ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ঘরে রাখলে চোরের পোয়াবারো

16

ঢাকা প্রতিনিধি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের প্রতিটি ব্যাংকে টাকা আছে। দেশের ব্যাংকে টাকার কোনো সমস্যা নেই। গতকাল মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকে টাকা নেই- এটা গুজব। এ ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, একটি কথা আমি বলতে চাই, কিছু গুজব ছড়াচ্ছে। ব্যাংকে টাকা নাই, টাকা নাই বলে মানুষ টাকা তুলে ঘরে নিয়ে যাচ্ছে। আমি আগেও বলেছি, এখনো বলি, এদের চোরের সঙ্গে কোনো সমঝোতা আছে কি না, যে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ঘরে রাখলে চোরের পোয়াবারো। চোর চুরি করে খেতে পাবে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কোনো সমস্যা নাই, প্রতিটি ব্যাংকেই টাকা আছে। গুজবে কেউ কান দেবেন না। একটা শ্রেণি আছে, তারা এটা করছে। এর কারণ মিথ্যা কথায় তারা পারদর্শী। মিথ্যা কথা বলে তারা বিভ্রান্ত করতে চায়।প্রধানমন্ত্রী নেতা-কর্মীদের সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের যথাযথ জবাব দিতে বলেছেন। তিনি বলেন, ডিজিটাল দেশ হওয়ার সুযোগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের উপযুক্ত জবাব দিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অনুরোধ করছি।
তিনি বলেন, গতকাল রাতে (৫ডিসেম্বর) তিনি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণ বিষয়ক বৈঠক করেছেন এবং অর্থসচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গেও কথা বলেছেন। আজ (মঙ্গলবার) সকালে অর্থমন্ত্রীর সাথেও এব্যাপারে আলোচনা করেছেন।
বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতাই চায়নি তারা এ দেশের উন্নয়ন কখনোই দেখবে না। মানুষ সামনের দিকে আগায়, বিএনপি ক্ষমতায় এলে পেছনে যায়, ভূতের মতো। তারা মনে হয়, আমাদের দেশে ভূতের রূপ নিয়েই আসে।
তিনি বলেন, মানুষের ভোট চুরি করলে মানুষ ছেড়ে দেয় না-এটা খালেদা জিয়ার মনে থাকা উচিত। জনগণ স্বতঃফূর্তভাবে আমাদের ভোট দেয়। ভোট কারচুপির কালচার দিয়েছে জিয়াউর রহমান। হ্যাঁ-না ভোট দিয়ে জনগণের ভোট ছিনিয়ে নিয়েছে। না ব্যালট পাওয়া যায়নি। সব হ্যাঁ ভোট ছিল। সম্মেলনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কাছে লেখাপড়ার গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, লেখাপড়া শিখে এদেশের উপযুক্ত নাগরিক হতে হবে যেন বাংলাদেশের এই উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত থাকে।
তিনি বলেন, আমি চাই বাংলাদেশে আমাদের যারা নেতাকর্মী তারা সেইভাবে গড়ে উঠবে যে এই দেশের স্বাধীনতার চেতনা কেউ মুছে ফেলতে না পারে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে না পারে, খুনি, রাজাকার, আলবদর, যুদ্ধাপরাধী এরা যেন কোনদিন এই দেশে আর ক্ষমতায় আসতে না পারে, সেইভাবেই জনমত সৃষ্টি করতে হবে। যে যাই করুক না কেন লেখাপড়াটা শিখতে হবে। লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে হবে, বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ১৫ আগস্টের হত্যাকাÐের স্মৃতিচারণ করে বলেন, সেদিন আমরা হারিয়েছি আপনজনদের। বাংলাদেশ হারিয়েছিল তার উন্নয়নের সব সম্ভাবনা। খুনিদের বানিয়েছিল সারাবিশ্বের প্রতিনিধি। তাদের যোগ্যতা কী? জাতির পিতার খুনি।
শেখ হাসিনা জাতির পিতার বক্তব্য ‘আমাদের ইতিহাস ছাত্রলীগের ইতিহাস’ উদ্ধৃত করে বলেন, গণতান্ত্রিক প্রতিটি আন্দোলনে শহিদদের তালিকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীই বেশি। প্রতিটি সংগ্রামেই ছাত্রলীগের অবদান রয়েছে। আগামী দিনেও তারা বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এই আশাই করি।
এর আগে সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজারে বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোনে (বিএসইজেড) স্থাপিত জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্বোধন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সারাদেশে ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আমরা গড়ে তুলছি। সেখানে এক একটি দেশকে এক একটি অঞ্চলে জমি বরাদ্দ দেয় হচ্ছে এবং আড়াইহাজারে জাপানকে ১ হাজার একর জমি দেয়া হয়েছে, যেখানে তারা এখন বিনিয়োগ করছে। এরকম জাপান, চীন, ভারত, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
প্রধানমন্ত্রী এর আগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে ছাত্রলীগের কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে তিনি ছাত্রলীগের ওয়েবসাইট ও বিসিএল কমিউনিটি অ্যাপের উদ্বোধন করেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এবং ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ও দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি যথাক্রমে কাউন্সিলে সাংগঠনিক প্রতিবেদন ও শোক প্রস্তাব পেশ করেন। নিহত ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালের মে মাসে।