ব্যবসায়ী নিখোঁজের দেড় মাস পর মুক্তিপণ দাবি!

45

নিখোঁজ ডায়রি করার দেড়মাস পর রাউজানের মো. ইকবাল হোসেন রুবেল (২৫) নামের এক ব্যবসায়ীকে ফেরৎ পেতে ৪০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিখোঁজ যুবকের বড় ভাইয়ের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে এ মুক্তিপণ দাবি করছে একটি আইডি ব্যবহারকারী। ‘ইকবাল হোসেন রুবেল’ তাদের কাছে আছে, এর ভিত্তি কি? এমন প্রমাণ চাওয়ায় প্রমাণস্বরূপ নিখোঁজের একটি রুমে বসে থাকার ছবি এবং ভয়েসও পাঠিয়েছে মুক্তিপণ দাবি করা ওই আইডি ব্যবহারকারী ব্যক্তি।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগটি করেছেন উপজেলার উরকিরচর বাকর আলী চৌধুরী বাড়ির মো. ইছাকের স্ত্রী বৃদ্ধা মোছাম্মৎ ফাতেমা বেগম ও বোন নারগিছ আকতার। তিনি বলেন ‘আমার তিন পুত্র সন্তানের মধ্যে ২য় সন্তান ইকবাল হোসেন রুবেল পার্শ্ববর্তী উপজেলার মদুনাঘাট বাজারে পুস্প ইভেন্ট নামের দোকানে দৈনিক ভাড়ার ভিত্তিতে বসে বিকাশের লেনদেনের ব্যবসা করতো। সে শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থও।
জানা যায়, গত ২৪ জানুয়ারি দুপুর তিনটায় দোকান থেকে ওয়াজদিয়া নয়াহাটে বিকাশে টাকা পাঠানোর জন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা আনতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। এর পরদিন ২৫ জানুয়ারি হাটহাজারী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন নিখোঁজের মা ফাতেমা বেগম। এরপর দেড়মাসেরও বেশি সময় ধরে রুবেলের কোন খোঁজ পায়নি তার পরিবার।
নিখোঁজের মা ফাতেমা বেগম বলেন, গত ১৭ মার্চ থেকে আমার বড় ছেলে মো. সোহেলের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ‘সামির মাহমুদ’ নামের একটি ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার আইডি থেকে ৪০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এরপর ওই আইডি’র নাম পরিবর্তন করে ‘বিদায়’ নামের আইডি থেকেও মুক্তিপণ দাবি করে আসছে।
রুবেলের বোন নারগিছ আকতার বলেন, কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করছে কিনা এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য মো. সোহেল ওই আইডি ব্যবহারকারীকে রুবেলের ছবি পাঠাতে ও তার কন্ঠ শুনতে চাইলে ওই ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে একটি ছবি ও রুবেলের কন্ঠের একটি ভয়েজ ম্যাসেজ পাঠায়। ছবিটিতে দেখা যায় রুবেল একটি পাকা ঘরে চুল আর গোঁফে ভরা ও খালি গায়ে প্যান্ট পড়ে নির্বাক মনে বসে আছে।
মো. সোহেলের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ‘সামির’ ও ‘বিদায়’ নামের ফেসবুক ব্যবহারকারী ম্যাসেঞ্জারে এই বলে হুমকি দেয় যে, ছেলেটাকে দিয়ে মালের চালানের ব্যবসা করিয়ে ৪ গুণ বেশি টাকা পাবো। ছেলেটা আমাদের নেশার জগতে থাকতে থাকতে এখন নেশা ছাড়া কিছু বুঝেনা, টাকা নিয়ে ছেলেটাকে ফেরৎ নাও, না হয় ছেলেটা যদি চালানে কখনো ধরা পড়ে, তাহলে ফ্রিতে নিয়ে যেও।
এ ব্যাপারে মদুনাঘাট তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ইন্সপেক্টর মো. আব্দুল করিম বলেন, ‘আমরা রুবেলের নিখোঁজের বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। এখনো সঠিক কিছু পাইনি। আমাদের পাশাপাশি রাউজান থানার পুলিশও এটি তদন্ত করছে। তবে যে আইডি থেকে টাকা চাওয়া হচ্ছে, তারা কখনো একেক অংকের টাকা দাবি করছে। বিষয়টি রহস্যজনক মনে হচ্ছে।
এদিকে ছেলেকে উদ্ধারে হাটহাজারী ও রাউজান থানা পুলিশের কাছে কয়েকবার গিয়েও কোন প্রতিকার পাননি বলে জানান নিখোঁজ রুবেলের মা ফাতেমা বেগম।
রুবেলের বড় বোন নার্গিছ আকতার বলেন, প্রশাসন তৎপর না হলে আমার ভাইকে হত্যা বা তাকে দিয়ে মাদক পাচার কিংবা অপরাধ কাজ করাতে বাধ্য করতে পারে ওই চক্র।
এ ব্যাপারে রাউজান থানার ওসি কেপায়েত উল্লাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ইকবাল হোসেন রুবেল নিখোঁজ হয় হাটাহাজারীর মদুনাঘাট এলাকা থেকে। এ ব্যাপারে হাটহাজারী থানায় জিডি করা হয়েছে। বিষয়টি হাটাহাজারী থানা আওতাধীন মদুনাঘাট পুলিশ তদন্ত ফাঁড়ির ইনচার্জ আবদুল করিমের কাছে তদন্তাধীন রয়েছে।