বড় চালানসহ আইসচক্রের হোতা ঢাকায় গ্রেপ্তার

5

পূর্বদেশ ডেস্ক

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গতকাল শনিবার ভোরে অভিযান চালিয়ে অবৈধ মাদক ক্রিস্টাল মেথ বা আইসের সবচেয়ে বড় চালান জব্দ করেছে র‌্যাব। এসময় একটি সিন্ডিকেটের মূলহোতা খোকন নামের একজনসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযানে সাড়ে পাঁচ কেজি আইস উদ্ধার করেছে র‌্যাব। সা¤প্রতিক সময়ে উদ্ধার আইসের চালানের মধ্যে এটিই বড়। গতকাল শনিবার র‌্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তার একজন টেকনাফ ‘আইস সিন্ডিকেটের হোতা’ খোকন। তাদের কাছ থেকে গুলিসহ একটি বিদেশি অস্ত্রও পাওয়া গেছে।
র‌্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান গণমাধ্যমকে বলেন, রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে অভিযান চালিয়ে আইস সিন্ডিকেটের মূলহোতা খোকন ও তার এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে সাড়ে পাঁচ কেজি আইস, বিদেশি অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। এখন পর্যন্ত এটিই জব্দ করা আইসের সবচেয়ে বড় চালান, যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা।
মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলছেন বাংলাদেশের মাদক ব্যবসায়ীরা। আর এই সুযোগে প্রতিবেশি দেশটির মাদক ব্যবসায়ীরাও তাদের প্রলুব্ধ করতে গ্রহণ করছে বিভিন্ন ধরনের ‘বিজনেস স্ট্র্যাটেজি’। যার মধ্যে একটি হলো- বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর হাতে কখনও ভয়ংকর মাদক আইসের চালান ধরা পড়লে তার মূল্য পরিশোধ করতে হতো না ব্যবসায়ীদের। গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর এমন তথ্য পাওয়া গেছেবলে গতকাল দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মুঈন সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
র‌্যাব বলছে, গ্রেপ্তারকৃত খোকন টেকনাফকেন্দ্রিক আইস ও ইয়াবার ব্যবসার সাথে জড়িত একটি সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা। আর গ্রেপ্তারকৃত রফিক তার সহযোগী। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মুঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা প্রায় পাঁচ বছর ধরে ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত। অধিক মুনাফার আশায় তারা গেল কয়েক মাস ধরে আইসের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এই মাদক ব্যবসায়ীদের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের সাথে এতটাই সখ্যতা গড়ে উঠেছে যে, যদি কোনও চালান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে তাহলে সে চালানের টাকাও তাদের পরিশোধ করতে হয় না। বিদেশি যেসব মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে, তারা আমাদের দেশের চোরাকারবারিদের প্রলুব্ধ করার জন্য এরকম একটি বিজনেস স্ট্র্যাটেজি নিয়েছে।
বেশিরভাগই আসে নদীপথে
মিয়ানমার থেকে আসা এসব ইয়াবা এবং আইসের বেশিরভাগই দেশে আসতো নদীপথ ব্যবহার করে। সাধারণত সেন্টমার্টিনের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকার সমুদ্রে নৌপথে মালামাল স্থানান্তর করে চোরাকারবারিরা। এসময় তারা নিজস্ব সিগন্যাল ব্যবহার করে থাকে।
র‌্যাব বলছে, গ্রেপ্তারকৃত খোকন এর আগেও বেশ কয়েকটি আইসের চালান নিয়ে এসেছে। তার নামে একাধিক মামলাও রয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক একটি অভিজাত শ্রেণির মধ্যে আইসের ডিমান্ড রয়েছে। প্রতিবেশি দেশ থেকে আনার পর মাদকের চালান প্রথমে টেকনাফে রাখা হয়। পরে বিভিন্ন সময় নৌপথ ব্যবহার করে টেকনাফ থেকে এসব মাদক চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়। চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করে চালানটি রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে আসে। সেখান থেকে ছড়িয়ে দেওয়া রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে
সিন্ডিকেটের ২০-২৫ জনের নাম পেয়েছে র‌্যাব
গ্রেপ্তার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদে এই মাদক সিন্ডিকেটের ২০ থেকে ২৫ জনের নাম পাওয়া গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইস ব্যবসার সাথে জড়িত টেকনাফ এবং ঢাকার অনেকের নাম পেয়েছি। সে বিষয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করবো। গুলশান, বনানী, মিরপুর ও মোহাম্মদপুর কেন্দ্রিক যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, এসব জায়গায় আইস পৌঁছে দেওয়ার জন্যই চালানটি নিয়ে আসা হয়েছিল। চালান পৌঁছে দেওয়ার পরই টাকা সংগ্রহ করতো তারা। কিন্তু এর আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে তারা।
চা ও আচারের প্যাকেটে আসে আইস
মাদকের এই টাকা মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে হুন্ডির মাধ্যমে পরিশোধ করা হতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত খোকন নিয়মিত মিয়ানমারে যেতো। সেখান থেকে চা ও আচারের প্যাকেটে করে অভিনব কৌশল ব্যবহার করে আনা হতো আইস। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য এসব অভিনব কৌশল ব্যবহার করতো চোরাকারবারীরা।
র‌্যাব বলছে, গ্রেপ্তারকৃত রফিক ছদ্মবেশে অটোরিকশা চালক হিসেবে কাজ করতো। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আসা মাদক প্রথমে তার বাসায় রাখতো। পরবর্তীতে সুযোগমতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করে তারা।