ব্যক্তিগত সচেতনতা ছাড়া দেশের করোনা সংক্রমণ রোধ অসম্ভব

59

দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়। করোনা সংক্রমণের মেয়াদ ৩ মাস অতিবাহিত হলো। সরকার ও প্রশাসন শত চেষ্টা করেও দেশে কোভিড-১৯ রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। দীর্ঘ দিন দেশ অচল করে দিয়েও পারা গেলো না করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ। এর জন্য সরকারকে অভিযোগ করার কোন উপায় নেই। দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে সরকার শেষ চেষ্টা করেছে। কিন্তু করোনা সম্প্রসারণে দেশের সর্বস্তরের মানুষের লাগামহীন আচরণই দায়ী বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। মানুষ স্বাস্থ্য বিধির তোয়াক্কা করেনি। সামাজিক ও শারীরিক দূরত্বকে মোটেও পাত্তা দেয়নি। কিছুতেই কিছু না হওয়ায় দেশের অর্থনীতিকে রক্ষার স্বার্থে সরকার লকডাউন শিথিল করতে বাধ্য হয়েছে।
বর্তমানে দেশে ৬০ হাজারের অধিক জনগণ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৮০০ (আট শত) ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে করোনা সংক্রমিত শীর্ষ-২০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম ঢুকে পড়েছে। দীর্ঘ তিন মাস চেষ্টা করেও সরকার করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের পথে দেশের জনগণকে পরিচালিত করতে সক্ষম হয়নি। এর পেছনে অনেক গুলো কারণ থাকলেও মূল কারণ নীরব ঘাতক করোনা সাধারণ মানুষের উদাসীনতা ও সামাজিক শারীরিক দূরত্বকে সাথে নিয়ে ৬০ হাজারের অধিক মানুষের মৃত্যুর মুখোমুখি করেছে। আরো কতজন এই ভয়াবহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তা ¯্রষ্টাই জানেন।
দেশে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের করোনা পরিস্থিতির অবস্থা ভালো নয়। কক্সবাজার শহর ও কিছু এলাকায় ৬ জুন থেকে ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন জারি করেছে। গত শুক্রবার একদিনে চট্টগ্রামে ১৪০ জন করোনা আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত হয়েছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ প্রথম থেকেই করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপে শুরু হলেও এখনো তার অবস্থার তেমন পরিবর্তন ঘটেনি, এখন দেশের লকডাউন পরিস্থিতি শিথিল করা হয়েছে। যার কারণে করোনা পরিস্থিতি আরো অধিক হারে ছড়াতে পারে। দৃশ্যত তা শুরু হয়ে গেছে। তারপরও মানুষ কোথাও কোনো পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিধি ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে চাচ্ছে না। গণপরিবহন চালুর অনুমতি দেয়া হয়েছিল বিভিন্ন শর্তে। চালু হবার সাথে সাথেই গাড়ির ড্রাইভার শ্রমিক এবং যাত্রী কেউই সরকারের দেয়া শর্ত মানতে দেখা যাচ্ছে না। এ হলো দেশের বর্তমান অবস্থা। পোশাক শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে গার্মেন্টস চালু করা হয়েছে। সেখানেও দেখা যাচ্ছে কাজের সময় কিছুটা স্বাস্থ্যবিধির কথা ভাবলেও আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে শ্রমিকরা শারীরিক দূরত্বের তোয়াক্কা করছে না।
সমগ্র বিশ্বে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির সাথে আমাদের দেশের পরিস্থিতি মিলছে না। ভয়াবহভাবে আক্রান্ত দেশগুলোর অবস্থা বর্তমানে অনেক ভালো। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যতিক্রম। কেন না এদেশে সামাজিক-শারীরিক দূরত্ব সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষ বড়ই উদাসীন। মানুষ নিয়মে জীবনযাপন না করলে সরকার প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ কিছুই করতে পারবে না। দেশের মানুষকে নিজ গরজে নিজের স্বার্থে হয় ঘরে থাকতে হবে নয়তো ঘর থেকে বের হলেও কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা কাজকর্ম করতে হবে।