর।
সরকারের এমন উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, পুরো পৃথিবীজুড়ে চলচিত্র শিল্প অনেক এগিয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে প্রযুক্তি ও অবকাঠামো গড়ার সময় সেটি খেয়াল রাখতে হবে। যারা এফডিসি ব্যবহার করবেন তাদের মতামত ও পরামর্শ নেওয়া উচিত। তা না হলে এফডিসি হবে ঠিকই, সত্যিকারের উদ্দেশ্য সফল হবে না। বিএফডিসির বিভিন্ন ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে চট্টগ্রামের এফডিসিতে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি।