বড় বড় প্রতিষ্ঠান ‘টেনে তুলছে’ শেয়ারবাজারকে

20

করোনাকালে অর্থনীতিতে যে কয়েকটি খুশির খবর— তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শেয়ারবাজার চাঙা হওয়া। এখন এই বাজার নিয়ে বড় কিছু আশা করার সময় এসেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) নতুন নেতৃত্ব আসার পর থেকে বাজার শুধু ঘুরেই দাঁড়ায়নি, একদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে, অপরদিকে বড় বড় প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ আসতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের বড় কর্পোরেট গ্রূপ ওয়ালটন এসেছে। এছাড়া দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও শেয়ারের আবেদন শুরু হয়েছে গত ১৭ নভেম্বর। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুঠোফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা আইপিওতে ৫২ কোটির বেশি শেয়ার বিক্রি করবে। দীর্ঘ ১২ বছর পর বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) নিয়ে আসছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। এই ব্যাংকটিকে গত বুধবার (১৮ নভেম্বর) আইপিও ছেড়ে ১২০ কোটি তোলার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ফলে লাখ লাখ মানুষের স্বপ্ন ভাঙা এই শেয়ারবাজার ফের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে।
এদিকে বাজারের তথ্য বলছে, করোনা ভাইরাস মহামারিতে কয়েক মাসের অর্থনৈতিক অচলাবস্থার মধ্যেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকিং খাতে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। জুলাই-সেপ্টেম্বরের শেষে প্রায় সবগুলো ব্যাংক মুনাফায় রয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ২৯টি ব্যাংকের সবক’টির মুনাফার চিত্র এসেছে। এর মধ্যে ১৯টি ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ‘একদিকে সুশাসনের চেষ্টা চলছে, অন্যদিকে বড় বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ আসা শুরু হয়েছে, ফলে এখন এই বাজার নিয়ে মানুষ স্বপ্ন দেখবেন’। তিনি বলেন, ‘এখন শতভাগ সুশাসন প্রতিষ্ঠা হলে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার হবে বিশ্বের বড় বড় বাজারের একটি’।
এদিকে বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জুলাই থেকে গত কয়েক মাস ধরে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। লেনদেন বাড়ছে। সূচকও বাড়ছে। তবে প্রতি সপ্তাহেই সব সূচক বাড়ছে বা লেনদেন বাড়ছে এমনটি নয়। কোনো সপ্তাহে সূচক বাড়ছে, আবার কোনো সপ্তাহে হয়তো সূচক কমছে, অথবা কোনো সপ্তাহে লেনদেন বাড়ছে। এভাবেই বাড়া-কমার মধ্যদিয়ে বাজার গতিশীল থাকছে। এদিকে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের মধ্যদিয়ে গত সপ্তাহ পার করেছে দেশের শেয়ারবাজার। এতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ওপরে হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে এই অর্থ হারিয়েছেন তারা। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসই’র বাজার মূলধন কমেছে ৫ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা।
এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২৫ দশমিক শূন্য ৭ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৩৭ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট। প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকও। সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ১০ দশমিক ২৬ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি কমেছিল ১৪ দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্ট।
এদিকে প্রধান ও বাছাই করা মূল্য সূচকের পতন হলেও বেড়েছে ডিএসই শরিয়াহ্। গত সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছে ১১ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৩ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্ট ।
মূল্য সূচকের মিশ্র প্রবণতার সপ্তাহে ডিএসই-তে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ৯৯টি প্রতিষ্ঠান। দাম কমেছে ১৯৯টির। আর ৬৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৭৮১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৯১১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন কমেছে ১২৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বা ১৪ দশমিক ২১ শতাংশ।
আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৯০৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৪ হাজার ৫৫৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ৬৪৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। খবর