ব্লগার অনন্ত বিজয় হত্যা মামলায় চারজনের মৃত্যুদন্ড

11

পূর্বদেশ ডেস্ক

সিলেটের বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে হত্যার দায়ে চারজনকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত; খালাস পেয়েছেন বিতর্কিত ব্লগার শফিউর রহমার ফারাবী। গতকাল বুধবার বেলা পৌনে ১টার দিকে সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লব এই রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন (২৫), খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ (২৭), সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ (২৫) ও কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫)।
ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ আইনজীবী (পিপি) মুমিনুর রহমান টিটু সাংবাদিকদের বলেন, রায় ঘোষণার সময় আবুল খায়ের রশীদ আহমদ এবং শফিউর রহমান ফারাবী উপস্থিত ছিলেন। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি পলাতক রয়েছেন। আইনজীবী বলেন,এ ছাড়া আদালত প্রত্যেক আসামিকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছে।
তিনি আরও বলেন, চারজনের মৃত্যুদন্ডের রায়টি একটি যুগান্তকারী রায়। এর মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
গত ১৪ মার্চ মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বুধবার রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন বিচারক।
সিলেট নগরের সুবিদবাজারে নূরানী আবাসিক এলাকার ২০১৫ সালের ১২ মে বাসার সামনে খুন হন বøগার অনন্ত বিজয় দাশ। পেশায় ব্যাংকার অনন্ত বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। পাশাপাশি তিনি স্থানীয় গণজাগরণ মঞ্চেরও সংগঠক ছিলেন। হত্যার পরদিন ২০১৫ সালের ১৩ মে তার বড় ভাই রতেœশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে।

রায়ে সন্তোষ্ট অনন্তের পরিবার
রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় অনন্ত বিজয়ের ভগ্নিপতি সমর বিজয় বলেন, অনন্তের শূন্যতা কোনোভাবেই পূরণ হওয়ার নয়। তবু আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হয়েছে। এখন রায় যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর করা হোক। এতে পরিবারে কিছুটা স্বস্তি আসবে।
সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক দেবাশীষ দেবু বলেন, রায়ে সুবিচার পেয়েছে অনন্ত বিজয়ের পরিবার। তবে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত চারজনের তিনজনই এখনও পলাতক। তাদের ধরে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেই উদ্যোগ নিতে হবে।
তবে রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। আইনজীবী আব্দুল আহাদ বলেন, রায়ে প্রকৃত সত্য চাপা পড়ে গেছে। আসামিদের বেশিরভাগই এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। উচ্চ আদালতে আপিল করব।
আলোচিত এই মামলাটি শুরুতে পুলিশের হাতে থাকলেও পরে তা অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর করা হয়। মামলা হাতে নিয়ে তদন্তে নামেন সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী। তদন্ত সাপেক্ষে অনন্ত বিজয় হত্যা মামলায় ছয়জনকে অভিযুক্ত করে ২০১৭ সালের ৯ মে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা।
খালাস পাওয়া শফিউর রহমান ফারাবী (৩০) বিজ্ঞান লেখক ও বøগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায়ে দন্ডপ্রাপ্ত আসামি।
আসামিদের মধ্যে কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহী ওরফে এ বি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে ইবনে মঈন (২৪) আদালতে অনন্ত হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তবে ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর কারাগারে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মান্নান রাহী মারা যান। জীবিত পাঁচ আসামির মধ্যে কারাগারে ছিলেন আবুল খায়ের রশীদ আহমদ ও সফিউর রহমান ফারাবী। আবুল হোসেন, ফয়সাল আহমদ ও মামুনুর রশীদ পলাতক রয়েছেন।
বহুল আলোচিত এ মামলায় ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে আদালত সাক্ষ্য নিয়েছে ২৪ জনের।