ভাগ-বাঁটোয়ারা

15

ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী

দুইজন জমজ ভাই। দু,জনই ছিলো স্বল্প জন্ম-ওজনী। এ নিয়ে মা-বাবার কত দুশ্চিন্তা। কত বিনিদ্র রজনী। যদিও কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করা এ সকল নবজাতক শিশুর অধুনা ব্যবস্থাপনায় অনেক উন্নতি সাধন ঘটেছে। জমজ সন্তান দুই মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ভ‚মিষ্ঠ হয়েছে মহাবিশ্বে পৃথিবী নামক এই গ্রহে। মাতৃ জরায়ুতে দুজনের গর্ভ সঞ্চার মুহূর্ত ছিল একই। কিন্তু সামান্য আগেভাগে জন্ম নেওয়াতে একজন বড়, অন্য জন ছোট এরকম উপাধিতে ভ‚ষিত। তাদের নামকরণের পূর্বে প্রেসক্রিপশনেও তাই একজন ‘এ-বেবি’ ও আরেকজন ‘বি-বেবি’ এভাবে লেখা হতো। শৈশব-কৈশর পেরিয়ে এগুতো থাকে অনিক, আবীরের জীবনচক্র। মা-বাবা বিজ্ঞানসম্মত যত্ন পরিচর্যায় সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে বেড়ে উঠে দুই সন্তান। ভালো স্কুলে পড়ে। পরীক্ষার তুখোড় ফলাফল । তারই রেশ ধরে উচ্চ শিক্ষার জন্য দুই ছেলেকে উন্নত বিশ্বে পাঠিয়ে দেন মা-বাবা। অনিক আমেরিকাতে পিএইচডি কোর্স সম্পন্ন করে এখন সংসারী। আবীর আছে কানাডায়। বড় কোম্পানির চাকুরে। নিজস্ব গাড়ি-বাড়ি। দৈনন্দিন রুটিনে ব্যস্ততার ছাপ। দুই ছেলের যশ-উন্নতি নিয়ে আত্মীয়-স্বজনকে বড় মুখ করে বলতে থাকেন-অনিক, আবীরের বৃদ্ধ মা-বাবা। আসলে এও এক ধরনের সুখ। দেশের কথা উঠলে অনেকে যেমন গর্ব করে বলেন- আমাদেরও একজন নোবেল-জয়ী আছেন। অনিক, আবীরের মা-বাবা আছেন বাংলাদেশে। ফ্ল্যাটে থাকেন। ছেলে দ’ুজনের সাথে মাঝে-মধ্যে ফোনালাপ হয়। চাকুরি ও পরিবার সামলাতে বেশ হিমশিম অবস্থা নাকি তাদের। দুই বয়স্ক জনের দেখা-শোনার ভার মূলত কাজের লোকের উপর। মানুষ ঠিকঠাক না পাওয়া গেলে দিন যাপন অনেক কষ্টকর হয়ে উঠে। বিশেষত যদি দেহে অসুখ হামলে পড়ে। কয়দিন আগে অনিক আবীরের বাবা গভীর রাতে হঠাৎ বুকে ব্যথার অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর আর ঘরে ফেরা হয়নি। তিলেতিলে মানুষ করা বিদেশে প্রতিষ্টিত দুই ছেলে অবশ্য বাবার অন্তিম দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে ভিডিও কলের মাধ্যমে। ইদানীং এটাই রেওয়াজ। দুঃসংবাদ শেষে আমেরিকা থেকে দেশে ছুটে আসে অনিক। মা এখন একা। তাঁকে যে-যেভাবে পাচ্ছেন সান্ত¡না দিচ্ছেন। সহমর্মিতা জানাচ্ছেন কাছের ও দূরের আত্মীয় পরিজন। তাদের খালামণি অনিককে ঘরের এক কোণায় একা পেয়ে জিজ্ঞেস করেÑ ‘হ্যাঁ রে অনিক, আবীর কোথায়? কেন আসেনি?
‘অনিক, এবার দেশে গিয়ে তুই সব ক্রিয়া-কর্ম সম্পন্ন করে আয়। মায়ের মৃত্যুতে তোকে যেতে হবে না। সেবার আমি গিয়ে সবকিছু সামলে নেবো।’ এই ছিল বাবার মৃত্যু ঘিরে দুই ভাইয়ের ভাগ-বাঁটোয়ারা শলা-পরামর্শ।

লেখক- প্রফেসর ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।